খুলনায় নকল ওষুধ বিক্রির অভিযোগে লাজ ফার্মাকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আইন অনুযায়ী সেই জরিমানার ২৫ শতাংশ, অর্থাৎ ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা অভিযোগকারী ভোক্তার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
বিস্তারিত
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, এ বছরের মে মাসে মো. সাইফুল্লাহ আল রাব্বি নামের এক ভোক্তা তার মায়ের জন্য একটি চুলকানি নিরাময়ের লোশন কিনেছিলেন। ওষুধটি ফিলিপাইনের তৈরি বলে দাবি করা হলেও পরে জানা যায় সেটি ঝিনাইদহের একটি ভুয়া প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন। বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হলে তিনি অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।
অভিযোগের ভিত্তিতে একাধিক শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানির পর ১৮ আগস্ট খুলনার রয়েল মোড়ে অবস্থিত লাজ ফার্মায় অভিযান চালানো হয়। অভিযানে এডোরাবেলা হেলথকেয়ার নামক একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সরবরাহকৃত নকল ও ভেজাল ওষুধ উদ্ধার করা হয়।
তদন্ত ও শাস্তির সিদ্ধান্ত
অভিযান পরিচালনা করেন খুলনা বিভাগীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। এ সময় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি মো. তানভীর আহমেদ পলাশকে ভেজাল ওষুধসহ আটক করা হয়। আইন অনুযায়ী লাজ ফার্মাকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয় এবং তা তাৎক্ষণিকভাবে আদায় করা হয়।
পরবর্তীতে ২০ আগস্ট দুপুরে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. ফিরোজ সরকার অভিযোগকারী ভোক্তা মো. সাইফুল্লাহ আল রাব্বির হাতে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা তুলে দেন। বাকি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হয়।
ভোক্তা অধিকারের ভূমিকা
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় উপ-পরিচালক মোহাম্মদ সেলিম জানান, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯-এর ৭৬(৪) ধারা অনুযায়ী অভিযোগকারীকে জরিমানার ২৫ শতাংশ প্রদান করা হয়েছে। তিনি বলেন, “ভোক্তা অধিকার রক্ষায় জনগণের সচেতনতা অপরিহার্য। অভিযোগকারীরা যদি সাহস করে এগিয়ে আসেন, তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রতারণা অনেকটাই কমে আসবে।”
প্রেক্ষাপট ও পূর্ব ইতিহাস
বাংলাদেশে ভেজাল ওষুধের বাজার একটি দীর্ঘদিনের সমস্যা। বিভিন্ন সময়ে অভিযানের মাধ্যমে নকল ওষুধ জব্দ করা হলেও এগুলোর বিপণন পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ধরনের ভেজাল ওষুধ রোগীদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে।
এর আগে বিভিন্ন জেলায় ভোক্তা অধিকারের অভিযানে একাধিক ফার্মেসিকে জরিমানা করা হলেও অভিযোগকারীদের পুরস্কৃত করার ঘটনা তুলনামূলক কম দেখা যায়। ফলে এবারের ঘটনাটি ভোক্তা অধিকার বাস্তবায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব
ভোক্তারা এখন বুঝতে পারছেন যে আইন অনুযায়ী অভিযোগ করলে কেবলমাত্র প্রতারণা বন্ধ হয় না, অভিযোগকারীরাও ন্যায্য পুরস্কার পান। এতে সাধারণ মানুষ উৎসাহিত হবে নকল বা ভেজাল পণ্য চিহ্নিত করতে এবং কর্তৃপক্ষকে জানাতে।
অন্যদিকে, ব্যবসায়ীরা আরও সতর্ক হবেন, কারণ এখন যেকোনো অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত ও জরিমানার পাশাপাশি অর্থ প্রদান প্রমাণস্বরূপ অভিযোগকারীর হাতে দেওয়া হচ্ছে। এটি ব্যবসায়িক স্বচ্ছতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
বিশেষজ্ঞ মতামত
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “নকল ওষুধ সেবনে রোগীদের শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হয়। কখনো কখনো প্রাণহানির ঝুঁকিও তৈরি হয়। তাই এ ধরনের অভিযান এবং শাস্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
অন্যদিকে ভোক্তা অধিকার কর্মীরা বলছেন, এ ধরনের পদক্ষেপ ভোক্তাদের সচেতনতার পাশাপাশি আইনের প্রতি আস্থা বাড়িয়ে তুলবে।
পরিশেষে
নকল ওষুধ বিক্রির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় খুলনার রয়েল মোড়ে অবস্থিত লাজ ফার্মাকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আইনের ধারা অনুযায়ী জরিমানার এক-চতুর্থাংশ অর্থাৎ ২৫ শতাংশ অভিযোগকারী ভোক্তার হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে। ভোক্তা অধিকারের এই পদক্ষেপ আলোচনার জন্ম দিয়েছে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থা বাড়িয়েছে।
লাজ ফার্মার বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপ বাংলাদেশের ভোক্তা অধিকারের বাস্তবায়নে একটি নজির স্থাপন করেছে। অভিযোগকারীর হাতে জরিমানার একটি অংশ প্রদান সাধারণ মানুষকে সচেতন করবে এবং ভবিষ্যতে ভেজাল ওষুধ বিক্রেতাদের জন্য একটি কঠোর সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করবে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দীর্ঘমেয়াদে এ ধরনের সমস্যার সমাধান করতে হলে ওষুধ উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থার ওপর আরও নজরদারি প্রয়োজন।
এম আর এম – ১০০০, Signalbd.com



