আঞ্চলিক

সাবেক এমপি ও জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী মমতাজ বেগম গ্রেফতার

জনপ্রিয় লোকসংগীতশিল্পী ও মানিকগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমকে গ্রেফতারের ঘটনায় দেশজুড়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে। সোমবার (১২ মে) রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে রাজধানীর ধানমন্ডির স্টার কাবাবের পেছনের একটি বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মমতাজ বেগমের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ থাকায় তাকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। যদিও তাৎক্ষণিকভাবে অভিযোগের বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি, তবে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, তার বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগগুলো ‘গুরুত্বপূর্ণ’ এবং তদন্তের স্বার্থে এখনই সব তথ্য প্রকাশ করা সম্ভব নয়।

মমতাজ বেগম বাংলাদেশের সংগীতাঙ্গনে এক সুপরিচিত নাম। তার গাওয়া লোকসংগীত দেশজুড়ে সমাদৃত। পাশাপাশি রাজনৈতিক অঙ্গনে তার সরব উপস্থিতি তাকে আরেকটি ভিন্ন পরিচিতি এনে দেয়। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে মানিকগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন এবং দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন।

তবে তার হঠাৎ গ্রেফতার নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নানা প্রশ্ন। রাজনীতিক, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষ, এমনকি সাধারণ জনগণও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। এখনও পর্যন্ত মমতাজ বেগমের পরিবার, রাজনৈতিক সহকর্মী কিংবা আইনজীবীর পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

গ্রেফতারের পেছনের কারণ কী?

ডিবি পুলিশের একটি উচ্চপদস্থ সূত্র নিশ্চিত করে জানিয়েছে, মমতাজ বেগমের বিরুদ্ধে আর্থিক জালিয়াতি, জমিজমা সংক্রান্ত প্রতারণা এবং কিছু অজ্ঞাত অভিযোগের ভিত্তিতে এই গ্রেফতার হয়েছে। যদিও এ বিষয়ে কোনো লিখিত বা প্রকাশ্য বিবৃতি এখনো দেওয়া হয়নি।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “মামলা তদন্তাধীন, তাই সবকিছু এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কয়েকটি বিষয়ে আমরা তথ্য পেয়েছি, যেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।”

রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, না কি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড?

মমতাজ বেগমের গ্রেফতার নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন উঠেছে— এটি কি কোনো রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফল? এমন প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের ভেতরকার গোষ্ঠীগত কোন্দল কিংবা আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে তৈরি হওয়া অভ্যন্তরীণ চাপের প্রেক্ষাপটে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জনপ্রিয়তার কারণে মমতাজ বেগম সবসময় আলোচনায় ছিলেন। তাই তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পদক্ষেপ নেওয়া হলে রাজনৈতিক ব্যাখ্যা আসা অস্বাভাবিক নয়। তবে বাস্তবতা জানতে তদন্তের ফলাফলের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হবে।

একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও সমাজ বিশ্লেষক বলেন, “এই ধরনের ঘটনায় আমরা অনেক সময়ই বিভ্রান্ত হই—কী প্রকৃত কারণ, আর কী উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এখনো নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাবে না।”

সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রতিক্রিয়া

সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা মমতাজ বেগমের গ্রেফতার নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অনেকে বলেছেন, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে, তবে একজন খ্যাতনামা শিল্পীর গ্রেফতার এমনভাবে হওয়া দুঃখজনক।

লোকসংগীতের আরেক কিংবদন্তি শিল্পী বলেন, “মমতাজ আপা আমাদের সংস্কৃতির জন্য বড় সম্পদ। আইন যদি তার পথেই চলে, তাহলে বিচারও অবশ্যই স্বচ্ছ হতে হবে। তবে তাকে যেন সম্মানহানিকর আচরণের শিকার না হতে হয়।”

বর্তমানে কী অবস্থায় রয়েছেন মমতাজ বেগম?

ডিবি সূত্রে জানা গেছে, মমতাজ বেগম বর্তমানে রিমান্ডে রয়েছেন এবং তাকে নিয়মিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার মোবাইল ফোন ও ব্যক্তিগত নথিপত্র জব্দ করা হয়েছে। তদন্তকারীরা এখন এসব তথ্য বিশ্লেষণ করছেন।

আইন অনুযায়ী, যেহেতু গ্রেফতার হয়েছে রাতে এবং স্পর্শকাতর অভিযোগের ভিত্তিতে, তাই তার বিরুদ্ধে মামলার বিস্তারিত আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই আদালতে উপস্থাপন করা হতে পারে। তখনই তার জামিন বা বিচারিক কার্যক্রম সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে।

গণমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তোলপাড়

মমতাজ বেগমের গ্রেফতারের সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়। কেউ তার পক্ষে কথা বলছেন, কেউ আবার তাকে অভিযুক্ত করে নানা মন্তব্য করছেন।

ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউবসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সাধারণ মানুষ তাদের মতামত দিচ্ছেন। কেউ বলছেন, “বিচার হোক, কিন্তু সম্মানের সঙ্গে হোক।” আবার কেউ বলছেন, “কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়, সে যত বড় শিল্পীই হোক।”

সংক্ষিপ্ত জীবনী: মমতাজ বেগম

মমতাজ বেগমের সংগীত জীবনের সূচনা খুব অল্প বয়সেই। পল্লীগীতির মাধ্যমে তিনি জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। একসময় গ্রাম থেকে উঠে আসা এই শিল্পী রাজধানী ঢাকার বড় মঞ্চে গান গাওয়া শুরু করেন এবং তার গান ঘরে ঘরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। পরে রাজনীতিতে যোগ দিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

তিনি দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন এবং নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষ অবদান রেখেছেন। একাধিক বার তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতেও সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।

উপসংহার

মমতাজ বেগমের গ্রেফতার নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। একজন জনপ্রিয় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং সাবেক সংসদ সদস্য হিসেবে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সমাজে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা যেহেতু বলছে যে এটি তদন্তাধীন, তাই এখনই কোনো চূড়ান্ত মন্তব্য না করে যথাযথ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করাই যুক্তিযুক্ত।

আশা করা যায়, দ্রুত সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সামনে আসবে এবং জনগণ প্রকৃত সত্য জানতে পারবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button