নারায়ণগঞ্জ বিস্ফোরণ: নিহত ৪, হাসপাতালে আরও ৪ জন

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। মা-মেয়ের পর এবার মারা গেলেন বাবা সোহাগ আলী (২৩)। এ নিয়ে একই পরিবারের তিনজনসহ মোট চারজনের মৃত্যু হলো।
মৃত্যুর ঘটনা
আজ মঙ্গলবার ভোরে রাজধানীর জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোহাগ আলী শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন এবং নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ থানার পানিয়ালপুকুর গ্রামের মাজেদুল ইসলামের ছেলে।
এর আগে, ৩ মার্চ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোহাগ আলীর দেড় বছরের মেয়ে সুমাইয়া ও প্রতিবেশী মো. হান্নান মারা যান। এরপর ৯ মার্চ মারা যান সোহাগ আলীর স্ত্রী রূপালী।
দগ্ধদের অবস্থা
বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের শরীরের পুড়ে যাওয়ার পরিমাণ ছিল ভয়াবহ:
- সোহাগ আলী: শরীরের ৪০ শতাংশ দগ্ধ
- রূপালী: শরীরের ৩৪ শতাংশ দগ্ধ
- সুমাইয়া (দেড় বছর বয়সী শিশু): শরীরের ৪৪ শতাংশ দগ্ধ
- প্রতিবেশী মো. হান্নান: শরীরের ৪৫ শতাংশ দগ্ধ
জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক শাওন বিন রহমান জানিয়েছেন, এ দুর্ঘটনায় আরও চারজন চিকিৎসাধীন আছেন, যাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
দুর্ঘটনার কারণ
৩ মার্চ সিদ্ধিরগঞ্জের ঢাকেশ্বরী শান্তিবাগ এলাকার একটি বাড়িতে গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ ঘটে। মুহূর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে দুটি কক্ষে, যেখানে দুটি পরিবার ভাড়া থাকত। এতে নারী ও শিশুসহ মোট আটজন দগ্ধ হন।
গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ: প্রতিরোধের উপায়
বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্যাস লিকেজের কারণে এমন দুর্ঘটনা রোধ করতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি:
- গ্যাসের সংযোগ নিয়মিত পরীক্ষা করুন: পাইপলাইনে লিকেজ হলে দ্রুত মেরামত করতে হবে।
- গ্যাসের গন্ধ পেলেই ব্যবস্থা নিন: রান্নাঘরে বা ঘরের কোথাও গ্যাসের গন্ধ টের পেলে সঙ্গে সঙ্গে গ্যাসের লাইন বন্ধ করুন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানান।
- ইলেকট্রিক সুইচ বা আগুন ব্যবহার এড়িয়ে চলুন: লিকেজ সন্দেহ হলে কোনো ইলেকট্রিক সুইচ অন-অফ করা উচিত নয়, কারণ এতে বিস্ফোরণের সম্ভাবনা থাকে।
- বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা রাখুন: রান্নাঘরে ভালোভাবে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকলে গ্যাস জমে থাকার ঝুঁকি কমে।
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
বিস্ফোরণের ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, তারা গ্যাস লাইনের লিকেজের বিষয়ে আগে থেকেই কিছুটা সন্দেহ করছিলেন, তবে বড় কোনো দুর্ঘটনার আশঙ্কা করেননি। এ ঘটনার পর স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে যেন প্রতিটি বাসাবাড়ির গ্যাস লাইন যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়।
সরকারের উদ্যোগ ও তদন্ত
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। পাশাপাশি, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গ্যাস লিকেজের বিষয়ে আগেই ব্যবস্থা নিলে হয়তো এত বড় প্রাণহানি এড়ানো যেত।
এ ধরনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে বাড়ির মালিক, ভাড়াটিয়া এবং গ্যাস কোম্পানিগুলোর যৌথভাবে সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। সরকারের পাশাপাশি নাগরিকদেরও সচেতন হতে হবে, যেন ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা আর না ঘটে।