আঞ্চলিক

যমুনা ও সচিবালয় এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ

Advertisement

সচিবালয় ও প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা সংলগ্ন এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)

বাংলাদেশ সচিবালয় থেকে শুরু করে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা ও আশপাশের এলাকায় সব ধরনের সভা, সমাবেশ, মিছিল, মানববন্ধন ও শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। নিরাপত্তাজনিত কারণে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে ডিএমপির এক গণবিজ্ঞপ্তিতে।

বুধবার (৫ নভেম্বর) ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।

ডিএমপির গণবিজ্ঞপ্তিতে যা বলা হয়েছে

ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সচিবালয় ও তার সংলগ্ন এলাকা, প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, কারওয়ান বাজার, মৎস্য ভবন, অফিসার্স ক্লাব এবং মিন্টো রোড সংলগ্ন এলাকায় কোনো ধরনের সভা, সমাবেশ, জমায়েত, সেমিনার, অবস্থান ধর্মঘট বা শোভাযাত্রা করা যাবে না।

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স (অর্ডিন্যান্স নং-III/৭৬) এর ২৯ ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।’

ডিএমপি জানায়, যমুনা ও সচিবালয় এলাকাকে দেশের প্রশাসনিক ও নীতিনির্ধারণী কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই এখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

কেন এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলো

সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষ থেকে সচিবালয় ও তার আশপাশে কর্মসূচি পালনের ঘোষণা আসছিল। প্রশাসনিক কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে— এমন আশঙ্কা থেকেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে ডিএমপির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন এবং সচিবালয় এলাকার নিরাপত্তা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে রয়েছে। কোনো পক্ষ যদি এখানে সমাবেশ করে, তা রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। তাই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।”

নিরাপত্তা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট ইতোমধ্যে এলাকা পরিদর্শন শুরু করেছে এবং অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

পূর্বেও এমন নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল

এর আগেও গত ৯ জুন একই ধরনের এক গণবিজ্ঞপ্তিতে সচিবালয় ও যমুনা এলাকার সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল ডিএমপি। ওই সময়ও একই ধারা অনুসারে নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক বিবেচনায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।

তবে এবারের নিষেধাজ্ঞা কিছুটা বিস্তৃত এলাকায় কার্যকর হচ্ছে বলে জানা গেছে। এবার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, অফিসার্স ক্লাব ও মিন্টো রোড সংলগ্ন এলাকাও নিষিদ্ধ তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত সাময়িক হলেও তা প্রয়োজনে দীর্ঘায়িত হতে পারে।

রাজনৈতিক কর্মসূচিতে প্রভাব পড়বে কি?

রাজনৈতিক দলগুলো সাধারণত সচিবালয় বা প্রেসক্লাবের আশপাশে মানববন্ধন, মিছিল বা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে থাকে। তবে সচিবালয় ও যমুনা এলাকার নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে তাদের বিকল্প ভেন্যু বেছে নিতে হতে পারে।

একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতা জানিয়েছেন, সরকার যদি সভা-সমাবেশের বিকল্প ব্যবস্থা না করে, তবে তারা অনুমতি নিয়ে অন্য এলাকায় কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই নিষেধাজ্ঞা রাজনৈতিক তাপমাত্রায় কিছুটা প্রভাব ফেলতে পারে। প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড সচল রাখতে এবং জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই পদক্ষেপ বাস্তবসম্মত বলেও তারা মনে করেন।

নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক ভারসাম্য

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শহীদুল ইসলাম বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন এবং সচিবালয়— দুটি জায়গাই জাতীয় প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু। এখানে অনাকাঙ্ক্ষিত ভিড় বা সমাবেশ ঘটলে তা নিরাপত্তার ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তাই এই নিষেধাজ্ঞা যৌক্তিক।”

অন্যদিকে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ও প্রশাসনিক নিরাপত্তার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

তারা বলেন, “একদিকে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, অন্যদিকে মত প্রকাশের স্বাধীনতা— উভয়কেই সম্মান জানাতে হবে। ডিএমপিকে এ বিষয়ে নমনীয় ও কার্যকর সমন্বয়ের পথে হাঁটতে হবে।”

আইনত এই নিষেধাজ্ঞার ভিত্তি

ডিএমপির বিজ্ঞপ্তিতে যেই ২৯ ধারার কথা বলা হয়েছে, সেই ধারায় ডিএমপি কমিশনারকে বিশেষ পরিস্থিতিতে যেকোনো এলাকায় জনসমাবেশ বা গণজমায়েত সীমিত করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

বিশেষ করে যখন নিরাপত্তা ঝুঁকি বা জনশৃঙ্খলা ভঙ্গের আশঙ্কা থাকে, তখন এই ধারা অনুযায়ী প্রশাসন তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের পদক্ষেপকে “প্রশাসনিক সুরক্ষার অংশ” হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা সাধারণত অস্থায়ী হলেও প্রয়োজনে বাড়ানো যেতে পারে।

ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি ও সম্ভাব্য দিকনির্দেশনা

ডিএমপি জানিয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল থাকলে পরবর্তী সময়ে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হতে পারে। তবে আপাতত সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে।

জনসাধারণকে অনুরোধ করা হয়েছে— তারা যেন এসব এলাকায় অপ্রয়োজনীয় ভিড় বা কর্মসূচি থেকে বিরত থাকেন এবং প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে চলেন।

বিশ্লেষকদের মতে, নিষেধাজ্ঞা সাময়িক হলেও এর প্রভাব প্রশাসনিক কার্যক্রম ও রাজনৈতিক মাঠে অনুভূত হবে। তবে এই সিদ্ধান্ত শেষ পর্যন্ত জননিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার স্বার্থেই নেওয়া হয়েছে।

যমুনা ও সচিবালয় এলাকাকে দেশের প্রশাসনিক হৃদয় বলা হয়। তাই সেখানে নিরাপত্তা জোরদার রাখতে ডিএমপির এই পদক্ষেপকে অনেকেই সময়োপযোগী বলছেন। তবে নিষেধাজ্ঞা কতদিন বলবৎ থাকবে এবং এর বাস্তব প্রভাব কী হবে— তা সময়ই বলে দেবে।

এম আর এম – ২০৯৭,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button