আঞ্চলিক

কারাগারে খালাতো ভাইকে গাঁজা দিতে গিয়ে আটক

Advertisement

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি খালাতো ভাইকে গাঁজা দেওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে নয়ন চন্দ্র মণ্ডল (২৪) নামে এক যুবককে আটক করেছে কারারক্ষীরা। শনিবার (২ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে তাঁকে পুলিশে হস্তান্তর করা হয়।

ঘটনার বিস্তারিত

কারা সূত্রে জানা গেছে, নয়ন চন্দ্র মণ্ডল দুপুরে তাঁর খালাতো ভাই সিনহাত মণ্ডলকে দেখতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যান। সিনহাত মণ্ডল কয়েক দিন আগে একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে ওই কারাগারে বন্দি আছেন। নয়ন ভিজিটরের কক্ষে ঢোকার আগে কারাগারের প্রধান ফটকের সামনে নিয়মিত তল্লাশিচৌকিতে আটক হন।

তল্লাশির সময় কারারক্ষীদের কাছে নয়নের আচরণ সন্দেহজনক মনে হলে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রশ্নোত্তরে অসংলগ্ন কথা বলায় দেহ তল্লাশি করা হলে তাঁর প্যান্টের পেছনের পকেট থেকে দুটি ছোট প্যাকেটে গাঁজা উদ্ধার হয়। এরপরই তাঁকে আটক করা হয়।

পুলিশ ও কারা কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ

ঘটনার পর নয়নকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আকতার হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, “ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আমরা খবর পাই যে গাঁজাসহ এক যুবককে আটক করা হয়েছে। পরে তাঁকে থানায় নিয়ে আসা হয়। এ ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে নিয়মিত মামলা করা হবে।”

কারাগারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দর্শনার্থীদের জন্য প্রতিদিনই তল্লাশি প্রক্রিয়া চালু থাকে। কেউ কোনো অবৈধ দ্রব্য নিয়ে কারাগারের ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য এই ব্যবস্থা কঠোরভাবে মানা হয়।

আটক যুবকের পরিচয়

আটক নয়ন চন্দ্র মণ্ডলের বাড়ি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার কোন্ডা ইউনিয়নের দোলেশ্বর এলাকায়। স্থানীয়দের মতে, নয়ন পেশায় বেকার এবং সম্প্রতি তাঁর পরিবারের সঙ্গে নানা সমস্যা চলছিল। এর আগেও সে স্থানীয়ভাবে খারাপ সঙ্গের জন্য পরিবার ও প্রতিবেশীদের সমালোচনার মুখে পড়েছিল।

পেছনের কাহিনি: কেন গাঁজা নিতে চেয়েছিল?

পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে, নয়ন গাঁজা নিয়ে কারাগারে প্রবেশ করে তা বন্দি খালাতো ভাই সিনহাতের কাছে পৌঁছে দিতে চেয়েছিল। পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নয়ন হয়তো ভাইকে সাহায্য করতে গিয়ে এই ভুল সিদ্ধান্ত নেয়। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

কারাগারের নিরাপত্তা ও সতর্কতা

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়মিত দর্শনার্থী প্রবেশের আগে তল্লাশি চালানো হয়। বিশেষ করে মাদক, মোবাইল ফোন ও অবৈধ কোনো বস্তু যাতে বন্দিদের হাতে না যায়, সে জন্য নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। এ ঘটনায় কারা কর্তৃপক্ষ আবারও সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

কারা কর্মকর্তারা বলছেন, অনেক সময় দর্শনার্থীরা বিভিন্নভাবে বন্দিদের কাছে নিষিদ্ধ দ্রব্য পৌঁছানোর চেষ্টা করেন। তবে এই ধরনের ঘটনা ঘটলেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

মাদক নিয়ন্ত্রণে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবস্থান

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বারবার বলছে, মাদক সংক্রান্ত যেকোনো অপরাধে শূন্য সহনশীলতার নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় নিয়মিত অভিযানের মাধ্যমে মাদক সেবন ও পাচার রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনার মাধ্যমে বোঝা যায়, সমাজে মাদকের প্রভাব এখনও উদ্বেগজনক।

সামাজিক প্রতিক্রিয়া

এ ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়ভাবে সমালোচনার ঝড় ওঠে। অনেকেই মনে করছেন, গাঁজার মতো মাদকদ্রব্য কারাগারে পৌঁছালে তা ভেতরের পরিবেশকে আরও খারাপ করে দেবে। সচেতন মহল মনে করে, পরিবার ও সমাজের তরুণদের মাদকের ভয়াবহ প্রভাব থেকে রক্ষা করতে হলে পারিবারিক নজরদারি ও সচেতনতা বাড়াতে হবে।

ভবিষ্যতে করণীয়

পুলিশ জানিয়েছে, নয়ন চন্দ্র মণ্ডলের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করে আদালতে পাঠানো হবে। মামলার তদন্ত শেষে জানা যাবে, এ ঘটনার পেছনে আর কেউ জড়িত আছে কি না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের ঘটনায় কঠোর শাস্তির পাশাপাশি সমাজে মাদকবিরোধী প্রচারণা বাড়ানো জরুরি। পরিবারগুলোরও দায়িত্ব নিতে হবে যেন তাদের সন্তানরা কোনো অপরাধে জড়িত না হয়।

সারসংক্ষেপ

 কারাগারের মতো কঠোর নিরাপত্তার জায়গায় গাঁজা প্রবেশের চেষ্টা বাংলাদেশের মাদক সমস্যা কতটা ভয়াবহ আকার নিয়েছে তা আবারও প্রমাণ করল। এবার নয়নের ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হলেও, প্রশ্ন থেকে যায় — আমাদের তরুণদের নিরাপদ ও সুস্থ রাখতে সমাজ আর কতটা সচেতন?

এম আর এম – ০৬৪৭, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button