গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও দুই জনের প্রাণহানি হয়েছে। একদিনেই ৩৩০ জন নতুন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছরে মোট আক্রান্ত ১৫ হাজার ছাড়িয়েছে, মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে ৫৮-এ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রকাশিত হালনাগাদ তথ্য থেকে এই চিত্র মিলেছে।
ঘটনা ও ঘোষণার বিস্তারিত
সোমবার (১৪ জুলাই) সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার ডেঙ্গু পরিস্থিতি তুলে ধরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।
সেখানে জানানো হয়, নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকা মহানগরীতেই রয়েছে বড় অংশ। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় ২৭ জন এবং দক্ষিণে ৪৪ জন ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া চট্টগ্রামে ৫৪ জন, বরিশালে ৮৬ জন, খুলনায় ২৭ জন, রাজশাহীতে ৩৮ জন, ময়মনসিংহে ৩ জন এবং রংপুর বিভাগে ৩ জন নতুন করে ভর্তি হয়েছেন।
দুইজনের মৃত্যু ঘটেছে যথাক্রমে চট্টগ্রাম বিভাগ ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায়। মৃত্যুর হার বাড়ায় নতুন করে উদ্বেগ ছড়িয়েছে স্বাস্থ্যখাতে।
গত বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত ছিল। তবে চলতি বছর বর্ষার শুরু থেকেই এর সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে থাকে। জুন মাসের মাঝামাঝি থেকে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও জুলাইয়ের শুরুতে তা হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে। বিশেষ করে রাজধানীসহ বড় শহরগুলোতে এডিস মশার ঘনত্ব অনেক বেশি দেখা গেছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এডিস মশা মূলত পরিষ্কার পানিতে জন্ম নেয়। শহরের আবাসিক এলাকায় পানি জমে থাকলে, ফ্ল্যাটের বারান্দা, ফুলের টব, ড্রেন — এসবই হয়ে ওঠে মশার প্রজননের উপযুক্ত স্থান।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতালগুলোর উপর বাড়ছে চাপ। সরকারিভাবে বিশেষ ওয়ার্ড ও শয্যা বরাদ্দ দেওয়া হলেও অনেক হাসপাতালেই রোগী সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরাও। অনেক চিকিৎসক বলছেন, এখনই যদি শহরের মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদার না করা হয়, তাহলে আগস্ট মাসে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
একজন চিকিৎসক বলেন,
“জুলাই-আগস্ট হলো ডেঙ্গুর পিক সিজন। এখনই যদি কার্যকর মশা নিয়ন্ত্রণ না হয়, তাহলে হাসপাতালে শয্যার সংকট দেখা দিতে পারে।”
পরিসংখ্যান ও তুলনা
২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মোট ১৫,২১০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা ৫৮ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৩০ জন। এর বিপরীতে একই সময়ে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৮৫ জন, ফলে হাসপাতালের ভর্তির তুলনায় ছাড়পত্র পাওয়া রোগীর সংখ্যা কিছুটা বেশি।
বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত বরিশাল বিভাগে – যেখানে ৮৬ জন একদিনেই ভর্তি হয়েছেন।
বিশেষজ্ঞ মতামত
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মশা নির্মূল অভিযান আরও কার্যকর না হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। শুধু ওষুধ ছিটানোই যথেষ্ট নয়, বাড়ি ও আশেপাশের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা অত্যন্ত জরুরি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক ডা. নাসির উদ্দিন বলেন —
“এই মুহূর্তে জরুরি ভিত্তিতে প্রতিটি ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ে সমন্বিত মশা নিয়ন্ত্রণ অভিযান চালানো উচিত। তা না হলে ডেঙ্গু সংক্রমণ ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়বে।”
সারসংক্ষেপ
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দেশে আরও দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৩৩০ জন আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মোট ১৫ হাজার ২১০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন এবং মৃত্যু হয়েছে ৫৮ জনের।
ডেঙ্গুর বর্তমান পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। প্রতিদিনই নতুন রোগী শনাক্ত হচ্ছে, এবং মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। তবে যদি এখনই সক্রিয়ভাবে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় — যেমন বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার রাখা, জমে থাকা পানি পরিষ্কার করা ও সময়মতো চিকিৎসা নেওয়া — তাহলে পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
তবে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে: জনসচেতনতা ও কার্যকর মশা নিয়ন্ত্রণ অভিযান মিলিয়ে এই পরিস্থিতি আমরা কতটা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারব?
এম আর এম – ০৩৩৩, Signalbd.com
				
					


