কুষ্টিয়ায় লাগামহীন সবজির দাম, বিপাকে সাধারণ মানুষ
কুষ্টিয়ার স্থানীয় কাঁচাবাজারে চলতি সপ্তাহে সবজির দাম হঠাৎ করে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিটি সবজির কেজি মূল্য বেড়েছে ২০ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত। এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি জনজীবনে সরাসরি প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে নিম্নআয়ের মানুষরা বাজারে গিয়ে হতাশা নিয়ে ফিরছেন।
হঠাৎ কেন বাড়ছে সবজির দাম?
সবজির দাম বাড়ার পেছনে একাধিক কারণ কাজ করছে। ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, টানা বর্ষণের কারণে মাঠে উৎপাদন কম হয়েছে। ফলে বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। আবার অনেক ক্রেতা বলছেন, প্রকৃত সংকট থাকলেও অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে অতিরিক্ত মুনাফা করছেন।
ভোক্তাদের অভিযোগ—বাজারে কোনো ধরনের মনিটরিং নেই। এজন্য ব্যবসায়ীরা নিজেদের মতো করে দাম বাড়াচ্ছেন।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে সবজির দামে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি
কুষ্টিয়া পৌর বাজার ঘুরে দেখা গেছে—
- বেগুন: ৫০ টাকা থেকে বেড়ে ১২০ টাকা কেজি
 - কাঁচা মরিচ: ১৪০ টাকা থেকে বেড়ে ২০০–২২০ টাকা কেজি
 - পটল: ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৬০ টাকা কেজি
 - ঝিঙা: ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৬০ টাকা কেজি
 - লাউ: ৩০ টাকা থেকে বেড়ে ৫০ টাকা পিস
 - ঢেঁড়স: ৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৬০ টাকা কেজি
 - চালকুমড়া: ২০ টাকা থেকে বেড়ে ৪০ টাকা
 - মিষ্টিকুমড়া, পেঁপে ও কাঁচা কলা—সবগুলোর দামও বেড়েছে গড়ে ২০–৩০ টাকা
 
এছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় আদা, রসুন ও পেঁয়াজের দামও ক্রমাগত ঊর্ধ্বমুখী। ফলে সাধারণ মানুষের সাপ্তাহিক বাজার ব্যয় বেড়ে গেছে প্রায় দ্বিগুণ।
ক্রেতাদের ক্ষোভ
বাজারে আসা একাধিক ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগের মতো আর ৫০০–৬০০ টাকায় সপ্তাহের বাজার করা সম্ভব হচ্ছে না। এখন অন্তত ১২০০–১৫০০ টাকা না হলে সামান্য সবজি-ডাল-ভাতের ব্যবস্থা করাই কষ্টসাধ্য।
একজন গৃহিণী বলেন—
“শুধু বেগুন আর মরিচ কিনতেই ৩০০ টাকা খরচ হয়ে যায়। তাহলে কীভাবে সংসার চালাবো?”
আরেকজন দিনমজুর জানান—
“আমরা প্রতিদিনের আয়ের টাকা দিয়েই বাজার করি। সবকিছুর দাম যদি দ্বিগুণ হয়, তাহলে খাওয়ার ব্যবস্থা করবো কীভাবে?”
ব্যবসায়ীদের ব্যাখ্যা
অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাদের হাতে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। পাইকারি বাজার থেকেই সবজি বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। সরবরাহ কম থাকায় দামে স্বাভাবিকভাবেই প্রভাব পড়ছে।
একজন খুচরা বিক্রেতা জানান—
“আমরা নিজেরা লাভ করি সীমিত। তবে পাইকারি বাজারেই দাম বেশি থাকায় খুচরায় কম দামে বিক্রি করা সম্ভব হয় না।”
বিশেষজ্ঞ ও প্রশাসনের বক্তব্য
কুষ্টিয়া কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সিনিয়র কর্মকর্তা সুজাত হোসেন খান বলেন, টানা বর্ষণে মাঠে সবজি উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। ফলে সরবরাহ কমে গেছে। তবে কেউ যদি অস্বাভাবিকভাবে দাম বাড়ায়, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিগগিরই বাজার নিয়ন্ত্রণে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।
তবে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। এতে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ আরও বেড়েছে।
বাংলাদেশে সবজির দামের সামগ্রিক চিত্র
শুধু কুষ্টিয়া নয়, দেশের প্রায় সব জেলায় সবজির দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ঢাকার শ্যামবাজার, কারওয়ানবাজার, চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজার, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশালের কাঁচাবাজারেও একই চিত্র লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের কৃষি খাত মৌসুমভিত্তিক। বর্ষাকাল ও অতিবৃষ্টিতে সবজি উৎপাদনে সরাসরি প্রভাব পড়ে। এর সঙ্গে মজুতদার ও মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব থাকায় ভোক্তারা সবসময় ক্ষতিগ্রস্ত হন।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সামাজিক প্রভাব
সবজির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে গেলে সমাজের দরিদ্র ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণি সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ে।
- শিশুদের পুষ্টিহীনতা বাড়ে, কারণ প্রোটিনের পাশাপাশি সবজি ও ফলমূলের সরবরাহ কমে যায়।
 - নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো অল্প খাবারে দিন কাটাতে বাধ্য হয়।
 - সামাজিক ক্ষোভ ও হতাশা বৃদ্ধি পায়।
 
সমাধানের পথ কী?
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে কয়েকটি পদক্ষেপ জরুরি—
- সরকারি মনিটরিং জোরদার করা
 - কৃষকদের সহায়তা বৃদ্ধি—যাতে তারা প্রাকৃতিক দুর্যোগেও দ্রুত পুনরায় চাষাবাদ শুরু করতে পারেন
 - সুষ্ঠু সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা
 - অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া
 - কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার বৃদ্ধি—যাতে আবহাওয়ার ঝুঁকি কমানো যায়
 
কুষ্টিয়াসহ সারাদেশে সবজির লাগামহীন দাম এখন জনজীবনের বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃষি উৎপাদন কমে যাওয়া, সরবরাহ সংকট ও বাজারে কার্যকর মনিটরিং না থাকার কারণে সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে।
যদি দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, তবে শুধু সাধারণ ক্রেতাই নয়—পুষ্টিহীনতা, স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং অর্থনৈতিক চাপের কারণে সামগ্রিক সামাজিক স্থিতিশীলতাও হুমকির মুখে পড়তে পারে।
MAH – 12340 , Signalbd.com
				
					


