অর্থনীতি

৪ মাসে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ১০ বিলিয়ন ডলার

Advertisement

চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত প্রবাসী কর্মীরা দেশে পাঠিয়েছেন ১০ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এটি ১৩.৫৫ শতাংশ বেশি।

প্রবাসীদের রেমিট্যান্স বৃদ্ধি: পরিসংখ্যান

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে দেশে এসেছে মোট ১,০১৪ কোটি ৮৮ লাখ ডলার বা ১০.১৪ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের একই সময়ে এই পরিমাণ ছিল ৮৯৩ কোটি ৭১ লাখ ডলার। ফলে বছর ভিত্তিক বৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ১৩.৫৫ শতাংশ।

অক্টোবর মাসে দেশে এসেছে ২৫৬ কোটি ৩৪ লাখ ৮০ হাজার ডলার। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৪৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত ব্যাংকের মাধ্যমে ২৪ কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার ডলার, বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে ১৮৩ কোটি ৮৬ লাখ ৯০ হাজার ডলার এবং বিদেশি খাতের ব্যাংকের মাধ্যমে ৬৬ লাখ ৭০ হাজার ডলার।

গত জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসেও যথাক্রমে ২৪৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭০ হাজার, ২৪২ কোটি ১৮ লাখ ৯০ হাজার এবং ২৬৮ কোটি ৫৫ লাখ ৬০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।

রেমিট্যান্স বৃদ্ধির কারণ

বিশ্লেষকদের মতে, কয়েকটি কারণ প্রবাসী আয় বৃদ্ধি এবং রেমিট্যান্স প্রবাহে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে:

  • সরকারের কঠোর পদক্ষেপে হুন্ডি বা অনানুষ্ঠানিক পথে অর্থ পাঠানোর প্রবণতা কমেছে।
  • বৈদেশিক আয়ের বড় অংশ ব্যাংকিং চ্যানেলে আসছে।
  • বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং ডলারের স্থিতিশীল দর প্রবাসীদের জন্য সুবিধাজনক।
  • রপ্তানি আয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহকে সমর্থন করছে।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং অর্থনীতি

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে বিপিএম৬ অনুযায়ী ২৭.৫৪ বিলিয়ন ডলার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব পদ্ধতিতে ৩২.১৪ বিলিয়ন ডলার। এটি গত ৩১ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ রিজার্ভ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির সঙ্গে ডলারের স্থিতিশীল দর, আমদানিতে ডলারের সঙ্কট না থাকা এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক।

প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ার ফলে বাংলাদেশে অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্র প্রভাবিত হচ্ছে:

  • বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি কমেছে, যা আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
  • ঘরের বাজারে ডলার সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যবসা ও বিনিয়োগের পরিবেশ স্থিতিশীল।
  • প্রবাসী পরিবারের আয় বৃদ্ধি পেয়ে ভোক্তা বাজারে ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে।

তবে কিছু বিশ্লেষক সতর্ক করে বলছেন, রেমিট্যান্সের উপর নির্ভরতা খুব বেশি হলে অর্থনীতিতে বৈচিত্রের অভাব দেখা দিতে পারে।

বিশেষজ্ঞ ও সরকারি মন্তব্য

এক বিশেষ অর্থনীতিবিদ মন্তব্য করেছেন, “রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার অবস্থান শক্তিশালী হচ্ছে। তবে আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত উৎপাদন ও রপ্তানি বৃদ্ধি, যাতে অর্থনীতি দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল থাকে।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, “চলতি অর্থবছরের রেমিট্যান্স প্রবাহ উৎসাহব্যঞ্জক। এটি প্রমাণ করে প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।”

চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে প্রবাসীদের পাঠানো ১০ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিকে সহায়তা করছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি, রপ্তানিতে সামান্য উন্নতি এবং ডলারের স্থিতিশীল দর দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তবে দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে বৈচিত্র্যময় নীতি ও উৎপাদন বৃদ্ধির গুরুত্ব অপরিসীম।

এম আর এম – ২০৫৬,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button