আঞ্চলিক

মেরুন রঙের পোশাক পরে হামলা চালানো সেই ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত

Advertisement

রাজধানীর কাকরাইলে শুক্রবার গণঅধিকার পরিষদ ও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় মেরুন রঙের পোশাক পরে হামলা চালানো ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। প্রাথমিকভাবে গুঞ্জন ছিল, ওই ব্যক্তি গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সদস্য, কিন্তু পরে জানা গেছে তিনি ডিবির কেউ নন।

ডিএমপি জানিয়েছে, মেরুন পোশাক পরা হামলাকারীর নাম কনস্টেবল মিজানুর রহমান। তিনি পল্টন থানার ওসির গাড়িচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। হামলায় গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের ওপর আঘাত করা হয়নি। বরং অন্য নেতা সম্রাটের ওপর হামলা করা হয়।

হামলার বিস্তারিত

মেট্রোপলিটন পুলিশের সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবারের সংঘর্ষের সময় মেরুন রঙের টি-শার্ট পরা মিজানুর হামলার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। এই ঘটনায় প্রথমে বিভ্রান্তিকর গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে, যে তিনি ডিবির সদস্য। ডিবি প্রধান মো. শফিকুল ইসলাম পরবর্তীতে স্পষ্ট করেন, মিজানুর ডিবির সদস্য নন।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সংঘর্ষের সময় পরিস্থিতি উত্তপ্ত ছিল এবং কয়েক মিনিটের মধ্যে কয়েকজন আহত হন। মিজানুরের সঙ্গে হামলায় অন্যরা সহযোগিতা করেছিল কিনা, তা তদন্তের বিষয়।

পুলিশি পদক্ষেপ

ডিএমপি কমিশনার জানিয়েছেন, হামলার ঘটনায় মিজানুরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার কর্মকাণ্ডের উদ্দেশ্য ও সংঘর্ষের প্রকৃততা যাচাই করা হচ্ছে।

পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আরও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

ঢাকা শহরে রাজনৈতিক ও সামাজিক সংঘর্ষের ক্ষেত্রে অতীতে বিভিন্ন সময় এমন ঘটনার নজির দেখা গেছে। বিশেষ করে গণঅধিকার পরিষদ ও জাতীয় পার্টির কর্মসূচি চলাকালে উত্তেজনা তৈরি হওয়ার খবর এসেছে।

গণঅধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, হামলার সময় উপস্থিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথেষ্ট কার্যকর ছিল না। এই ঘটনায় ভবিষ্যতে কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মসূচিতে নিরাপত্তা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা আরও প্রকট হয়ে উঠেছে।

সামাজিক প্রতিক্রিয়া

হামলার ঘটনায় গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান এক বিবৃতিতে বলেন, “মেরুন রঙের টি-শার্ট পরা ওই ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়েছে। তিনি আমাদের নেতা সম্রাটের ওপর হামলা চালিয়েছেন। সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে প্রশাসনকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।”

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এই ধরনের ঘটনা রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি করে এবং সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারা আশা করছেন, প্রশাসন নিরপেক্ষভাবে তদন্ত চালাবে।

পরিসংখ্যান ও তুলনা

ঢাকা শহরে গত দুই বছরে রাজনৈতিক সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনায় প্রায় ৫০টির বেশি ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল ও তাদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের কারণে। সম্প্রতি রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হলেও, এই ধরনের ঘটনা থামানো যায়নি।

বিশেষজ্ঞ মতামত

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, সংঘর্ষের সময় পুলিশের উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও কিছু ব্যক্তি দায়িত্বহীন আচরণ করতে পারেন। সামাজিক কর্মীরা বলছেন, “প্রশাসনের উচিত সুষ্ঠু তদন্ত এবং হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া, যাতে ভবিষ্যতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে।”

আইন বিশেষজ্ঞরা বলেন, “একটি নির্দিষ্ট ঘটনায় পুলিশের কনস্টেবল হিসেবে যুক্ত থাকার কারণে যদি কেউ অন্যের ওপর হামলা করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্রভাবে মামলা হতে হবে এবং শাস্তির বিধান প্রয়োগ করা উচিত।”

কাকরাইলে ঘটিত এই হামলা রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং সামাজিক নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। প্রশাসন, রাজনৈতিক দল এবং সাধারণ জনগণকে একযোগে কাজ করতে হবে, যাতে এই ধরনের সংঘর্ষ ও হামলা প্রতিরোধ করা যায়। এখন প্রশ্ন থেকে যায়, ভবিষ্যতে রাজনৈতিক কর্মসূচি এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কতটা কার্যকর পরিবর্তন আনা সম্ভব?

এম আর এম – ১১০০, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button