বিশ্ব

গাজা নিয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনা ঘিরে বিভক্তি, দলের মধ্যেই মতপার্থক্য

ফিলিস্তিনের গাজা থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের সরিয়ে দেওয়া এবং সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্য তার নিজ দল রিপাবলিকান পার্টির মধ্যেই মতপার্থক্যের সৃষ্টি করেছে। ট্রাম্পের কিছু সহকর্মী তার প্রস্তাবকে ‘সাহসী ও বুদ্ধিদীপ্ত’ বলে অভিহিত করলেও, অন্যরা এটিকে যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহ্যবাহী পররাষ্ট্র নীতির পরিপন্থী হিসেবে দেখছেন।

ট্রাম্পের বক্তব্য এবং নিন্দার ঝড়

গত মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গাজার ফিলিস্তিনিদের অন্যত্র স্থানান্তর করে সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের মালিকানাধীন সমুদ্র উপকূলীয় অবকাশযাপন কেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাব দেন। এই ঘোষণার পরপরই বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এমনকি ট্রাম্পের নিজের দলেও এই প্রস্তাব নিয়ে বিভক্তি দেখা দেয়।

দলীয় বিভক্তি: সমর্থক ও বিরোধী মত

ট্রাম্পের কিছু রিপাবলিকান সহকর্মী এই পরিকল্পনাকে প্রশংসাযোগ্য বলে মনে করছেন। প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার মাইক জনসন বলেন, “এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় এটি একটি সাহসী ও কৌশলগত পদক্ষেপ।”

তবে, অনেক রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাই এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন। রিপাবলিকান সিনেটর র‌্যান্ড পল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (পূর্বে টুইটার) বলেন, “আমরা আমেরিকা ফার্স্টের জন্য ভোট দিয়েছিলাম। আমাদের সম্পদ ও সেনাদের জীবন দিয়ে অন্য দেশে দখলদারত্ব প্রতিষ্ঠা করা আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না।”

রিপাবলিকান সিনেটর জেরি মোরান বলেন, “দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের ধারণাকে সহজেই বাতিল করা যাবে না। এটি এমন একটি বিষয়, যা একক সিদ্ধান্তে নেওয়া সম্ভব নয়।”

ডেমোক্র্যাটদের কঠোর প্রতিক্রিয়া

ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পের প্রস্তাবকে কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। সিনেটর ক্রিস ভন হোলেন বলেন, “এটি মূলত জাতিগত নিধনের একটি রূপ। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও ট্রাম্পের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন। জাতিসংঘের এক বৈঠকে তিনি বলেন, “সমাধান খুঁজতে গিয়ে সমস্যা আরও খারাপ করা যাবে না। দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান নিশ্চিত করা জরুরি।”

ট্রাম্প প্রশাসনের ব্যাখ্যা

বিশ্বব্যাপী সমালোচনার মুখে ট্রাম্প প্রশাসন তাদের অবস্থান কিছুটা নরম করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, “গাজায় ধ্বংসস্তূপ অপসারণ, অবিস্ফোরিত বোমা সরানো এবং পুনর্গঠনের কাজ করতে কিছু সময়ের জন্য স্থানীয় বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।”

গুয়াতেমালায় এক সংবাদ সম্মেলনে রুবিও বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অত্যন্ত উদারভাবে প্রস্তাব দিয়েছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র গাজার পুনর্গঠনে সহায়তা করতে পারে। এতে কোনো স্থায়ী সেনা মোতায়েনের প্রয়োজন পড়বে না।”

ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া ও পরবর্তী পদক্ষেপ

ট্রাম্পের বক্তব্যের পর ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ গাজার জনগণকে “স্বেচ্ছায় সরে যাওয়ার” পরিকল্পনা বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাহসী পরিকল্পনাকে আমি স্বাগত জানাই। গাজার বাসিন্দাদের অভিবাসনের স্বাধীনতা থাকা উচিত।”

ট্রাম্পের পুনর্ব্যক্ত ঘোষণা

বিশ্বজুড়ে সমালোচনা সত্ত্বেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গাজার ওপর মার্কিন নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরিকল্পনা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লেখেন, “যুদ্ধ শেষে ইসরায়েল গাজার নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করবে।” তিনি আরও বলেন, “এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সেনা মোতায়েনের প্রয়োজন হবে না।”

বিশ্ব প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা

ট্রাম্পের এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।

ফিলিস্তিনের ভবিষ্যৎ কী হবে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপের মুখে ট্রাম্প প্রশাসন কীভাবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে, তা নিয়ে এখনো বড় অনিশ্চয়তা রয়েছে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button