রাজনীতি

জামায়াত নেতার ওপর হামলার অভিযোগ বিএনপি কর্মীদের বিরুদ্ধে

Advertisement

জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’র সহকারী সেক্রেটারি রবিউল ইসলামের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিএনপি কর্মীদের বিরুদ্ধে। ঘটনা ঘটেছে শুক্রবার (৭ নভেম্বর) মাগরিব নামাজের পর ইউনিয়নের একটি মসজিদের বারান্দায়।

স্থানীয়রা এবং দলীয় সূত্র জানায়, রবিউল ইসলাম মসজিদে স্থানীয় কর্মীদের সঙ্গে আলাপ করছিলেন। হঠাৎ সেখানে বিএনপির দুই কর্মী উপস্থিত হন এবং ‘অনুমতি ছাড়া রাজনৈতিক আলোচনা ও প্রোগ্রাম’ করার অভিযোগ তুলে তাকে নিয়ে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। কিছুক্ষণের মধ্যে তারা আরও কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে ফিরে এসে লাঠিসোটা ও ঘাতক অস্ত্র দিয়ে হামলা চালান। হামলায় রবিউল ইসলাম গুরুতর আহত হন; তার হাত-পা ভাঙার মতো খবরও পাওয়া গেছে।

গুরুতর আহত রবিউল ইসলাম হাসপাতালে ভর্তি

হামলার পর গুরুতর আহত অবস্থায় রবিউল ইসলামকে প্রথমে মেলান্দহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার শারীরিক অবস্থার সঙ্গে সঙ্গে মনোবলও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জামায়াতের প্রতিবাদ ও মিছিল

ঘটনার প্রতিবাদে রাতেই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মেলান্দহ উপজেলা শাখার উদ্যোগে একটি প্রতিবাদ মিছিল বের করা হয়। মিছিলে এলাকার ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তারা হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অভিযোগ করেছেন, এটি পরিকল্পিত রাজনৈতিক সহিংসতা।

জামায়াতের উপজেলা আমির ইদ্রিস আলী বলেন, “বিএনপির কর্মী সোহেল রানা (৪৫), রুবেল (৪২), রেনু মিয়াসহ কয়েকজন পরিকল্পিতভাবে এই হামলা করেছে। আমরা ইতোমধ্যে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি এবং আশা করছি আইন অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

পুলিশের অবস্থান

মেলান্দহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরিফুল ইসলাম জানান, “রাত ১টার দিকে জামায়াতের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। বিষয়টি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্তের ফলাফলের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

বিএনপির বক্তব্য

অন্যদিকে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে মেলান্দহ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল কবির মঞ্জু বলেন, “ঘটনাটি আমাদের দলের কর্মীদের সঙ্গে নয়, এটি মসজিদের সাধারণ মুসল্লিদের সঙ্গে হয়েছে। পরে আমাদের কয়েকজন সেখানে উপস্থিত হওয়ায় তাদের নাম অভিযোগে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আমরা স্পষ্টভাবে বলছি, আমাদের দলের পক্ষ থেকে কেউ কোনো ধরনের সহিংসতা করেনি।”

স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া

স্থানীয়রা জানান, মাহমুদপুর ইউনিয়নে রাজনৈতিক সহিংসতা নতুন ঘটনা নয়। তবে সম্প্রতি রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ায় এ ধরনের ঘটনা বেড়ে গেছে। এলাকাবাসী আশা করছেন, প্রশাসন দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্ত করবে এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী, শিক্ষক ও সাধারণ মানুষ জানান, “এ ধরনের ঘটনা স্থানীয় রাজনৈতিক সহমর্মিতা ও শান্তি নষ্ট করছে। সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত এবং আশা রাখছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবে।”

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

মেলান্দহ উপজেলা বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে পূর্বেও কয়েকবার বিরোধের ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচনী মৌসুমে এবং স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মসূচিতে এ ধরনের উত্তেজনা সাধারণ হয়ে ওঠে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, “স্থানীয় রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব কখনও কখনও ব্যক্তি বা দলের ওপর নির্দিষ্ট আক্রমণ পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছায়। এটি স্থানীয় জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি ও আতঙ্ক সৃষ্টি করে।”

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার দৃষ্টিকোণ

মেলান্দহ থানার পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। অভিযোগপত্র অনুযায়ী, হামলাকারীদের চিহ্নিত করা হয়েছে এবং সাক্ষ্যগ্রহণ প্রক্রিয়া চলছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার সঙ্গে যারা সরাসরি যুক্ত, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পরিস্থিতির সামাজিক প্রভাব

হামলার ঘটনায় স্থানীয় মুসল্লি, নার্স, শিক্ষক এবং ছাত্র সমাজ আতঙ্কিত। স্থানীয় ধর্মীয় নেতারা একদিকে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানালেও রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড স্থানীয় মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরনের ঘটনার রিপোর্টিং ও সামাজিক মিডিয়ায় প্রচার দ্রুত রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ায়। তাই শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সত্যিকার তদন্ত জরুরি। স্থানীয়দের মনে আশা আছে, প্রশাসন নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে এবং যারা দোষী তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

MAH – 13671 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button