রাজনীতি

এনসিপির মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু, দাম মাত্র ১০ হাজার টাকা, জুলাইযোদ্ধাদের জন্য বিশেষ ছাড়

Advertisement

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। সাধারণ প্রার্থীদের জন্য মূল্য ১০ হাজার টাকা, তবে জুলাইযোদ্ধা ও নিম্নআয়ের আবেদনকারীদের জন্য ফি রাখা হয়েছে মাত্র ২ হাজার টাকা।

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়ন ফরম বিক্রির কার্যক্রম শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করে।

মনোনয়ন ফরমের মূল্য ও ছাড়ের ঘোষণা

সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী জানান, মনোনয়ন ফরমের মূল্য ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে জুলাইযোদ্ধা, শ্রমজীবী ও নিম্নআয়ের প্রার্থীদের জন্য মূল্য রাখা হয়েছে মাত্র ২ হাজার টাকা।
তিনি বলেন, “আমরা চাই, দেশের সব শ্রেণির মানুষ রাজনীতিতে অংশগ্রহণের সুযোগ পাক। তাই ফি যতটা সম্ভব নাগালের মধ্যে রাখা হয়েছে।”

এনসিপির এই পদক্ষেপকে দলীয় নেতাকর্মীরা ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছেন। অনেকের মতে, রাজনৈতিক দল হিসেবে সাধারণ মানুষের প্রতি এমন উদ্যোগ গণতন্ত্রকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক করবে।

মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের তিনটি পদ্ধতি

কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা জানান, প্রার্থীরা তিনভাবে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে পারবেন।
প্রথমত, সরাসরি এনসিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে;
দ্বিতীয়ত, অনলাইনে দলের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে;
তৃতীয়ত, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও মুখ্য সংগঠকদের মাধ্যমে আঞ্চলিকভাবে সংগ্রহ করা যাবে।

তিনি বলেন, “আমরা প্রযুক্তির সুবিধা ব্যবহার করছি যাতে দেশের প্রত্যন্ত এলাকার কেউ পিছিয়ে না পড়ে। অনলাইনে ফরম পূরণ ও জমা দেওয়ার সুযোগও রাখা হয়েছে।”

এছাড়া আবেদনকারীদের নিজস্ব রাজনৈতিক জীবনবৃত্তান্ত, সামাজিক কর্মকাণ্ড এবং নৈতিক অঙ্গীকার সংক্রান্ত তথ্য জমা দিতে হবে।

বিক্রির সময়সীমা ও প্রাথমিক বাছাই প্রক্রিয়া

এনসিপির ঘোষণায় বলা হয়েছে, আগামী ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম বিক্রি চলবে। এরপর প্রার্থীদের প্রাথমিক যাচাই-বাছাই শেষে ১৫ নভেম্বর প্রকাশ করা হবে প্রাথমিক মনোনয়ন তালিকা।

দলটির সূত্র জানিয়েছে, মনোনয়ন যাচাইয়ের সময় প্রার্থীর ব্যক্তিগত সুনাম, দলীয় কাজের অবদান, রাজনৈতিক দর্শন ও নির্বাচনী এলাকার জনপ্রিয়তা বিবেচনা করা হবে।

রাজনৈতিক সংস্কার ও নতুন জোট গঠনের ইঙ্গিত

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সংবাদ সম্মেলনে আরও বলেন, “আমরা বিচার ও সংস্কার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করছি। এটি কোনো নির্বাচনী জোট নয়, বরং একটি রাজনৈতিক ঐক্য।”

দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, এনসিপি শুরু থেকেই ‘নতুন রাজনীতি’ ধারণাকে সামনে রেখে কাজ করছে। দলটি চায় জনগণের হাতে রাজনীতি ফিরিয়ে দিতে, যাতে কেবল কিছু প্রভাবশালী নয়, সাধারণ নাগরিকও সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারে।

প্রার্থীদের জন্য স্বচ্ছতা ও নৈতিকতার শর্ত

মনোনয়ন ফরমে এ বছর নতুনভাবে যুক্ত করা হয়েছে একটি বিশেষ সেকশন— যেখানে প্রার্থীর রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, নৈতিকতা ও সামাজিক দায়িত্ববোধ সম্পর্কে প্রশ্ন থাকবে। দলটি বলছে, এটি মূলত নতুন প্রজন্মের সৎ ও সচেতন নেতৃত্ব গড়ে তোলার অংশ।

ডা. তাসনিম জারা বলেন, “আমরা এমন প্রার্থী খুঁজছি, যারা শুধু জনপ্রিয় নন, বরং নৈতিক ও দায়িত্বশীল। রাজনীতিকে পেশা নয়, সেবা হিসেবে দেখতে হবে।”

দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিভাগীয় পর্যায়ে মনোনয়ন প্রক্রিয়া তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ১০ জন সাংগঠনিক সম্পাদককে। তারা রংপুর, রাজশাহী, সিলেট, ময়মনসিংহ, ঢাকা, ফরিদপুর, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে এই কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।

জনগণের অংশগ্রহণমূলক রাজনীতি গড়ার লক্ষ্য

এনসিপি নেতাদের মতে, দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জনগণের সরাসরি সম্পৃক্ততা কমে গেছে। তাদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি কিছু গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। এনসিপি সেই পুরনো কাঠামো ভেঙে সাধারণ মানুষকে রাজনীতির কেন্দ্রে আনতে চায়।

দলটির মুখপাত্র জানান, “আমরা এমন এক রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়তে চাই, যেখানে শ্রমিক, কৃষক, তরুণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীও প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পায়। এই মনোনয়ন প্রক্রিয়া তারই অংশ।”

বিশ্লেষকদের মতে, ‘নতুন রাজনীতি’র বাস্তব পরীক্ষা

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এনসিপির এই পদক্ষেপ দেশের ছোট ও মধ্যম পর্যায়ের রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য এক ধরনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে। স্বচ্ছ প্রক্রিয়া ও সাশ্রয়ী ফি নির্ধারণের মাধ্যমে দলটি সাধারণ জনগণের মধ্যে ইতিবাচক সাড়া পেতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. ফরহাদ হোসেন বলেন, “রাজনীতিতে অংশগ্রহণের সুযোগ বাড়ানো মানে গণতন্ত্রের ভিত্তি শক্ত করা। এনসিপি যদি তাদের ঘোষিত নীতি বাস্তবায়ন করতে পারে, তবে এটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন দিগন্ত খুলতে পারে।”

আসন্ন নির্বাচনের আগে এনসিপির মনোনয়ন ফরম বিক্রির এই ঘোষণা রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ফরমের সাশ্রয়ী মূল্য, অনলাইন সুবিধা ও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ— সব মিলিয়ে দলটি নিজেদের গণভিত্তিক চেহারা তুলে ধরার চেষ্টা করছে।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এই উদ্যোগের সফলতা নির্ভর করবে দলের স্বচ্ছতা ও পরবর্তী প্রার্থি বাছাই প্রক্রিয়ার ওপর। এখন দেখার বিষয়, এনসিপি সত্যিই ‘নতুন রাজনীতি’র প্রতিশ্রুতি কতটা বাস্তবে রূপ দিতে পারে।

এম আর এম – ২১২১,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button