অর্থনীতি

গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের চেয়ে বাণিজ্যকেন্দ্রিক: ট্রাম্পের বাংলাদেশ নীতি

Advertisement

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নতুন এক মোড়ে রয়েছে। যদিও অনেকেই ধারণা করেন জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানে যুক্তরাষ্ট্র সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিল, তবে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ মাইকেল কুগেলম্যান এই ধারণাকে অস্বীকার করেছেন। তার মতে, বাংলাদেশের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের সম্পর্ক মূলত বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক স্বার্থের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়, গণতন্ত্র, মানবাধিকার বা সংখ্যালঘু অধিকার এখন তার অগ্রাধিকার নয়।

ট্রাম্প প্রশাসনের বৈদেশিক নীতি: ব্যবসা প্রাধান্য

মাইকেল কুগেলম্যান, যুক্তরাষ্ট্রের এশিয়া প্যাসিফিক ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো, উল্লেখ করেন যে, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কের গতিপথ বদলে গেছে। তিনি বলেন, “ট্রাম্প প্রশাসন বিদেশি সাহায্য ও নীতি নির্ধারণে ‘নেশন বিল্ডিং’ পদ্ধতি পছন্দ করেন না। ইউএসএইডের মতো বিদেশি সহায়তা প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যত স্থগিত হয়েছে। তার প্রশাসন কেবল স্বার্থনির্ভর নীতি অনুসরণ করে।”

কুগেলম্যান আরও বলেন, “গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সংখ্যালঘু অধিকার—এই বিষয়গুলো এখন ইতিহাস। ট্রাম্পের দৃষ্টিতে এগুলো অগ্রাধিকার নয়। তিনি মূলত লেনদেনভিত্তিক ও ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি মানেন।”

বিশেষজ্ঞের মতে, বাংলাদেশ ট্রাম্প প্রশাসনের নজরে খুব একটা নেই। তিনি মনে করেন, “এটি বাংলাদেশের জন্য ভালোও হতে পারে। কারণ, নজরে থাকা দেশ যেমন ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন জটিলতা তৈরি হয়েছে।”

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও দক্ষিণপন্থার উত্থান

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্প্রতি দক্ষিণপন্থার উত্থানকে কেন্দ্র করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এ প্রসঙ্গে কুগেলম্যান মন্তব্য করেন, “গত এক বছরে ধর্মভিত্তিক ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলো রাজনৈতিক পরিসর পেয়েছে। যদি তারা গণতন্ত্রবিরোধী বা সহিংস কর্মকাণ্ডে জড়ায়, তখন সেটি সমস্যার সৃষ্টি করবে। বাংলাদেশ অতীতে এই ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানি গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগে কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। “এটি গুরুত্ব সহকারে নজরদারি করতে হবে। প্রতিশোধমূলক রাজনীতি ও চরম মেরুকরণ বাংলাদেশের জন্য বড় ঝুঁকি।”

কুগেলম্যানের মতে, আগামী নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা বেশি। তবে নির্বাচনের সময় সহিংসতার আশঙ্কা থেকে যায়। এ প্রেক্ষাপটে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে নির্বাচন যথাসময়ে এবং সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

গণঅভ্যুত্থান ও মানুষের প্রত্যাশা

কুগেলম্যান বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের পর এই সরকারের ওপর মানুষের প্রত্যাশা পাহাড়সম। যদিও সরকারের সময় অস্থিরতা কিছুটা বেড়েছে, তবুও জনগণের স্বাধীনতা আগের তুলনায় অনেক বেশি। তবে নতুন সরকারের ওপর প্রচণ্ড চাপ ও প্রত্যাশা থাকবে।”

তিনি আরও বলেন, “নির্বাচন যথাসময়ে ও সুষ্ঠুভাবে না হলে নতুন অস্থিরতার ঝুঁকি তৈরি হবে। গণঅভ্যুত্থানের পর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ শুরু হয়েছে, তবে এখনও অনেক বাকি রয়েছে।”

অর্থনীতি ও নতুন শুল্কনীতি

বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সেক্টরও ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির প্রভাব অনুভব করছে। নতুন শুল্কনীতি প্রবর্তনের পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানি করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ওপর চাপ বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন, শুল্ক বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশের পণ্যের প্রতিযোগিতা কমতে পারে এবং বাজারে দাম বৃদ্ধি পেতে পারে।

কৌশলগত প্রেক্ষাপট

বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের সময় দক্ষিণ এশিয়ায় তার নীতি মূলত স্বার্থনির্ভর। তিনি উল্লেখ করেন, “ট্রাম্পের নজরে থাকা দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক প্রায়শই জটিল হয়ে পড়েছে। তাই বাংলাদেশ, যেখানে প্রাকৃতিক সম্পদ বা কৌশলগত গুরুত্ব সীমিত, তার জন্য এটি সুবিধাজনক হতে পারে।”

এছাড়াও, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি বাংলাদেশের ব্যবসায়িক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে প্রভাবিত করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশকে কৌশলগতভাবে নিজের অর্থনৈতিক অবস্থান শক্তিশালী করতে হলে আন্তর্জাতিক বাজারে নতুন সমঝোতা ও বাণিজ্য নীতি গ্রহণ করতে হবে।

মাইকেল কুগেলম্যানের বক্তব্য স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে যে, বাংলাদেশের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের সম্পর্ক মানবাধিকারের চেয়ে বাণিজ্য ও স্বার্থের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সুষ্ঠু নির্বাচন ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সক্ষমতা বজায় রাখা এখন বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি সংক্ষেপে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

MAH – 12672,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button