বাংলাদেশবানিজ্য

বাংলাদেশ হতে চায় আশার বাতিঘর: দোহায় আর্থনা শীর্ষ সম্মেলনে ড. ইউনূস

কাতারের রাজধানী দোহায় অনুষ্ঠিত ‘আর্থনা শীর্ষ সম্মেলন ২০২৫’-এর উদ্বোধনী দিনে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস মূল বক্তা হিসেবে তাঁর বক্তব্যে একটি নতুন, অন্তর্ভুক্তিমূলক সামাজিক চুক্তি গঠনের আহ্বান জানান, যা বাংলাদেশের উদাহরণে বিশ্বের জন্য অনুপ্রেরণার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে বলে উল্লেখ করেন।

বাংলাদেশের সম্ভাবনার কথা

ড. ইউনূস বলেন,

“বাংলাদেশ এখন এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে রয়েছে, যেখানে একটি নতুন সামাজিক চুক্তি গঠনের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর জন্য আশার বাতিঘর হয়ে উঠতে পারে।”

তিনি এমন একটি পৃথিবীর কল্পনা করেন, যেখানে কেউ এত দরিদ্র থাকবে না যে সে স্বপ্ন দেখতেও পারবে না, আবার কোনো স্বপ্ন এত বড় হবে না যে তা বাস্তবায়ন অসম্ভব

ভবিষ্যৎ গঠনে সক্রিয় অংশগ্রহণের আহ্বান

ড. ইউনূস ভবিষ্যতের ধারণাটিকে উত্তরাধিকার নয় বরং একটি গঠনের সুযোগ হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন:

“ভবিষ্যৎ এমন কিছু নয় যা আমরা কেবল উত্তরাধিকার হিসেবে পাই, বরং এটি আমাদের গঠনের বিষয় এবং তাতে প্রত্যেকেরই একটি করে ভূমিকা রয়েছে।”

নতুন সামাজিক চুক্তির বৈশ্বিক আহ্বান

প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. ইউনূস একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সামাজিক চুক্তি গঠনের প্রস্তাব করেন, যেখানে

  • রাষ্ট্র ও জনগণের মধ্যে আস্থা ও সম্মান থাকবে,
  • বিশেষ করে যুবসমাজ হবে উন্নয়নের প্রধান চালিকাশক্তি,
  • ন্যায়বিচার, সুযোগ ও অংশগ্রহণ হবে মূল ভিত্তি।

তিনি বলেন, সামাজিক ব্যবসা, মাইক্রোফাইন্যান্স ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব

বৈশ্বিক সংকট ও প্রয়োজনীয় সমাধান

ড. ইউনূস বলেন,

“আমরা এমন এক সময়ে বসবাস করছি, যেখানে বহুপাক্ষিকতা, জলবায়ু পরিবর্তন, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং মানবিক সংকট একত্রে আমাদের ভবিষ্যতের জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠেছে।”

এই প্রেক্ষাপটে তিনি আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতার নতুন রূপরেখা তৈরির আহ্বান জানান, যেখানে উদ্ভাবন, সহমর্মিতা ও পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে মানবতার জন্য ইতিবাচক ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা যাবে

সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ও ইউনূসের প্রশংসা

দুই দিনব্যাপী আয়োজিত এই সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ছিল:
‘আমাদের উত্তরাধিকার গড়ে তোলা: স্থায়িত্ব, উদ্ভাবন ও ঐতিহ্যবাহী জ্ঞান’
— যা বর্তমান বাস্তবতায় ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সমন্বয়ের মাধ্যমে সহনশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বিশ্ব গঠনের উপর গুরুত্ব দেয়

ড. ইউনূস আয়োজক কাতার ফাউন্ডেশন-এর প্রশংসা করেন এবং বলেন,

“এই সম্মেলন নতুন ভাবনার সূতিকাগার হয়ে উঠেছে, যা আগামী দিনের জন্য পথপ্রদর্শক হবে।”

‘আর্থনা শীর্ষ সম্মেলন ২০২৫’-এ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্য নতুন প্রজন্ম, বিশ্বনেতা ও উন্নয়ন নীতিনির্ধারকদের কাছে একটি গভীর বার্তা পৌঁছে দিয়েছে—অন্তর্ভুক্তিমূলকতা, সামাজিক ন্যায় এবং উদ্ভাবনের মাধ্যমে আমরা সবাই মিলে গড়ে তুলতে পারি একটি সহানুভূতিশীল ভবিষ্যৎ।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button