বাংলাদেশ

জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ৩৭ শিশুসহ এখনও চিকিৎসাধীন ৪৪

Advertisement

ঢাকার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুলের দুর্ঘটনার পর বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি রয়েছেন ৪৪ জন, যাদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু। ৮ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। চিকিৎসা দিচ্ছেন সিঙ্গাপুর থেকে আগত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা।

চিকিৎসাধীন অবস্থায় এখনও ৪৪ জন, অধিকাংশই শিশু

ঢাকার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজ এলাকায় দুর্ঘটনার পর দগ্ধ অবস্থায় যারা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়েছেন, তাদের মধ্যে এখনও ৪৪ জন চিকিৎসাধীন। বুধবার বিকেলে ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. নাসির উদ্দীন এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান।

তিনি জানান, ভর্তি ৪৪ জনের মধ্যে ৩৭ জনই শিশু, যাদের বয়স ৭ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে। তাদের অনেকের অবস্থাই গুরুতর।

৮ জন আইসিইউতে, ঝুঁকিতে আরও অনেকে

পরিচালক আরও জানান, বর্তমানে ৮ জন দগ্ধ রোগী আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের অবস্থা বেশ সংকটাপন্ন।

তুলনামূলকভাবে কম ঝুঁকিতে থাকা দগ্ধ রোগীর সংখ্যা ১৩ জন। বাকি ২৩ জনের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল হলেও তারা এখনও নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন।

দুর্ঘটনার প্রেক্ষাপট ও কীভাবে আহত হলেন তারা

জানা যায়, মঙ্গলবার সকালে দিয়াবাড়ি এলাকায় একটি শিক্ষাভ্রমণ চলাকালে হঠাৎ গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ ঘটে।

এই বিস্ফোরণে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের একটি দল এবং তাদের সঙ্গে থাকা শিক্ষক ও সহকর্মীরা আগুনে দগ্ধ হন।

শুরুতে তাদের কুর্মিটোলা ও তুরাগের স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে গুরুতর দগ্ধদের দ্রুত বার্ন ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর করা হয়।

বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা যুক্ত হয়েছেন চিকিৎসায়

পরিচালক ডা. নাসির উদ্দীন জানান, সিঙ্গাপুর থেকে বিশেষায়িত চিকিৎসক দলের একজন সদস্য ইতোমধ্যে ইনস্টিটিউটে এসে রোগীদের দেখেছেন এবং চিকিৎসায় পরামর্শ দিচ্ছেন।

তিনি বলেন, “আমরা শিশুদের শারীরিক গঠন, ত্বকের অবস্থা, এবং মানসিক চাপ বিবেচনায় রেখে প্রতিটি ধাপে চিকিৎসা দিচ্ছি। এই ঘটনায় যারা দগ্ধ হয়েছেন, তাদের দ্রুত সেরে তুলতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।”

পরিবার ও অভিভাবকদের দুর্বিষহ সময়

চিকিৎসাধীন শিশুদের অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। অনেকেই হাসপাতালের বাইরে কাঁদতে দেখা গেছে।

একজন অভিভাবক বলেন, “আমার মেয়ে স্কুলের প্রোগ্রামে গিয়েছিল। ও যে এভাবে পুড়ে যাবে, কখনো ভাবিনি। এখন শুধু বাঁচুক, এই দোয়া করছি।”

চিকিৎসা ও পুনর্বাসন পরিকল্পনা

বার্ন ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, যেসব শিশুদের ত্বকে গভীরভাবে ক্ষত হয়েছে, তাদের পুনর্বাসনের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছে প্লাস্টিক সার্জারি, কাউন্সেলিং, এবং প্রয়োজনীয় থেরাপি।

তারা আরও জানান, চিকিৎসা শেষ হলেও এসব শিশুর জন্য মানসিক সহায়তা ও সামাজিক পুনর্বাসন জরুরি হয়ে উঠবে।

এমন দুর্ঘটনা প্রতিরোধে করণীয় কী?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্কুল পর্যায়ের যেকোনো আউটডোর কার্যক্রমে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকা উচিত।

গ্যাস ও জ্বালানিসংক্রান্ত এলাকা বা স্থাপনার আশপাশে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. তাসনিম আহমেদ বলেন, “এই ধরণের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে স্কুল প্রশাসন ও অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। নিরাপত্তা মেনে না চললে এমন দুর্ঘটনা ভবিষ্যতেও ঘটতে পারে।”

শেষ কথা

মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের এই দুর্ঘটনা গোটা জাতিকে নাড়া দিয়েছে।

জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি ৪৪ জনের চিকিৎসা চলছে, তবে শিশুদের অবস্থা দেখে চিকিৎসক এবং পরিবার সবাই উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।

প্রশ্ন উঠেছে—ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা ঠেকাতে আমরা কতটা প্রস্তুত? নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে কতো শিশুকে আর এই মূল্য দিতে হবে?

এম আর এম – ০৪৭৮  , Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button