বানিজ্য

ভোট বিরতির বিধান বাতিলে ব্যবসায়ী পরিষদের চিঠি

দেশের শীর্ষ ব্যবসায়িক সংগঠন এফবিসিসিআই (ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি) এবং অন্যান্য বাণিজ্য সংগঠনের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ‘টানা দুইবার নির্বাহী কমিটি বা পর্ষদে থাকার পর একবার বিরতি দিয়ে পুনরায় নির্বাচন করার’ বিধান বাতিল করার দাবি জানানো হয়েছে। এই বিধান কার্যকর থাকায় বর্তমান ও সাবেক অনেক নেতাকে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বঞ্চিত হতে হতে পারে বলে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের পক্ষ থেকে চিঠি

সম্প্রতি সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের আহ্বায়ক মীর নিজাম উদ্দিন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনকে একটি চিঠি দিয়েছেন। সেখানে বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা-২০২৫ এর ১৮(৫) উপবিধি বাতিলের আবেদন জানানো হয়েছে। ওই উপবিধির বিধান অনুযায়ী, যদি কেউ টানা দুইবার নির্বাহী কমিটি বা পর্ষদে থাকে, তবে তাকে একবার বিরতি দিতে হবে পুনরায় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য। ব্যবসায়ীরা এই বিধানকে ‘ভোটারের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন’ বলে অভিহিত করেছেন।

সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের বক্তব্য, যেহেতু এসব বাণিজ্য সংগঠন অলাভজনক প্রতিষ্ঠান, তাই নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে এ ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করা উচিত নয়। বরং অতীতের জন্যও এই বিধান কার্যকর করাটা আইনবিরুদ্ধ এবং ব্যবসায়ীদের ভোটাধিকারকে বাধাগ্রস্ত করছে।

ভর্তি ফি ও বার্ষিক চাঁদা বৃদ্ধির বিরোধিতা

এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচনী বিধিমালা অনুযায়ী পণ্যভিত্তিক বাণিজ্য সংগঠন বা অ্যাসোসিয়েশন এবং চেম্বারগুলোর ভর্তি ফি ও বার্ষিক চাঁদা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। এর আগে সদস্য হওয়ার জন্য সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকা এককালীন ভর্তি ফি এবং ১ হাজার টাকা বার্ষিক চাঁদা ছিল। নতুন বিধিমালায় এই ফি যথাক্রমে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১৫ হাজার টাকা ও ৫ হাজার টাকা।

ব্যবসায়ী নেতারা উল্লেখ করেছেন, দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় ইতোমধ্যে ভ্যাট, কর, ব্যাংক ঋণের সুদসহ নানা আর্থিক চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে। অতিরিক্ত ফি বৃদ্ধির ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের মধ্যে চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হওয়ার আগ্রহ কমে যাবে। এতে ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের মধ্যে অসন্তোষ ও হতাশা তৈরি হবে।

বার্ষিক চাঁদার পরিমাণ কমানোর দাবি

সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ এফবিসিসিআইয়ের বার্ষিক চাঁদাও কমানোর দাবি তুলেছে। নতুন বিধিমালায় ক শ্রেণির অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক চাঁদা ধরা হয়েছে ৭৫ হাজার টাকা এবং ক শ্রেণির চেম্বারের জন্য নির্ধারিত হয়েছে ১ লাখ টাকা। ১৯৯৪ সালের বিধিমালায় যথাক্রমে ছিল ২৫ হাজার এবং ৩০ হাজার টাকা। দুই বছর আগে তা যথাক্রমে ৩৫ হাজার ও ৪৫ হাজার টাকা ছিল।

নতুন এই অস্বাভাবিক চাঁদা বৃদ্ধিকে ছোট অ্যাসোসিয়েশন ও মফস্বল চেম্বারের জন্য ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে অভিহিত করেছে ব্যবসায়ীরা।

নিবন্ধন ফি বৃদ্ধির ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের অনুরোধ

এফবিসিসিআইয়ের সাধারণ পরিষদের সদস্য হওয়ার জন্য নতুন নিবন্ধন ফি নির্ধারিত হয়েছে ২০ হাজার টাকা। এর আগে এই ফি ছিল মাত্র ২ হাজার ৫০০ টাকা। সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ এই নিবন্ধন ফি বৃদ্ধির বিরোধিতা করে বলেছে, এফবিসিসিআইয়ের নিবন্ধন ফি আগের মতো রেখে দেওয়া উচিত।

সহায়ক কমিটি ভেঙে দেওয়ার দাবি

সম্প্রতি এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসকের সহায়ক কমিটি নিয়ে বিতর্ক চলছে। সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ অভিযোগ করেছে, সহায়ক কমিটির সদস্যদের সঙ্গে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেলের প্রার্থীদের সরাসরি যোগসাজশ রয়েছে, যা নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা বিঘ্নিত করে। ফলে তারা এ কমিটি ভেঙে দেয়ার দাবি তুলেছে, যাতে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করা যায়।

ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশের ব্যবসায়িক সম্প্রদায় মনে করছে, ভোট থেকে বিরত রাখার এই বিধান প্রথাগত নেতাদের নির্বাচন থেকে সরিয়ে নতুন নেতৃত্বের বিকাশ বাধাগ্রস্ত করছে। এতে সংগঠনগুলোতে উন্নয়ন ও পরিবর্তন বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অপরদিকে, ফি ও চাঁদা বৃদ্ধির ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা সদস্যপদ থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হতে পারে, যা ব্যবসায়িক সংগঠনগুলোর অর্থনৈতিক ভিত্তিকে দুর্বল করবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়মাবলী সংশোধনে সকল ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে মতামত নেওয়া প্রয়োজন এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া সহজ ও স্বচ্ছ করতে হবে। একই সাথে, ব্যবসায়ীদের আর্থিক বোঝা কমানোর মাধ্যমে তাদের সংগঠনে সম্পৃক্ততা বাড়ানো জরুরি।

সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের এই দাবি ব্যবসায়িক নেতৃত্বের স্বতন্ত্রতা ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। দেশের ব্যবসায়িক পরিবেশকে উন্নত ও সুষ্ঠু করার জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়া, ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ এবং অতিরিক্ত আর্থিক চাপ কমানো। সরকারের উচিত এই দাবিগুলো মনোযোগ দিয়ে প্রাসঙ্গিক সংশোধনী আনা, যাতে দেশের অর্থনীতি ও বাণিজ্য ক্ষেত্র আরও শক্তিশালী ও সুসংগঠিত হয়।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button