যশোর শহরের ধর্মতলা এলাকায় একটি মাংসের দোকানে গর্ভবতী গরুর মাংস বিক্রির অভিযোগে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযান পরিচালিত হয়েছে। এসময় দোকান মালিককে জরিমানা করা হয় এবং জব্দ করা মাংস ধ্বংস করা হয়। ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযানের বিস্তারিত ঘটনা
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের যশোর অফিসের সহকারী পরিচালক সেলিমুজ্জামান জানান, স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে নজরুল ইসলামের মাংসের দোকানে অভিযান চালানো হয়। স্থানীয়রা ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, দোকানের পেছনে একটি গর্ভবতী গরু জবাই করা হয়েছে। ওই গরুর পেটে থাকা বাচ্চা একটি বস্তায় ভরে রাখা হয়, যা পরে রাস্তায় কুকুরে টানাহেঁচড়া করে।
অভিযানের খবর পেয়ে দোকান মালিক নজরুল ইসলাম পালিয়ে যান। পরে মাংস ধ্বংস এবং দোকানের চাপাতি, ছুরি, ওজন মাপার যন্ত্র জব্দ করা হয়। দোকানে মূল্য তালিকা না থাকায় ভোক্তা অধিকারের নিয়ম ভঙ্গের দায়ে তাকে ১৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
গর্ভবতী গরু জবাইয়ের আইনি প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশে প্রাণীকল্যাণ ও ভোক্তা সুরক্ষার আইন অনুযায়ী, গর্ভবতী গরু জবাই করা দণ্ডনীয় অপরাধ। এটি শুধু নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধের পরিপন্থী নয়, বরং জনস্বাস্থ্যের জন্যও হুমকি। গর্ভবতী গরুর মাংস ভোক্তাদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, যা খাদ্য নিরাপত্তা আইনেরও লঙ্ঘন।
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
এ ঘটনায় স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা জানান, এমন জঘন্য কাজ শুধু ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণা নয়, বরং পশুর প্রতি অমানবিক আচরণও। অনেকেই দাবি করেন, কর্তৃপক্ষকে এ ধরনের দোকান চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “আমরা নিজেরা ভিডিও ধারণ না করলে হয়তো ঘটনাটি চাপা পড়ে যেত। ভবিষ্যতে যেন আর কেউ এমন কাজ করার সাহস না পায়, তার ব্যবস্থা নিতে হবে।”
বিক্রেতার পাল্টা দাবি
অভিযোগ অস্বীকার করে দোকানের ম্যানেজার আব্দুল আলীম জানান, তাদের দোকানে কোনো গর্ভবতী গরু জবাই করা হয়নি। তিনি দাবি করেন, এটি তাদের সুনাম নষ্ট করার জন্য ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সাজানো হয়েছে। তবে স্থানীয়দের ভিডিওচিত্র ও জব্দকৃত প্রমাণের কারণে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযোগকে যথাযথ বলে নিশ্চিত করেছে।
বাংলাদেশে এর আগেও বিভিন্ন জেলায় গর্ভবতী গরু জবাই ও মাংস বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। তবে সচরাচর এ ধরনের ঘটনা প্রমাণের অভাবে দায় এড়িয়ে যায় সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। এর ফলে অনেক বেআইনি কর্মকাণ্ড ধরা পড়ছে এবং সাধারণ মানুষ কিছুটা হলেও সুরক্ষিত হচ্ছে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে গুরুত্ব
গর্ভবতী গরু জবাই শুধু আইন ভঙ্গই নয়, এটি নৈতিকতা ও মানবতার পরিপন্থী। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে বাজারে কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সাধারণ ভোক্তাদেরও সচেতন হতে হবে। কেউ যদি এ ধরনের ঘটনা দেখে, তবে সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনকে জানানো উচিত।
যশোরের ঘটনাটি আবারও প্রমাণ করল, খাদ্য নিরাপত্তা ও ভোক্তা অধিকারের জন্য আইন প্রয়োগ কতটা জরুরি। গর্ভবতী গরুর মাংস বিক্রি শুধু বেআইনি নয়, এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। প্রশ্ন থেকে যায়, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা ঠেকাতে কর্তৃপক্ষ কতটা কঠোর হতে পারবে?
এম আর এম – ১৫১৭,Signalbd.com



