বাংলাদেশ

ইলিশ রক্ষায় ড্রোন দিয়ে কাজ করবে বিমান বাহিনী: মৎস্য উপদেষ্টা

Advertisement

বাংলাদেশে ইলিশ রক্ষায় এবার নতুন মাত্রা যোগ হতে যাচ্ছে। প্রতি বছরের মতো মা ইলিশ সংরক্ষণে সরকার ২২ দিনের বিশেষ নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে। তবে এ বছর পুলিশের পাশাপাশি নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সঙ্গে প্রথমবারের মতো বিমান বাহিনীও মাঠে থাকবে। তারা আধুনিক ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে অভিযান পরিচালনা করবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার

বুধবার (১ অক্টোবর) বিকেলে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে রণদা প্রসাদ সাহার দুর্গামন্দির পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ তথ্য জানান।

নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা ও কার্যকারিতা

সরকার ঘোষিত এ বিশেষ নিষেধাজ্ঞা ৪ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে চলবে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত। এ সময় মা ইলিশ ধরা, পরিবহন, মজুত ও বাজারজাতকরণ পুরোপুরি নিষিদ্ধ থাকবে। মৎস্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ সময় মাছ ধরলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ফরিদা আক্তার বলেন, “গত বছর আমাদের অভিযানে উল্লেখযোগ্য সফলতা এসেছে। ৫২ দশমিক ৫ শতাংশ মা ইলিশ রক্ষা সম্ভব হয়েছিল। এ বছর আমরা আরও কড়া নজরদারি চালাবো। আশা করছি, এবার ইলিশের উৎপাদন আরও বাড়বে।”

ড্রোন প্রযুক্তির ব্যবহার

এ বছর ইলিশ রক্ষায় সবচেয়ে বড় নতুনত্ব হলো বিমান বাহিনীর অংশগ্রহণ। তারা উন্নতমানের ড্রোন ব্যবহার করে নদীর ওপর নজরদারি চালাবে। ফলে জেলেদের গতিবিধি, অবৈধ জালের ব্যবহার কিংবা রাতের বেলায় গোপনে মাছ ধরার চেষ্টা সহজেই ধরা সম্ভব হবে।

বিমান বাহিনীর এই উদ্যোগ মৎস্য খাতে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রযুক্তির ব্যবহারে একদিকে যেমন নজরদারির পরিধি বাড়বে, তেমনি কম সংখ্যক জনবল দিয়েও বিশাল নদী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হবে।

কারেন্ট জাল ও চায়না জালের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা

বাংলাদেশে ইলিশ আহরণ কমে যাওয়ার প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয় কারেন্ট জাল ও চায়না জালের ব্যবহারকে। এ ধরনের সূক্ষ্ম ও ক্ষতিকর জালে অল্প বয়সী ও মা ইলিশ সহজেই ধরা পড়ে। এতে ভবিষ্যৎ প্রজনন ব্যাহত হয় এবং ইলিশের সংখ্যা হ্রাস পায়।

মৎস্য উপদেষ্টা জানিয়েছেন, এ বছর কারেন্ট জাল ও চায়না জালের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান চালানো হবে। পুলিশের পাশাপাশি কোস্টগার্ড, নৌ পুলিশ এবং প্রশাসনও মাঠে থাকবে। নিয়ম ভঙ্গ করলে জেলেদের শাস্তি ও জরিমানা করা হবে।

পূর্ববর্তী বছরের অভিজ্ঞতা

বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রজনন মৌসুমে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ২০২৪ সালে এ উদ্যোগে সাফল্য এসেছিল উল্লেখযোগ্য হারে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ৫২ দশমিক ৫ শতাংশ মা ইলিশ রক্ষা করা সম্ভব হয়েছিল। এর ফলে পরবর্তী মৌসুমে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।

বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে বড় ইলিশ উৎপাদনকারী দেশ। দেশের মোট মাছ উৎপাদনের প্রায় ১২ শতাংশ আসে ইলিশ থেকে। অর্থনীতিতেও এর অবদান বিশাল। ২০২৪ সালে দেশে প্রায় ৫.৭ লাখ মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদন হয়েছিল।

সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও সংস্কৃতির গুরুত্ব

মন্দির পরিদর্শনকালে সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন এস মোরশেদ বলেন, “সংস্কৃতি কখনো ধ্বংস করা যাবে না। আমাদের ঐতিহ্য ও উৎসবগুলিকে ভালোবাসতে হবে, তবে শৃঙ্খলা বজায় রাখা জরুরি।”

এ সময় উপস্থিত ছিলেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, ব্রিটিশ হাই কমিশনার সারাহ কুক, সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের ডেপুটি হেড অফ মিশন দিপক ইলমার, জেলা প্রশাসক শরীফা হক, পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানসহ অন্যান্য অতিথিরা।

“ইলিশ মাছ কম আহরণের মূল কারণ কারেন্ট জাল ও চায়না জাল। তাই এ বছর আমরা বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করব।” — ফরিদা আক্তার, মৎস্য উপদেষ্টা

মা ইলিশ রক্ষায় প্রতিবছর নেওয়া পদক্ষেপ ইতিমধ্যেই সফলতা এনে দিয়েছে। এবার ড্রোন প্রযুক্তির সংযোজন নজরদারিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ উদ্যোগ সফল হলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ইলিশ উৎপাদন আরও বাড়বে এবং বিশ্ববাজারে এ খাতে দেশের অবস্থান আরও মজবুত হবে।

এম আর এম – ১৫৯৯,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button