রাজনীতি

ক্ষমতায় যেতে কেউ তাড়াহুড়া করবেন না: মামুনুল হক

Advertisement

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক সতর্ক করেছেন, ক্ষমতায় পৌঁছানোর জন্য কেউ তাড়াহুড়া করবেন না। তিনি বলেন, মাত্র এক বছরের ব্যবধানে যদি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা ভুলে যায়, তাহলে জনগণও তাদের ভুলে যাবে। জনগণ তার রক্ত এবং প্রাণ উৎসর্গ করেছে বৈষম্য, অনাচার ও অবিচার দূর করার জন্য, কোনো রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য নয়।

শনিবার পুরানা পল্টনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের মাসিক বৈঠকে এসব কথা বলেন মামুনুল হক। তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় কাঠামোর সংস্কার ছাড়া কোনো নির্বাচন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।

রাষ্ট্রীয় কাঠামোর সংস্কারের গুরুত্ব

মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ২০১৪, ২০১৮, ২০২৪ বা ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির মতো নির্বাচনে জনগণ আর অংশ নেবে না। তিনি জোর দিয়ে বলেন, নির্বাচনের আগে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং গণভোটের মাধ্যমে জনগণকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্ণ অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বারবার দলবাজি নির্বাচন, রাষ্ট্রযন্ত্রের অপব্যবহার এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূলের চেষ্টা দেশের রাজনীতিকে ধ্বংসের প্রান্তে নিয়ে গেছে। তাই দীর্ঘ আলোচনার মাধ্যমে যে অবস্থানে পৌঁছানো হয়েছে, তা থেকে ফিরে আসার কোনো সুযোগ নেই।

জুলাই সনদ ও গণভোটের প্রয়োজনীয়তা

মামুনুল হক বলেন, জুলাই সনদ রাষ্ট্রীয় কাঠামোর সংস্কার নিশ্চিত করার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন ছাড়া কোনো নির্বাচন জনগণ গ্রহণ করবে না। তিনি সতর্ক করে বলেন, যারা এই প্রক্রিয়াকে উপেক্ষা করবে তারা জনগণের রোষের সম্মুখীন হবে।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, অতীতের ইতিহাস প্রমাণ করে যে, রাষ্ট্রীয় কাঠামোর অবহেলা ও স্বৈরশাসকদের আগমন দেশের জন্য ক্ষতিকর। তাই জনগণের সম্মতি ও আইনি ভিত্তি ছাড়া কোনো নির্বাচন গ্রহণযোগ্য নয়।

রাজনৈতিক দল ও জনসাধারণের প্রতি আহ্বান

মাওলানা মামুনুল হক রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ক্ষমতায় পৌঁছানোর জন্য কেউ তাড়াহুড়া করবেন না। তিনি বলেন, হাজার হাজার ছাত্র ও জনতা জীবন বাজি রেখে আন্দোলন করেছে, তাদের ত্যাগকে ভুলে গেলে চলবে না। দেশের গণতান্ত্রিক ও ন্যায়সংগত প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করতে সকলকে ধৈর্যশীল এবং দায়িত্বশীল হতে হবে।

তিনি আট দলের যুগপৎ কর্মসূচি—১১ নভেম্বরের জনসভা সফল করার জন্য সংগঠনের নেতাকর্মী ও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।

অতীতের শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতা

মাওলানা মামুনুল হক ইতিহাসের উদাহরণ টেনে বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং ১৯৭২ সালের সংবিধানের ধারাবাহিকতায় দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, এই ধারাবাহিকতা উপেক্ষা করলে বারবার স্বৈরশাসকের আগমন ঘটেছে এবং দেশ বৈষম্য ও অরাজকতার মধ্যে নিমজ্জিত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ২৪ সালের বিপ্লবের পর ৭২ সালের সংবিধানকে দোহাই দিয়ে যারা সংস্কারকে অবহেলা করতে চায়, তারা মূলত জনগণের ভয়েই প্রকাশ্যে বলতে পারছে না যে তারা সংস্কার চায় না। জনগণকে বোকা ভাবার চেষ্টা চলবে না।

বৈঠকে উপস্থিত সদস্য ও কার্যক্রম

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ, জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, নায়েবে আমির মাওলানা আফজালুর রহমান, মাওলানা রেজাউল করীম জালালী, মুফতি সাঈদ নূর, মাওলানা মুহিউদ্দীন রব্বানী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, মাওলানা আব্দুল আজীজ, মুফতি শরাফত হোসাইন ও মাওলানা শরীফ সাইদুর রহমানসহ অন্যান্য কার্যকরী সদস্যরা।

বৈঠকে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর সংস্কার, নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা এবং জনসাধারণের সচেতনতা বৃদ্ধির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এছাড়া আগামী কর্মসূচি ও জনসভার প্রস্তুতির পরিকল্পনাও নির্ধারণ করা হয়।

মাওলানা মামুনুল হক মনে করিয়ে দিয়েছেন, ক্ষমতায় যেতে তাড়াহুড়া নয়। রাষ্ট্রীয় কাঠামোর সংস্কার ও আইনি ভিত্তি ছাড়া নির্বাচন কখনোই জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য এটি একটি স্পষ্ট সতর্কবার্তা এবং দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সুরক্ষার জন্য সময়োপযোগী পদক্ষেপ।

এম আর এম – ২১৪১,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button