বাংলাদেশ

প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের দশম গ্রেডে আসার সুযোগ নেই: গণশিক্ষা উপদেষ্টা

Advertisement

‘১৩ থেকে এক ধাপে দশম গ্রেডে আসা সম্ভব নয়, সরকার কাজ করছে ১১তম গ্রেড বাস্তবায়নে’ — অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের ১৩তম থেকে সরাসরি দশম গ্রেডে উন্নীত হওয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। তিনি বলেন, এই দাবি অযৌক্তিক এবং বাস্তবসম্মত নয়। তবে সরকার ধাপে ধাপে শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে উন্নীত করার বিষয়ে ইতিবাচকভাবে কাজ করছে।

শনিবার (৮ নভেম্বর) সকালে খুলনা শিল্পকলা একাডেমিতে সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন গণশিক্ষা উপদেষ্টা।

প্রাথমিক শিক্ষকদের গ্রেড দাবি ও সরকারের অবস্থান

অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, “প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের একবারে ১৩তম থেকে দশম গ্রেডে আসার কোনো যৌক্তিকতা নেই। প্রধান শিক্ষকদের সংখ্যা সীমিত, কিন্তু সহকারী শিক্ষকের সংখ্যা অনেক বেশি। একবারে এত বড় পরিবর্তন প্রশাসনিকভাবে সম্ভব নয়।”

তিনি আরও বলেন, সরকার প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন কাঠামো উন্নয়নে আন্তরিক। “আমরা চাই, শিক্ষকদের প্রাপ্য সম্মান ও সুবিধা নিশ্চিত হোক। তবে তা হতে হবে সরকারের নীতি ও বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে। তাই ধাপে ধাপে ১১তম গ্রেড বাস্তবায়নের বিষয়ে কাজ চলছে।”

আন্দোলন অযৌক্তিক, শিক্ষায় বিঘ্ন হলে ব্যবস্থা

সাম্প্রতিক সময়ে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকরা গ্রেড উন্নীতকরণের দাবিতে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে গণশিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, “এই মুহূর্তে আন্দোলনে যাওয়া যৌক্তিক নয়। আলোচনা ছাড়া এমন সিদ্ধান্তে গেলে তা শিক্ষা কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটাবে।”

তিনি সতর্ক করে বলেন, “শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ রেখে আন্দোলনে নামলে প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে। শিক্ষক সমাজের উচিত দেশের শিক্ষার স্বার্থে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখা।”

সভায় তিনি শিক্ষকদের নৈতিকতা, ব্যবহারিক শিক্ষা, সহশিক্ষা কার্যক্রম এবং বিদ্যালয় পরিচালনা বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন।

প্রাথমিক শিক্ষায় সরকারের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ

গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সরকার প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে ইতিমধ্যে কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:

১. সহকারী শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি সম্প্রসারণ
২. বিদ্যালয়ভিত্তিক মনিটরিং জোরদার করা
৩. শিক্ষার্থীর উপস্থিতি বৃদ্ধি প্রকল্প
৪. বিদ্যালয় অবকাঠামো উন্নয়ন পরিকল্পনা
৫. শিক্ষকদের ডিজিটাল শিক্ষণ প্রশিক্ষণ

অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, “আমরা এখন মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে চাই। শুধু গ্রেড নয়, শিক্ষার গুণগতমান উন্নয়নই মূল লক্ষ্য।”

বেতন কাঠামো: জনপ্রশাসনের নির্দেশনা

গণশিক্ষা উপদেষ্টা জানান, বেতন কাঠামো ও পদোন্নতির বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে নীতিমালা দিয়েছে। তিনি বলেন, “জনপ্রশাসন বলেছে, শতভাগ পদোন্নতি না দিয়ে ৮০ শতাংশ পদোন্নতি ও ২০ শতাংশ নতুন নিয়োগের জন্য রাখতে হবে। এটি সরকারের নীতি।”

এর মানে হলো, শিক্ষক পদোন্নতি ও বেতন বৃদ্ধিতে ধাপে ধাপে নীতিগত সীমাবদ্ধতা রয়েছে, যা একবারে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।

শিক্ষকদের দাবির পেছনের প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, দীর্ঘদিন ধরে সহকারী শিক্ষকরা ১৩তম গ্রেড থেকে দশম গ্রেডে উন্নীত করার দাবি জানিয়ে আসছেন। ২০১৫ সালের নতুন জাতীয় বেতন স্কেল কার্যকর হওয়ার পরও তাদের দাবি পূরণ হয়নি।

বর্তমানে প্রধান শিক্ষকরা ১০ম গ্রেডে, সহকারী শিক্ষকরা ১৩তম গ্রেডে রয়েছেন। ফলে তারা মনে করছেন, দায়িত্ব ও কাজের চাপ বিবেচনায় সহকারী শিক্ষক পদে আরও উন্নত গ্রেড পাওয়া উচিত।

তবে সরকার বলছে, দেশের প্রায় ৪ লাখ সহকারী শিক্ষককে এক ধাপে তিন গ্রেড উন্নীত করা অর্থনৈতিকভাবে সম্ভব নয়।

শিক্ষা বিশ্লেষকদের মতামত

শিক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, শিক্ষক আন্দোলনের চেয়ে গঠনমূলক সংলাপই সমস্যার সমাধান আনতে পারে। শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ড. রুহুল আমিন বলেন, “সহকারী শিক্ষকদের দাবি আংশিকভাবে যৌক্তিক হলেও প্রশাসনিক বাস্তবতা বুঝে চলা দরকার। সরকার ও শিক্ষক সমাজের মধ্যে নিয়মিত সংলাপ হওয়া জরুরি।”

তিনি আরও বলেন, “গ্রেড উন্নয়ন একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। শিক্ষকদের উচিত শিক্ষার্থীদের পাঠদানে মনোযোগ দেওয়া এবং আলোচনার মাধ্যমে দাবি বাস্তবায়নের পথ খোঁজা।”

সভার অন্যান্য দিকনির্দেশনা

খুলনায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা শিক্ষক নেতৃত্ব ও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা নিয়ে বক্তব্য রাখেন। সভায় জানানো হয়, নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে প্রাথমিক শিক্ষকদের আরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, “শিক্ষকরা সমাজের নেতৃত্ব দেন। তাই তাদের আচরণ, পেশাদারিত্ব ও দক্ষতা শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে। আমরা চাই, শিক্ষকরা জাতি গঠনের অগ্রভাগে থাকুন।”

গণশিক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্যে পরিষ্কারভাবে উঠে এসেছে যে এক ধাপে ১৩তম থেকে দশম গ্রেডে আসা সম্ভব নয়, তবে সরকার ১১তম গ্রেডে উন্নীত করার উদ্যোগ নিচ্ছে। আন্দোলনের পরিবর্তে সংলাপ ও বাস্তবসম্মত নীতির মধ্য দিয়ে সমস্যার সমাধানেই জোর দিচ্ছে সরকার।

পর্যবেক্ষকদের মতে, সরকার ও শিক্ষক সমাজ পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন ও শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি বাস্তবায়নে এগিয়ে গেলে শিক্ষাব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।

এম আর এম – ২১৩৫,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button