বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি বর্তমানে স্থিতিশীল রয়েছে। তিনি মনে করেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকলে আগামী দিনে অর্থনীতি আরও এগিয়ে যাবে। টাঙ্গাইলে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল রয়েছে এবং বিভিন্ন সূচক ইতিবাচক প্রবণতায় আছে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অব্যাহত থাকলে বিনিয়োগ, উৎপাদন ও কর্মসংস্থান—সবক্ষেত্রেই আরও উন্নতি হবে। শনিবার (৮ নভেম্বর) দুপুরে টাঙ্গাইলের ওয়াটার গার্ডেন রিসোর্টে আয়োজিত এক আঞ্চলিক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অর্থনীতি স্থিতিশীল, উন্নতির ধারা অব্যাহত
ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন,
“আমরা সাম্প্রতিক সময়ে মুদ্রাস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহ, রেমিট্যান্স এবং রপ্তানির ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতা ফিরে পাচ্ছি। দেশের অর্থনীতি এখন এক ধাপ এগিয়ে আছে।” তিনি আরও বলেন, “রাজনীতি স্থিতিশীল থাকলে অর্থনীতির গতি আরও বৃদ্ধি পাবে, এবং জনগণের ক্রয়ক্ষমতা ও আয়ের স্তর উন্নত হবে।”
তিনি উল্লেখ করেন, সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কার্যকর নীতিমালা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভে স্থিতিশীলতা এসেছে এবং ব্যাংকিং খাতেও আস্থা ফিরছে।
ব্যাংক ও এনজিওর সহযোগিতা নিয়ে নতুন দিকনির্দেশনা
গভর্নর বলেন, “গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কাছে ব্যাংকের অর্থ সহজভাবে পৌঁছে দিতে এনজিও ও মাইক্রোফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।” টাঙ্গাইলে অনুষ্ঠিত এই সেমিনারটি ছিল মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ)-এর উদ্যোগে আয়োজিত এমএফআই-ব্যাংক লিংকেজ বিষয়ক আঞ্চলিক সেমিনার।
তিনি বলেন, “দেশের গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালী করতে ব্যাংকগুলোকে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে হবে। এতে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীও আর্থিক সেবার আওতায় আসবে, যা অর্থনীতির স্থিতিশীলতায় বড় ভূমিকা রাখবে।”
পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার অগ্রগতি
সেমিনারে গভর্নর জানান, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়ায় ইতিবাচক অগ্রগতি হচ্ছে। তিনি বলেন, “বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ইংল্যান্ডে আইনজীবী পাঠানো হয়েছে। তারা বিভিন্ন গ্রুপ অব কোম্পানির ক্লেম প্রতিষ্ঠার কাজ করছেন। সফল হলে শিগগিরই ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে।”
তিনি আশা প্রকাশ করেন, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ পুনরুদ্ধার হলে তা দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার গুরুত্বের ওপর জোর
গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, “অর্থনীতির সফলতার পেছনে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অন্যতম প্রধান উপাদান। বিনিয়োগ, ব্যবসা ও বাণিজ্য সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হতে হলে রাজনৈতিক পরিবেশ শান্তিপূর্ণ থাকা প্রয়োজন।”
তিনি আরও বলেন, “রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে। ফলে অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে এবং কর্মসংস্থান তৈরি হবে।”
গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালী করতে নতুন উদ্যোগ
সেমিনারে আলোচনা হয়, কিভাবে গ্রামীণ অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করা যায়। গভর্নর বলেন, “গ্রামীণ উন্নয়ন দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির মেরুদণ্ড। ব্যাংকগুলো এখন গ্রামের মানুষকে সহজ শর্তে ঋণ দিচ্ছে, যাতে তারা ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করতে পারে।”
তিনি উল্লেখ করেন, “মাইক্রোফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠানগুলো ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো একসঙ্গে কাজ করলে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি আরও বাড়বে, যা জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে সরাসরি ভূমিকা রাখবে।”
বিশেষজ্ঞদের মতামত ও ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা
অনুষ্ঠানে এমআরএর নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শওকত আলী খান এবং ব্র্যাক ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আব্দুল মোমেন।
তারা বলেন, ব্যাংক ও ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগের ফলে দেশের আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা আরও মজবুত হবে। পাশাপাশি আর্থিক অন্তর্ভুক্তির হারও বাড়বে।
অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে গভর্নরের আশাবাদ
গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, “বাংলাদেশের অর্থনীতি আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি বৈচিত্র্যময়। কৃষি, শিল্প ও সেবা খাত মিলেই অর্থনীতির গতি ধরে রেখেছে।” তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, আগামী অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৫ শতাংশের ওপরে থাকবে, যদি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের বক্তব্যে মূল বার্তা ছিল—অর্থনীতি এখন স্থিতিশীল, তবে এই ধারা বজায় রাখতে রাজনৈতিক শান্তি ও আর্থিক শৃঙ্খলা অপরিহার্য। ক্ষুদ্রঋণ, ব্যাংক সংযোগ, এবং অর্থ পাচার প্রতিরোধের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলে আগামী বছরগুলোতে বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছাবে।
এম আর এম – ২১৩২,Signalbd.com



