শিক্ষা

তোমাদের ধর্ম তোমাদের, আমাদের ধর্ম আমাদের: আল-কাফিরুন (০৬)

Advertisement

পবিত্র কুরআনের সূরা আল-কাফিরুন মুসলমানদের জন্য এক সুস্পষ্ট ঘোষণা। এতে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ইসলামের মূল নীতিতে কোনো প্রকার আপসের সুযোগ নেই। “তোমাদের ধর্ম তোমাদের, আর আমার ধর্ম আমার”—এই আয়াত আজও বিশ্ব মুসলিম উম্মাহকে পথ দেখায়।

কুরআনের ১০৯তম সূরা আল-কাফিরুনে আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় রাসুলকে নির্দেশ দেন সত্য অস্বীকারকারীদের সামনে স্পষ্ট ঘোষণা করতে: “তোমাদের ধর্ম তোমাদের, আর আমার ধর্ম আমার।” (আয়াত ৬)। এই ঘোষণা ছিল একদিকে মুসলমানদের পরিচয় সুস্পষ্ট করা, অন্যদিকে মুশরিকদের প্রস্তাবিত আপসচুক্তিকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করা। আজকের যুগেও এই আয়াত আমাদের সামনে ইসলামের অটল অবস্থানকে তুলে ধরে।

সূরা আল-কাফিরুনের প্রেক্ষাপট

মক্কার মুশরিকরা একসময় রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে প্রস্তাব দিয়েছিল, তারা এক বছর আল্লাহর উপাসনা করবে, আর মুসলমানরা এক বছর তাদের দেব-দেবীর পূজা করবে। ইসলামের দাওয়াত থামিয়ে দেওয়ার জন্য এটি ছিল একটি রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কৌশল। সেই আপস প্রস্তাবের জবাবেই অবতীর্ণ হয় সূরা আল-কাফিরুন। এখানে সুস্পষ্ট ঘোষণা দেওয়া হয়—ইসলাম অন্য কোনো ধর্মীয় বিশ্বাস বা রীতি-নীতি গ্রহণ করবে না।

আয়াতের অর্থ ও তাৎপর্য

এই সূরার শেষ আয়াত: “তোমাদের ধর্ম তোমাদের, আর আমার ধর্ম আমার।” (لَكُمْ دِينُكُمْ وَلِيَ دِينِ)। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা বুঝিয়ে দিয়েছেন, ইসলামের নীতি একান্তই আল্লাহর জন্য নির্ধারিত। অন্য কোনো উপাসনা-পদ্ধতি, কুসংস্কার বা শিরককে কখনো গ্রহণ করা যাবে না। ইসলামের পথে আপস নেই, তবে ইসলাম অন্য ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাসকে জোর করে ভাঙতেও বলে না। প্রত্যেককে তার কর্মফলের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।

ধর্মীয় আপসের কোনো সুযোগ নেই

গবেষকরা বলেন, এই সূরা মুসলমানদের জন্য এক ‘সীমারেখা’ টেনে দিয়েছে। এখানে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, অন্য ধর্মাবলম্বীদের সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করা যাবে, তবে তাদের ভুল বিশ্বাসকে মেনে নেওয়া যাবে না। মুসলমানরা আল্লাহর একত্ববাদে অটল থাকবে। মুশরিকদের প্রস্তাবিত আপসের মাধ্যমে ইসলামকে মিশ্রিত করার যে চক্রান্ত ছিল, তা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।

কুরআনের অন্য আয়াতের সাথে সম্পর্ক

কুরআনের অন্য আয়াতেও একই শিক্ষা পাওয়া যায়। সূরা ইউনুস (আয়াত ৪১)-এ বলা হয়েছে: “আমার কাজ আমার জন্য, আর তোমাদের কাজ তোমাদের জন্য।” সূরা আল-কাসাস (আয়াত ৫৫)-এও অনুরূপ ঘোষণা এসেছে। অর্থাৎ ইসলামে সুস্পষ্ট করা হয়েছে—প্রত্যেকে তাদের কাজের ফল ভোগ করবে। এই শিক্ষা কেবল ইসলামকে অটল রাখার জন্যই নয়, বরং মানবতার প্রতি ন্যায্যতার প্রতিফলন।

ইসলামের শান্তিপূর্ণ বার্তা

অনেকে ভুলভাবে মনে করেন, এই আয়াতের মানে হলো—প্রত্যেক ধর্মই সমান গ্রহণযোগ্য। আসলে এর মূল শিক্ষা হলো, ইসলামের সাথে শিরক বা ভ্রান্ত বিশ্বাসের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে ইসলাম কাউকে জোর করে ধর্মান্তরিত করার নির্দেশ দেয় না। বরং প্রজ্ঞা, উত্তম উপদেশ এবং ন্যায়সংগত যুক্তির মাধ্যমে মানুষকে ইসলামের পথে ডাকতে বলা হয়েছে। একইসাথে ইসলামের মূলনীতিতে কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না।

বর্তমান যুগে প্রাসঙ্গিকতা

আজকের বিশ্বে ধর্মীয় সহনশীলতার নামে অনেকেই দাবি করেন, “ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।” কিন্তু সূরা আল-কাফিরুন আমাদের শেখায়—প্রত্যেকের ধর্ম তার নিজস্ব বিষয় হলেও, মুসলমানদের জন্য ইসলামই একমাত্র জীবনব্যবস্থা। মুসলমানদের কাজ হলো আল্লাহর প্রতি সম্পূর্ণ দাসত্ব করা, সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা, তবে অন্য কোনো ধর্মের বিশ্বাস বা আচার গ্রহণ না করা। এই অবস্থান আজকের যুগেও সমান প্রাসঙ্গিক।

বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ

ইসলামী চিন্তাবিদরা বলেন, সূরা আল-কাফিরুন হলো ইসলামের এক প্রকার ঘোষণাপত্র। এতে যেমন অন্য ধর্মকে অস্বীকার করা হয়েছে, তেমনি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহর রাসুল (সা.) কখনো কারো প্রতি জুলুম করেননি, বরং সবার সাথে ন্যায় ও সদাচরণ করেছেন। তবে দ্বীনের প্রশ্নে তিনি কখনো আপস করেননি। তাই এ সূরা আমাদের জন্য দিকনির্দেশনা যে, ঈমান ও ধর্মের বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না।

সূরা আল-কাফিরুন আমাদের জানায়—মুসলমানদের পরিচয় আলাদা, পথ আলাদা। অন্য ধর্মাবলম্বীদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলা ইসলামের শিক্ষা হলেও, তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসে কোনো অংশীদার হওয়া যাবে না। “তোমাদের ধর্ম তোমাদের, আর আমার ধর্ম আমার”—এই আয়াত তাই কেবল একটি ঘোষণা নয়, বরং মুসলমানদের জন্য জীবনব্যবস্থার সীমারেখা। প্রশ্ন থেকে যায়, আজকের মুসলমানরা কি সত্যিই এই আয়াতের শিক্ষা অনুযায়ী নিজেদের দ্বীনের প্রতি অটল থাকতে পারছে?

এম আর এম – ১৬০১,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button