পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের সঙ্গে বাংলাদেশের ধর্ম উপদেষ্টার বৈঠক

বাংলাদেশের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বৃহস্পতিবার ইসলামাবাদে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ এর সঙ্গে এক বিশেষ বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ভবনে। এটি কেবল দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ককে নতুন মাত্রা দেয়নি, বরং ধর্ম, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রে সহযোগিতার সম্ভাবনাকেও আরও দৃঢ় করেছে।
ঐতিহাসিক ও ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্কের পুনঃপ্রকাশ
বৈঠকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ বাংলাদেশের ধর্ম উপদেষ্টা এবং তার নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সম্পর্ক ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ। এই সম্পর্ককে আমরা আগামী দিনে আরও দৃঢ় ও বিস্তৃত করতে চাই।” তিনি আরও আশা প্রকাশ করেন যে, দুই দেশের জনগণ পারস্পরিক সহযোগিতা এবং সান্নিধ্যের মাধ্যমে একে আরও শক্তিশালী করতে সক্ষম হবে।
শাহবাজ শরীফ বৈঠকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ ইউনূস এর সঙ্গে নিউইয়র্ক ও কায়রোতে অনুষ্ঠিত আলোচনার প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন। তিনি ড. ইউনূসের দূরদর্শী নেতৃত্ব, দারিদ্র্য বিমোচন কার্যক্রমে অবদান এবং দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে তার আন্তরিক আগ্রহের প্রশংসা করেন।
প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে পত্র হস্তান্তর
বৈঠকে ধর্ম উপদেষ্টা ড. খালিদ হোসেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ ইউনূসের পক্ষ থেকে লেখা একটি পত্র প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।
পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে, পাকিস্তানের সাম্প্রতিক নজিরবিহীন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের প্রতি গভীর সহানুভূতি রয়েছে। নিহতদের পরিবার এবং ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের পাশে বাংলাদেশ তাদের মানবিক সহায়তা ও সমবেদনা জ্ঞাপন করছে। পত্রে বলা হয়েছে, “এই দুঃসময়ে বাংলাদেশের জনগণ পাকিস্তানের ভ্রাতৃপ্রতিম জনগণের পাশে রয়েছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, পাকিস্তানের জনগণ তাদের ধৈর্য ও সহনশীলতার মাধ্যমে এই সংকট কাটিয়ে উঠবে। প্রয়োজনে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমে বাংলাদেশ সর্বাত্মক সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।”
বিমান সংযোগ ও শিক্ষাবিনিময় সম্প্রসারণ
বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে ঢাকা ও করাচির সরাসরি বিমান চলাচল পুনঃস্থাপনের সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কৃষি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ধর্মতত্ত্ব ও চিকিৎসা খাতের শিক্ষার্থী বিনিময় এবং বৃত্তি প্রদানের বিষয়েও।
পাকিস্তানের ফেডারেল সরকার ইতিমধ্যেই বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য অনার্স থেকে পিএইচডি পর্যায় পর্যন্ত ৫০০টি বৃত্তি অনুমোদন করেছে। এ পদক্ষেপ দুই দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বৈঠকে উপস্থিত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন:
- পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার
- প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ
- ধর্ম বিষয়ক ও আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি মন্ত্রী সরদার ইউসুফ খান
- তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী আতা তারার
- ইসলামাবাদে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. ইকবাল হোসেন খান
- ধর্ম উপদেষ্টার একান্ত সচিব ছাদেক আহমদ
- শরীফ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রভাষক মুফতি জাহিদ হোসেন
এই বৈঠক কেবল কূটনৈতিক সম্পর্কের অংশ নয়, বরং মানবিক সহায়তা, শিক্ষাবিনিময়, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় সহযোগিতার ক্ষেত্রেও নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করেছে।
দুই দেশের সম্পর্কের নতুন দিগন্ত
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্ক ইতিহাসে বহু দিক দিয়ে সংযুক্ত। রাজনৈতিক উত্তরণ, সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা এই সম্পর্ককে এক বিশেষ মাত্রা দিয়েছে। বৈঠকে উভয় পক্ষই যে বিষয়ে জোর দিয়েছেন তা হলো:
- মানবিক সহায়তা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
- শিক্ষা, গবেষণা ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিনিময়
- সরাসরি বিমান সংযোগ ও পর্যটন প্রসার
- কৃষি ও স্বাস্থ্য খাতে যৌথ উদ্যোগ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের বৈঠক দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন মাত্রা দিতে সাহায্য করবে। এছাড়া, সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের পাশে বাংলাদেশি মানবিক সহায়তা দেশের বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্বের প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হবে।
ভবিষ্যৎ সহযোগিতার সম্ভাবনা
বৈঠকে আলোচনা অনুযায়ী, ভবিষ্যতে সম্ভাব্য সহযোগিতা ক্ষেত্রগুলো হলো:
- শিক্ষা ও বৃত্তি: শিক্ষার্থী বিনিময়, গবেষণা সহযোগিতা, অনার্স থেকে পিএইচডি পর্যায়ের বৃত্তি।
- স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা: চিকিৎসা শিক্ষায় শিক্ষার্থী বিনিময়, চিকিৎসা প্রযুক্তি উন্নয়ন।
- কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা: প্রযুক্তি বিনিময়, কৃষি সম্প্রসারণ।
- সংস্কৃতি ও ধর্মীয় সম্পর্ক: ধর্মীয় আলোচনায় সহযোগিতা, আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ।
- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা: প্রাকৃতিক দুর্যোগে দ্রুত মানবিক সহায়তা এবং পুনর্বাসন কার্যক্রমে সহযোগিতা।
বিশ্লেষকদের মতে, বৈঠকটি দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ককে শুধু দৃঢ়ই করবে না, বরং জনগণের জীবনযাত্রা ও শিক্ষার মান উন্নত করার ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তান দুইটি দেশই দক্ষিণ এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ধর্ম, সংস্কৃতি, শিক্ষা এবং মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রে যে সহযোগিতা শুরু হয়েছে তা ভবিষ্যতে আরও দৃঢ় হবে। ধর্ম উপদেষ্টা ড. খালিদ হোসেনের বৈঠক এবং প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ ইউনূসের পত্র প্রধানমন্ত্রীর হাতে হস্তান্তর দুই দেশের মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে।
এই বৈঠক প্রমাণ করে যে, মানবিক সহায়তা, শিক্ষা বিনিময় এবং সাংস্কৃতিক সহযোগিতা কেবল কূটনীতিই নয়, দেশের জনগণের জীবনমান উন্নয়নের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ।
MAH – 12760, Signalbd.com