নির্বাচনে মাঠ প্রশাসনের ব্যবহারের জন্য ৩০০ গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত

সরকার আগামী নির্বাচনে মাঠ প্রশাসনের কার্যকর দায়িত্ব পালনের জন্য ৩০০টি নতুন গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে, যেখানে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
বৈঠকের বিস্তারিত
মঙ্গলবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রশাসনিক কার্যক্রম আরও কার্যকর করতে গাড়ি কেনার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়। বৈঠকে সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন এবং প্রতিটি গাড়ির ব্যবহার, রক্ষণাবেক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা পর্যালোচনা করা হয়।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, “আগামী নির্বাচনে মাঠ প্রশাসনের ব্যবহার নিশ্চিত করতে ৩০০টি গাড়ি কেনা হবে। এছাড়া পূর্বে মন্ত্রিসভা সদস্যদের জন্য ৬০টি গাড়ি কেনার প্রস্তাব ছিল, সেটি বাতিল করা হয়েছে। এর ফলে বাজেটের আরও সঠিক ব্যবহার সম্ভব হবে।”
কেন এই সিদ্ধান্ত প্রয়োজন ছিল
সরকারের উদ্দেশ্য হলো নির্বাচনকালীন প্রশাসনিক কার্যক্রমের গতি বৃদ্ধি করা। নির্বাচন কমিশন এবং স্থানীয় প্রশাসন মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পালনের সময় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও যানবাহনের অভাবে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে।
নির্বাচন চলাকালীন এলাকায় বিভিন্ন প্রকার প্রশাসনিক কাজ যেমন ভোটকেন্দ্র তদারকি, নিরাপত্তা, জনসাধারণের সঙ্গে সমন্বয় এবং জরুরি পরিষেবার জন্য গাড়ির প্রয়োজন হয়। তাই এই নতুন গাড়ি কেনার মাধ্যমে প্রশাসন আরও দ্রুত ও কার্যকরভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে।
বাজেট ও ক্রয় প্রক্রিয়া
সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ক্রয় প্রক্রিয়ার খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। গাড়ির ধরন, প্রযুক্তি সুবিধা এবং রক্ষণাবেক্ষণের খরচ সহ বাজেটের অন্যান্য বিষয়ও তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছে।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, গাড়িগুলো শুধুমাত্র প্রশাসনিক কাজে ব্যবহৃত হবে এবং নির্বাচনের আগে যথাযথভাবে বিতরণ করা হবে। এছাড়া ব্যবহারের নিয়মাবলী এবং গাড়ি পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের তালিকাও প্রস্তুত করা হচ্ছে।
পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতা ও প্রভাব
পূর্ববর্তী নির্বাচনে প্রশাসনিক কাজে যানবাহনের সীমিত ব্যবহারের কারণে বেশ কিছু প্রশাসনিক বিলম্ব এবং সমস্যা দেখা দিয়েছিল। নির্বাচনের সময় কেন্দ্রগুলোর তদারকি, ভোটার সেবা, এবং জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় যানবাহনের অভাবে কার্যক্রমে প্রভাব পড়েছে।
এই নতুন গাড়ি কেনার মাধ্যমে সেই অভাব পূরণ হবে এবং প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড আরও সুসংগঠিত হবে। বিশেষ করে দুর্গম বা দূরবর্তী এলাকায় প্রশাসনিক কার্যক্রমে গাড়ি সরবরাহ নিশ্চিত করবে।
বিশেষজ্ঞ মতামত
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নির্বাচনের সময় প্রশাসনের দ্রুত গতিশীলতা এবং কার্যকর নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। গাড়ি সরবরাহের ফলে ভোটারদের সঙ্গে প্রশাসনের যোগাযোগ আরও শক্তিশালী হবে এবং ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাজেটের যথাযথ ব্যবহার এবং প্রশাসনিক কার্যকারিতা বৃদ্ধি এই সিদ্ধান্তের মূল উদ্দেশ্য। তবে গাড়ি ক্রয় এবং রক্ষণাবেক্ষণের খরচ সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে এটি সরকারি অর্থ ব্যয় বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।
সম্ভাব্য বিতর্ক
এ ধরনের বড় ক্রয় সাধারণত কিছু বিতর্কও সৃষ্টি করে। রাজনৈতিক ও সাধারণ জনসাধারণের মধ্যে প্রশ্ন উঠতে পারে যে এই গাড়ি ক্রয় কতটা প্রয়োজনীয় এবং এটি নির্বাচনের সময় প্রশাসনিক ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে কতটা কার্যকর হবে।
সরকারি পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে এই বিতর্ক প্রতিহত করতে বলা হয়েছে যে গাড়িগুলো শুধুমাত্র প্রশাসনিক কাজে ব্যবহার করা হবে, কোন প্রকার রাজনৈতিক কাজে নয়।
সংক্ষিপ্তসার
আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসাবে ৩০০টি গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত প্রশাসনিক কার্যক্রমকে আরও দ্রুত, কার্যকর এবং স্বচ্ছ করতে সহায়ক হবে। তবে বাজেট এবং ব্যবহার সংক্রান্ত বিষয় যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই উদ্যোগ সফল হলে নির্বাচনকালীন প্রশাসন আরও শক্তিশালী ও দক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে।
এম আর এম – ১২৬৪,Signalbd.com