বাংলাদেশ

নিরাপদে দেশে ফিরেছেন ইরানে আটকা পড়া ২৮ বাংলাদেশি

আজ সকালে সাড়ে সাতটার দিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপদে দেশে ফিরে আসেন ২৮ জন বাংলাদেশি যারা গত ইসরায়েল ও ইরানের সংঘর্ষের সময় তেহরানে আটকা পড়েছিলেন। যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে তারা দীর্ঘদিন বিদেশে অসুবিধার মধ্যে ছিলেন, তবে অবশেষে পাকিস্তান ও দুবাই হয়ে নিজেদের পরিবার নিয়ে স্বজনের মাঝে ফিরে আসতে পেরেছেন।

ইরানে আটকা পড়া বাংলাদেশিরা

গত ৬ জুন গুলশানের বাসিন্দা সালেক আহমেদ তার স্ত্রী ও দুই সন্তানের সঙ্গে চিকিৎসা ও ভ্রমণের উদ্দেশ্যে ইরানের রাজধানী তেহরানে গিয়েছিলেন। কিন্তু পরিকল্পনা মোতাবেক ১৩ জুন দেশে ফিরতে যাওয়ার সময় ইসরায়েলি হামলার ফলে শুরু হয় ব্যাপক সংঘাত। তেহরানে আটকা পড়ে যান তারা।

সালেক আহমেদ জানান, “হঠাৎ যুদ্ধ পরিস্থিতি শুরু হলে আমাদের চলাচল অনেকটাই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। পরিবার নিয়ে আমরা অনেক ভয়ের মধ্যে ছিলাম। সৌভাগ্য আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশের তেহরান দূতাবাস আমাদের সাহায্যের জন্য সবসময় পাশে ছিল।”

কষ্টের দিন কাটিয়ে ফিরে আসা

ইরানে আটকা পড়া ২৮ জন বাংলাদেশি বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাজে সেখানে গিয়েছিলেন। কেউ চিকিৎসা, কেউ ব্যবসা কিংবা ভ্রমণকেই সামনে রেখে গিয়েছিলেন। তারা যুদ্ধকালীন তেহরানে ভয়ঙ্কর মুহূর্ত পার করেছেন। কিন্তু এখন নিজেদের দেশ এবং পরিবারকে ফিরে পেয়ে তারা অনেকটাই স্বস্তি পেয়েছেন।

তাদের সঙ্গে দেখা করতে বিমানবন্দরে এসেছিলেন আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুরা। আবেগ আপ্লুত হয়ে তারা নিজেদের প্রিয়জনদের হাতে ধরে কেঁদেছেন, আনন্দের ঢেউ বইছিল পুরো বিমানবন্দরে।

বাংলাদেশের তৎপরতা ও কূটনৈতিক উদ্যোগ

বাংলাদেশ সরকার ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পাকিস্তান ও দুবাই হয়ে নিরাপদে দেশে ফেরার পথে তাদের সহযোগিতা করা হয়েছে। ইরানের সঙ্গে যোগাযোগ ও পরিস্থিতি বুঝে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সরকারের কূটনৈতিক সহায়তায় এবং তেহরান দূতাবাসের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে তারা দেশে ফিরে এসেছেন। এই তৎপরতার জন্য অনেকেই সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধের প্রেক্ষাপট

১৩ জুন থেকে ইসরায়েল ইরানের সামরিক, পারমাণবিক এবং বেসামরিক স্থাপনায় ব্যাপক বিমান হামলা চালায়। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবির্তি পর্যন্ত পরিস্থিতি একেবারে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা হয়।

এই যুদ্ধবিরতির মধ্যেই ইরানে আটকা পড়া বাংলাদেশিরা নিরাপদে ফিরেছেন। যুদ্ধের ভয়াবহ স্মৃতি তারা দেশে ফিরে বিস্তারিত জানিয়েছেন।

বাংলাদেশিদের যুদ্ধকালীন অভিজ্ঞতা

আটকা পড়া বাংলাদেশিরা যুদ্ধের সময় নানা ঝুঁকি এবং আতঙ্কের মধ্যে ছিলেন। রাত্রে বোমাবর্ষণ, সামরিক গাড়ি চলাচল এবং স্থাপনা ধ্বংসের দৃশ্য তারা প্রত্যক্ষ করেছেন। এমন পরিস্থিতিতে পরিবারের সদস্যদের সুরক্ষায় তাদের সাহস ও ধৈর্য প্রশংসনীয়।

সালেক আহমেদ বলেন, “আমাদের মধ্যে অনেকেই দারুণ মানসিক ও শারীরিক চাপের মধ্যে ছিলাম। তবে আমরা একসঙ্গে থাকার কারণে সকল ঝুঁকি মোকাবিলা করতে পেরেছি। এখন নিরাপদে ফিরে আসাটা সবচেয়ে বড় শান্তি।”

পুনর্মিলন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

পরিবারের সঙ্গে ফিরে এসে তারা এখন নিজেদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা করছেন। কিছু বাংলাদেশি এখনই আবার ইরানে যাওয়ার কথা ভাবছেন না, তবে অনেকে বলছেন, ইরানের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই আবার যেতে চান।

তারা সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন এবং আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে ভবিষ্যতেও প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিরাপত্তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সংক্ষিপ্ত তথ্য

  • ইরানে আটকা পড়া বাংলাদেশির সংখ্যা: ২৮ জন
  • ফেরার পথ: ইরান → পাকিস্তান → দুবাই → বাংলাদেশ
  • আটকের সময়কাল: ৬ জুন থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত
  • যুদ্ধ শুরু: ১৩ জুন, ইসরায়েল-ইরান বিমান হামলা
  • যুদ্ধবিরতি: মার্কিন মধ্যস্থতায় প্রবর্তিত

ইরানে আটকা পড়া বাংলাদেশিদের নিরাপদ দেশে ফেরার খবর প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য এক প্রেরণার দৃষ্টান্ত। এটি দেখায়, সংকটময় সময়ে সরকারের দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ প্রবাসীদের জীবন রক্ষায় কতটা গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি, যুদ্ধ ও সঙ্কটকালীন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশিদের মানসিক সহায়তা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজনীয়।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button