নতুন বাংলাদেশ গঠনে ফ্যাসিবাদ বিলোপের প্রতিশ্রুতি

জুলাই আন্দোলনের চেতনায় নতুন বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার প্রধান উপদেষ্টার
সাম্প্রতিককালে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে ফ্যাসিবাদ বিলোপ ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সুসংহত করার বিষয়টি। এই মর্মবাণীকে সামনে রেখে সরকার তথা অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এক সর্বজনীন বার্তা দিয়েছেন, যেখানে তিনি স্পষ্টতই জানান, ফ্যাসিবাদ ধ্বংস করে নতুন বাংলাদেশ গড়তে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
জুলাই আন্দোলনের ইতিহাস ও তাৎপর্য
১৬ বছর আগে দেশের ইতিহাসের এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় ছিল জুলাই আন্দোলন। একটি বঞ্চিত জাতি যখন স্বৈরাচার, অত্যাচার ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়িয়েছিল, তখন জন্ম হয়েছিল নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নের। ওই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল একটি গণতান্ত্রিক, মুক্ত ও সমতার ভিত্তিতে গঠিত রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।
এই আন্দোলনের মর্মবাণী ছিল ফ্যাসিবাদ বিলোপ করে নতুন বাংলাদেশ গঠন করা, যেখানে আর কোনো স্বৈরাচারী শক্তি মাথা চাড়া দিতে পারবে না। ১৬ বছর পরেও এই বার্তাকে শক্তভাবে ধরে রেখে বর্তমান সরকার এগিয়ে যাচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টার উদ্বোধনী ভাষণ
সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে জুলাই আন্দোলনের স্মরণে মাসব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন,
“আমরা ১৬ বছর আগে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলাম। তার তাৎক্ষণিক ফলাফল পাওয়া গেছে, তবে আসল লক্ষ্য ছিল নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থা বিনির্মাণের বড় স্বপ্ন। আমরা প্রতি বছর এই সময়টা উদযাপন করব, যেন ভবিষ্যতে এই ধরনের সংগ্রামের জন্য আর ১৬ বছর অপেক্ষা করতে না হয়। স্বৈরাচারের কোনো চিহ্ন দেখা মাত্রই আমরা তা বিনাশ করব।”
তিনি আরও যোগ করেন, “এই কর্মসূচি শুধু এক সূচনা নয়, এটি একটি নতুন শপথ। আমরা চাই দেশের সব শ্রেণি ও পেশার মানুষ আবারও ঐক্যবদ্ধ হোক, যেন এই জুলাই মাস গণতান্ত্রিক অধিকার ও রক্তের ত্যাগের স্মৃতিকে নতুন জীবনে নিয়ে আসে।”
দেশের গণতন্ত্রের রক্ষা ও জনগণের সচেতনতা
প্রধান উপদেষ্টা জনসাধারণকে গণতান্ত্রিক অধিকার সম্পর্কে আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি উল্লেখ করেন, রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা এবং দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ বোধ করা আজকের সবচেয়ে জরুরি বিষয়। “আমাদের সামনের পথ কঠিন, তবে সম্ভাবনাও অনেক বড়। ইতিহাস প্রমাণ করে, যখন জনগণ জেগে ওঠে, তখন কোনো শক্তি তাদের রুখতে পারে না,” তিনি বলেন।
জুলাইকে গণজাগরণ ও ঐক্যের মাসে পরিণত করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান ড. ইউনূস।
জুলাই আন্দোলনের গুরুত্ব এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
জুলাই আন্দোলন শুধু একটি ঐতিহাসিক ঘটনা নয়, এটি একটি চেতনাবোধ, যা দেশের ভবিষ্যত নির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। সরকারও তাই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ফ্যাসিবাদের শেকড় কেটে ফেলার মাধ্যমে সুশৃঙ্খল, শোষণমুক্ত ও শোষিত মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার জন্য।
সরকারি পরিকল্পনায় রয়েছে –
- গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ শক্তিশালী করা
- দেশের প্রতিটি নাগরিকের ভোটাধিকার রক্ষা করা
- শোষণমুক্ত সমাজ গড়ার লক্ষ্যে জনগণের ক্ষমতায়ন
- রাজনৈতিক সহিষ্ণুতা ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধি
- সামাজিক সাম্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা
সামগ্রিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
বর্তমান বাংলাদেশ একটি সংবিধান ভিত্তিক গণতন্ত্রে পরিণত হচ্ছে। যেখানে প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হচ্ছে। সরকারের লক্ষ্য এই গণতন্ত্রকে আরও গভীর ও স্থায়ী করে তোলা।
ফ্যাসিবাদের যে ছোবল দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করেছিল, তাকে সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করার মাধ্যমে সরকারের যে পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে তা ধীরে ধীরে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
জনগণের প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষণ
দেশের নানা রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাধারণ মানুষ প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যকে যথাযথ মূল্যায়ন করেছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, “এ ধরনের শক্তিশালী ও স্পষ্ট বক্তব্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
অন্যদিকে সাধারণ মানুষ মনে করছে, “যদি সত্যিই ফ্যাসিবাদ নির্মূল হয়, তাহলে দেশের উন্নয়ন ও শান্তির পরিবেশ নিশ্চিত হবে। সবাই মিলেমিশে কাজ করলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ একটি আধুনিক ও সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্রে পরিণত হবে।”
আগামী কর্মসূচি ও ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা
আগামী মাসব্যাপী কর্মসূচিতে থাকবে বিভিন্ন র্যালি, সেমিনার, আলোচনাসভা ও সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রম। লক্ষ্য থাকবে জনগণের মধ্যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও দায়িত্ববোধ প্রতিষ্ঠা করা।
সরকার এ বার্তাও দিয়েছে যে, কোনোভাবেই স্বৈরাচারী মনোভাবের পুনরূত্থান হবে না এবং যারা দেশের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিতে চায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গঠনের ক্ষেত্রে জুলাই আন্দোলনের বার্তা আজও প্রাসঙ্গিক। ফ্যাসিবাদ বিলোপ করে নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। দেশের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা ও জনসাধারণের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি উন্নত, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে বিশ্বদরবারে নিজ স্থান প্রতিষ্ঠা করবে।