অর্থনীতি

চামড়া সংরক্ষণে ৩০ হাজার টন লবণ বিনামূল্যে দেবে সরকার: বাণিজ্য উপদেষ্টা 

কোরবানির চামড়ার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে এবং এতিমদের হক রক্ষায় সরকার বিনামূল্যে ৩০ হাজার টন লবণ বিতরণ করবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা ও কোরবানি সম্পর্কিত বিষয়াদির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ কমিটির আহ্বায়ক শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি বুধবার দুপুরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে কোরবানি সম্পর্কিত বিষয়াদির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ কমিটির প্রথম সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

শেখ বশিরউদ্দীন জোর দিয়ে বলেন, “কোরবানির চামড়ার ওপর এতিমের হক রয়েছে। এর সঠিক মূল্য নিশ্চিত করতে আমরা উচ্চ পর্যায়ের কমিটির বৈঠক করেছি। যেখানে বড় সিদ্ধান্ত হলো, মাদরাসা ও এতিম খানায় ৩০ হাজার টন লবণ দেবে সরকার। প্রতিষ্ঠানগুলো যতক্ষণ পর্যন্ত চামড়ার ন্যায্য দাম না পাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সংরক্ষণ করবে।”

তিনি আরও জানান যে, মাদরাসা ও এতিমখানায় চামড়া ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এছাড়া একটি নির্দেশনামূলক ভিডিও তৈরি করে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য সেগুলো ব্যাপকভাবে প্রচার করা হবে। বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, “আগে সারাদেশে একসঙ্গে কাঁচা চামড়া আসতো। চামড়া পচে যাবে সে কারণে দাম না পেয়ে বাধ্য হয়ে কম দামে বিক্রি করতে হয়েছে। এবার সেটা হবে না।”

তিনি উল্লেখ করেন, প্রধান উপদেষ্টা চান গরিবের হক চামড়ার যেন ন্যায্যমূল্য পায়। বৃহস্পতিবার (২২ মে) আবারো বৈঠকে বসবে কমিটি এবং তখন চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হবে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, এ বছর চামড়ার দাম গত বছর থেকে বেশি হবে।

বৈঠকে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোও আলোচনা করা হয়। শেখ বশিরউদ্দীন জানান, “নির্ধারিত পশুর হাটের বাইরে পশু কেনা বেচা যেন না হয়, সে বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। হাসিল ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে আনার বিষয়েও কথা হয়েছে। এছাড়া সরবরাহ ও চাহিদা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি আমরা।”

তিনি আরও বলেন, “যদি স্থানীয় পর্যায়ে উপযুক্ত দাম না পাওয়া যায়, তাহলে প্রয়োজনে আমরা সরাসরি কাঁচা চামড়া রফতানি করব।” তবে তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, স্থানীয় পর্যায়েই উপযুক্ত দাম পাওয়া যাবে।

সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, “সুষ্ঠু বাজার, পরিবহন ও দামে সঠিক বাস্তবায়ন হবে এবার। প্রাণীর প্রতি যেন কোনো নৃশংসতা না হয় এবং কোনো ধরনের ক্ষতিকারক ওষুধ ব্যবহার করে প্রাণীকে মোটাতাজা না করা হয় সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি।”

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়ন বিষয়ক) লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব:) আব্দুল হাফিজ বলেন, “পরিবহণ কেন্দ্রিক চাঁদাবাজি কমিয়ে আনতে পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ কাজ করবে। এছাড়া সেনাবাহিনীর সদস্যরা জনগণকে সার্বিক সহায়তায় সচেষ্ট থাকবে।” তিনি জানান, কেন্দ্রীয় সেল গঠন করা হবে এবং হটলাইন নাম্বার ও ৯৯৯ এ ফোন করেও অভিযোগ জানালে পুলিশ ও সেনাবাহিনী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে। তিনি ৯৯৯ ও হটলাইন নাম্বারে ফোন করার সুফল সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান।

উল্লেখ্য, এ বছর কোরবানির চামড়ার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতসহ কোরবানির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় কমিটি করে প্রজ্ঞাপন জারি হয় গত মঙ্গলবার (২০ মে)। উচ্চ পর্যায়ের এই কমিটিতে ১৭ জন সদস্য রয়েছেন, যার আহ্বায়ক বাণিজ্য উপদেষ্টা। কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন- স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, শিল্প উপদেষ্টা, সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা, ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা, তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়), বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব, শিল্প সচিব, এনজিও প্রতিনিধি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও বেসরকারি প্রতিনিধি (সরকার মনোনীত)। কমিটিতে সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন বাণিজ্য সচিব।

এই কমিটির প্রধান দায়িত্ব হলো সঠিকভাবে চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণ এবং এজন্য পর্যাপ্ত লবণের সরবরাহ নিশ্চিত করার প্রক্রিয়া নির্ধারণ; চামড়ার উপযুক্ত মূল্য নিশ্চিত করা এবং কোরবানির সাথে সম্পর্কিত বিষয়াদির সুষ্ঠু ও দক্ষ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। এছাড়া চামড়ার বিক্রয়লব্ধ অর্থ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলির স্বার্থ সুরক্ষার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান; কোরবানির হাট, পশু পরিবহন এবং পরিবহনের সময় নিষ্ঠুরতা প্রতিরোধের বিষয়ে নির্দেশনা জারি এবং চামড়া শিল্প নগরী, সাভারসহ সারা দেশে দ্রুত ও যথাযথভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করবে এ কমিটি।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button