সোনার দাম কমে ভরি এখন ১ লাখ ৭০ হাজার ৭৬১ টাকা

দেশের সোনার বাজারে দীর্ঘদিনের উর্ধ্বগতির পর অবশেষে বড় আকারে দরপতন ঘটেছে। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) এর নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের হলমার্ক করা এক ভরি সোনার দাম ১ হাজার ৫০ টাকা কমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার ৭৬১ টাকা। নতুন এই মূল্য আজ ১২ মে, রবিবার থেকে সারা দেশে কার্যকর হয়েছে।
বাজুসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে দরপতনের প্রভাব এবং দেশীয় তেজাবি সোনার দাম হ্রাস পাওয়ার কারণে দাম পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। সর্বশেষ ৮ মে দাম কমানোর সিদ্ধান্তের পর এবার আবারও নতুন করে মূল্য হ্রাস এনে স্বর্ণ ক্রেতাদের মাঝে কিছুটা স্বস্তির আবহ তৈরি হয়েছে।
সোনার নতুন দাম (১২ মে ২০২৫ থেকে কার্যকর)
সোনার ক্যারেট | নতুন দাম (ভরি প্রতি) | পূর্বের দাম | কমেছে |
---|---|---|---|
২২ ক্যারেট | ১,৭০,৭৬১ টাকা | ১,৭১,৮১১ টাকা | ১,০৫০ টাকা |
২১ ক্যারেট | ১,৬৩,০০৪ টাকা | ১,৬৩,৯৯৬ টাকা | ৯৯২ টাকা |
১৮ ক্যারেট | ১,৩৯,৭১১ টাকা | ১,৪০,৫৭৫ টাকা | ৮৬৪ টাকা |
সনাতন পদ্ধতি | ১,১৫,৫৩২ টাকা | ১,১৬,২৬৭ টাকা | ৭৩৫ টাকা |
উল্লেখ্য, প্রতি ভরি সোনা বলতে ১১.৬৬৪ গ্রাম বোঝানো হয়।
সম্প্রতি দাম কত ছিল? কোথায় ছিল সর্বোচ্চ?
গত ২৩ এপ্রিল দেশে সোনার দাম এক লাফে ভরিতে ৫,৩৪২ টাকা বেড়ে গিয়ে রেকর্ড গড়েছিল। তখন ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম হয় ১ লাখ ৭৭ হাজার ৮৮৮ টাকা, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দাম হিসেবে বিবেচিত।
পরবর্তীতে ৮ মে প্রথমবারের মতো দাম কমানো হয়, তখন দাম নামিয়ে আনা হয় ১ লাখ ৭১ হাজার ৮১১ টাকায়। এখন তা আরও কমে এসেছে ১ লাখ ৭০ হাজার ৭৬১ টাকায়।
এ ধারাবাহিকতায় বাজারে কিছুটা স্থিতিশীলতা ও ক্রেতাদের আশাবাদ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব ও বিশ্লেষণ
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বৈশ্বিক বাজারে সাম্প্রতিক সময়ে সোনার দামে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার অপরিবর্তিত রাখা, মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হওয়া এবং মার্কিন ডলারের তুলনামূলক স্থিতিশীল অবস্থান—এসব কারণে আন্তর্জাতিক স্বর্ণবাজারে দরপতন হয়েছে।
লন্ডন বুলিয়ন মার্কেট অ্যাসোসিয়েশন (LBMA) অনুযায়ী, গত সপ্তাহে প্রতি আউন্স সোনার দাম ছিল গড়ে ২,৩৪০ ডলার, যা এপ্রিলের তুলনায় প্রায় ৩০-৪০ ডলার কম।
ক্রেতাদের প্রতিক্রিয়া: ‘এখনই সোনার গয়না কেনার সময়’
রাজধানীর নিউমার্কেটের স্বর্ণ ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দাম হ্রাসের খবরে গয়নার দোকানে ক্রেতাদের আগমন কিছুটা বেড়েছে। অনেকে মনে করছেন, এখনই গয়না কেনার সঠিক সময়, কারণ ঈদ, বিয়ে ও অন্যান্য উৎসবকে ঘিরে ভবিষ্যতে আবারও দাম বাড়তে পারে।
মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা শারমিন আক্তার বলেন,
“গত মাসে গয়না দেখেছিলাম, তখন দাম বেশি ছিল। এখন দাম কিছুটা কমেছে দেখে কিনে নিচ্ছি। সামনে আবার বেড়ে গেলে আফসোস থাকবে না।”
বাজুসের বিবৃতি: মূল্য নির্ধারণের পেছনে কারণ কী?
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়,
“বাজারে তেজাবি সোনার দাম কমে যাওয়ায় নতুন করে মূল্য সমন্বয় করা হয়েছে। এছাড়া বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামে নিম্নগতি দেখা যাচ্ছে, যার প্রভাব দেশীয় বাজারেও পড়েছে।”
তবে তারা ক্রেতাদের উদ্দেশ্যে একটি সতর্কবার্তাও দিয়েছে,
“স্বর্ণের গয়না কেনার সময় অবশ্যই হলমার্কযুক্ত এবং ভ্যাট চালানসহ পণ্য কিনতে হবে।”
রুপার দাম অপরিবর্তিত: একই দামে বিক্রি চলছে
সোনার দামে পরিবর্তন এলেও রুপার দামে কোনো পরিবর্তন হয়নি। বাজুসের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে ভরি প্রতি রুপার দাম নিচের মতো:
রুপার মান | দাম (ভরি প্রতি) |
---|---|
২২ ক্যারেট | ২,৮১১ টাকা |
২১ ক্যারেট | ২,৬৮৩ টাকা |
১৮ ক্যারেট | ২,২৯৮ টাকা |
সনাতন পদ্ধতি | ১,৭২৬ টাকা |
এছাড়া সব ধরনের রুপা ও সোনার গয়নার দামে সরকার নির্ধারিত ৫% ভ্যাট এবং বাজুস নির্ধারিত ন্যূনতম ৬% মজুরি যুক্ত হবে। তবে গয়নার মান ও নকশাভেদে মজুরি আরও বাড়তে বা কমতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত: ভবিষ্যৎ বাজার কোথায় যাচ্ছে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. নাসরিন হক বলেন,
“সোনার দাম মূলত বিশ্ববাজার ও ডলারের দামের উপর নির্ভর করে। বাংলাদেশে আমদানিকৃত কাঁচামালের উপর ভর করে দাম ওঠানামা করে। এখনকার দরপতন সাময়িক হলেও এটি বাজারে ক্রেতাদের অংশগ্রহণ বাড়াবে।”
স্বর্ণ ব্যবসায়ী মালিক সমিতি মনে করে, রমজান ও ঈদ পরবর্তী সময় হওয়ায় এখন বাজারে তুলনামূলক চাহিদা কম। এতে দাম কমানো সম্ভব হয়েছে। তবে জুন-জুলাইয়ে বিয়ের মৌসুমে আবার দাম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।