অনিবন্ধিত ও মেয়াদোত্তীর্ণ ট্রাভেল এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সরকার

বাংলাদেশে অনিবন্ধিত ও মেয়াদোত্তীর্ণ ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টসহ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আজ বুধবার (৭ মে) বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, দেশের অভ্যন্তরে যারা ট্রাভেল এজেন্সি পরিচালনা করছেন কিন্তু এখনও সরকার নির্ধারিত নিবন্ধন গ্রহণ করেননি বা যারা পুরনো সনদের নবায়ন করেননি, তাদের কার্যক্রম এখন থেকে অবৈধ হিসেবে গণ্য করা হবে এবং সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অবৈধ এজেন্সির বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ট্রাভেল ব্যবসা পরিচালনার জন্য নিবন্ধন সনদ গ্রহণ বাধ্যতামূলক। কেউ যদি এই নিয়ম লঙ্ঘন করেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩, সংশোধিত আইন, ২০২১ এবং বিধিমালা, ২০২২ অনুযায়ী মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে এবং প্রয়োজনে শাস্তিমূলক পদক্ষেপও নেওয়া হবে।
মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, “নিবন্ধন ছাড়া ট্রাভেল এজেন্সি পরিচালনা করাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে। নিয়মবহির্ভূত এজেন্সিগুলো গ্রাহক ঠকানো, বিদেশযাত্রার ক্ষেত্রে জালিয়াতি বা প্রতারণার সঙ্গে জড়িত হতে পারে, যা রাষ্ট্রীয় ভাবমূর্তির জন্যও হুমকিস্বরূপ।”
নিবন্ধন ও নবায়নের জন্য জরুরি নির্দেশনা
এ অবস্থায় যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এখনো নিবন্ধনের বাইরে রয়েছে, তাদের দ্রুত ট্রাভেল এজেন্সি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (TAMS)-এর মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
একইসঙ্গে যেসব এজেন্সির সনদ ইতিমধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে, তাদেরকেও দ্রুত সনদ নবায়নের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়ে আর কোনো ধরনের শিথিলতা গ্রহণযোগ্য হবে না বলে সরকারের পক্ষ থেকে সতর্ক করা হয়েছে।
কেন এই ব্যবস্থা জরুরি?
গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের ট্রাভেল এজেন্সি খাতে অনিয়ম ও প্রতারণার অভিযোগ বেড়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান সরকার অনুমোদন ছাড়াই গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে বিদেশ ভ্রমণ বা ওয়ার্ক ভিসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতারণা করেছে। এতে সাধারণ মানুষ যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তেমনি দেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই খাতকে শৃঙ্খলার আওতায় আনা গেলে গ্রাহকসেবা মানসম্মত হবে এবং প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড রোধ করা সম্ভব হবে। একইসঙ্গে ট্রাভেল ব্যবসা রাষ্ট্রীয় পর্যবেক্ষণে আসায় সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়বে।
কী বলছেন এজেন্সি সংশ্লিষ্টরা?
বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি অ্যাসোসিয়েশন (ATAB)-এর এক সদস্য বলেন, “সরকারি নিবন্ধন ও নবায়নের বিষয়টি সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তবে অনেক ছোট এজেন্সি এখনো এই বিষয়গুলো গুরুত্ব দেয় না। সরকারের এই পদক্ষেপ খাতটিকে পেশাদার পর্যায়ে নিয়ে যেতে সহায়ক হবে।”
আরেকজন অভিজ্ঞ ট্রাভেল অপারেটর বলেন, “ভুয়া ও অনিবন্ধিত ট্রাভেল এজেন্সির কারণে আমরা যারা নিয়ম মেনে ব্যবসা করছি, তারাও প্রশ্নবিদ্ধ হই। এখন যদি সবার নিবন্ধন বাধ্যতামূলক হয় এবং নজরদারি জোরদার হয়, তাহলে সৎ উদ্যোক্তারা লাভবান হবেন।”
ভোক্তা অধিকার রক্ষায় সরকারের পদক্ষেপ
ট্রাভেল ব্যবসার সঙ্গে লাখো গ্রাহকের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক রয়েছে। যারা বিদেশ গমন, ওমরাহ্, হজ্ব, উচ্চশিক্ষা কিংবা ভ্রমণের জন্য এসব এজেন্সির ওপর নির্ভর করেন। এ ধরনের সংবেদনশীল খাতে ভুয়া প্রতিষ্ঠানের সক্রিয়তা সাধারণ মানুষের জীবন ও স্বপ্নের সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট।
এই বাস্তবতা বিবেচনায় সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, “ভোক্তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হলে আগে ব্যবসায়ীদের নৈতিকভাবে বাধ্য করতে হবে নিয়ম মানতে।”
ট্রাভেল এজেন্সি খাতে দীর্ঘদিনের অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা দূর করতে সরকারের এ সিদ্ধান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। যারা এখনো নিবন্ধন বা নবায়ন করেনি, তাদের দ্রুত এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার মাধ্যমে বৈধতা অর্জন করা জরুরি। অন্যথায় মোবাইল কোর্ট ও আইনানুগ পদক্ষেপ এড়িয়ে চলা সম্ভব হবে না।