বিশ্ব

যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে নির্মিত সিনেমার উপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের

Advertisement

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন যে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে নির্মিত সমস্ত সিনেমার উপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। এই পদক্ষেপকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্র শিল্প রক্ষার অংশ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ট্রাম্প দাবি করেছেন, বিদেশি প্রযোজনা মার্কিন চলচ্চিত্র শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং স্থানীয় প্রযোজকদের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে দিচ্ছে।

ট্রাম্পের ঘোষণা ও তার যুক্তি

সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ট্রুথ সোশ্যাল-এ দেওয়া এক পোস্টে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, “আমাদের চলচ্চিত্র শিল্প বিদেশি দেশগুলোর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তারা আমাদের শিল্পকে ধ্বংস করছে।” তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে নির্মিত প্রতিটি সিনেমার উপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। ট্রাম্প আরও দাবি করেন যে ক্যালিফোর্নিয়া বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যেখানে হলিউড দীর্ঘদিন ধরে চলচ্চিত্র নির্মাণের বৈশ্বিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।

ট্রাম্পের আগের অবস্থান

এটি প্রথমবার নয় যে ট্রাম্প বিদেশি সিনেমার উপর শুল্ক আরোপের হুমকি দিলেন। এর আগে, চলতি বছরের মে মাসে তিনি একই ধরনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তখন তার যুক্তি ছিল, বিভিন্ন দেশ চলচ্চিত্র নির্মাণে কর ছাড় এবং প্রণোদনা দিয়ে বিদেশি প্রযোজকদের আকৃষ্ট করছে। এতে করে মার্কিন চলচ্চিত্র শিল্প প্রতিযোগিতায় দুর্বল হয়ে পড়ছে। তবে এবার তিনি শুধু হুমকি নয়, বরং সরাসরি কার্যকর করার ঘোষণা দিয়েছেন।

শুল্ক আরোপের বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব

ট্রাম্পের ঘোষণার পরপরই প্রশ্ন উঠেছে, তিনি কোন আইনি কাঠামোর মাধ্যমে এই শুল্ক আরোপ করবেন। মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী, শুল্ক আরোপের ক্ষমতা কংগ্রেসের হাতে থাকলেও প্রেসিডেন্ট জরুরি অবস্থায় কিছু সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তবে চলচ্চিত্রের মতো সৃজনশীল সেবার ক্ষেত্রে এ ধরনের শুল্ক আরোপ কার্যকর করা কতটা সম্ভব, তা এখনও স্পষ্ট নয়। এ বিষয়ে হোয়াইট হাউস তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ

ট্রাম্পের ঘোষণায় চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কোম্পানি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ওয়ার্নার ব্রাদার্স ডিসকভারি, প্যারামাউন্ট, নেটফ্লিক্স বা অন্যান্য স্টুডিও এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না জানালেও বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি হলে বৈশ্বিক চলচ্চিত্র বাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে। কারণ, বর্তমানে মার্কিন সিনেমা বাজার বিদেশি চলচ্চিত্রের জন্যও অন্যতম বড় আয়ের উৎস।

সম্ভাব্য প্রভাব যুক্তরাষ্ট্র ও বৈশ্বিক বাজারে

যদি এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়, তবে এর প্রভাব বহুমুখী হতে পারে। একদিকে মার্কিন দর্শকদের বিদেশি সিনেমা দেখতে হলে দ্বিগুণ মূল্য দিতে হতে পারে। অন্যদিকে, হলিউডের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করা বিদেশি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ ছাড়া, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং সৃজনশীল সহযোগিতা ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্র বাজার আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে।

বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষকদের মতামত

আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চলচ্চিত্রের মতো সেবার উপর শুল্ক আরোপ নজিরবিহীন। সাধারণত শুল্ক আরোপ করা হয় কাঁচামাল বা পণ্যের উপর। ফলে এটি বাস্তবায়নের আইনি জটিলতা ছাড়াও অর্থনৈতিক প্রভাব পড়তে পারে। এক বিশ্লেষক বলেন, “যদি এই শুল্ক কার্যকর হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্রের দর্শকরাই সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়বে। কারণ তারা বিদেশি সিনেমা উচ্চমূল্যে দেখতে বাধ্য হবে।”

ট্রাম্পের এই ঘোষণা শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, বৈশ্বিক চলচ্চিত্র শিল্পেও আলোচনার জন্ম দিয়েছে। শুল্ক আরোপের বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, তা এখনও অনিশ্চিত। তবে এটি কার্যকর হলে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র বাজারে বড় পরিবর্তন আসবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। এখন প্রশ্ন হলো—সিনেমার মতো সৃজনশীল খাতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কতটা যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পকে রক্ষা করতে পারবে, নাকি উল্টো বিশ্বব্যাপী সৃজনশীলতার প্রবাহে বাধা হয়ে দাঁড়াবে?

এম আর এম – ১৫৬৭,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button