দেশব্যাপী ছাত্র-জনতার ঢাকামুখী যাত্রাকে কেন্দ্র করে সরকার আট জোড়া বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে। এর মধ্যে ফরিদপুরের ভাঙ্গা রেলস্টেশন থেকে একটি বিশেষ ট্রেন ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। তবে ছয় বগির বিশাল ট্রেনটিতে যাত্রার সময় উপস্থিত ছিলেন মাত্র ১৭ জন যাত্রী।
বিশেষ ট্রেনের যাত্রা ও সময়সূচি
ভাঙ্গা রেলস্টেশন থেকে বিশেষ ট্রেনটি ছেড়ে যায় মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১১টায়। ট্রেনটি শিবচর, পদ্মা, মাওয়া ও শ্রীনগর স্টেশনে থামবে বলে জানানো হয়েছে। এই যাত্রাপথের শেষ গন্তব্য হচ্ছে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন।
স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, দুপুর ১টার মধ্যেই ট্রেনটি ঢাকায় পৌঁছাবে বলে নির্ধারিত সময়সূচি ছিল। একই ট্রেন আবার সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকার কমলাপুর থেকে ফিরে রাত সাড়ে ৮টার মধ্যে ভাঙ্গা রেলস্টেশনে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
যাত্রীসংখ্যা নিয়ে বিস্ময়
এই বিশেষ ট্রেনটির ছয়টি বগিতে মোট আসন ছিল ৬৭৬টি। কিন্তু ট্রেনটি ছেড়ে যাওয়ার সময় যাত্রী ছিলেন মাত্র ১৭ জন। ট্রেনে ছিলেন রেলওয়ে পুলিশের আরও পাঁচজন সদস্য, নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য।
ভাঙ্গা রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার জিল্লুর রহমান বলেন, “সাড়ে ১১টার সময় ট্রেনটি নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী ছেড়ে যায়। ট্রেনটিতে যাত্রী ছিলেন মাত্র ১৭ জন। কোনো পক্ষ আমাদের সঙ্গে আগাম যোগাযোগ করেনি, যার ফলে ট্রেনে যাত্রী সংখ্যা এত কম হয়েছে।”
স্টপেজ ও পরবর্তী যাত্রী ওঠানো
ভাঙ্গা থেকে ছেড়ে যাওয়ার পর ট্রেনটি আরও চারটি স্টপেজে যাত্রী তোলার জন্য থামবে। শিবচর, পদ্মা, মাওয়া ও শ্রীনগর—এই চারটি স্টেশনে যাত্রীরা ট্রেনে উঠতে পারবেন। ইতিমধ্যে জানা গেছে, শ্রীনগর স্টেশন থেকে ১০ জন ও মাওয়া থেকে আরও ১৫ জন যাত্রী ট্রেনে উঠেছেন।
ছাত্র আন্দোলনের মুন্সিগঞ্জ জেলার সাবেক মুখপাত্র অবন্তিকা দাশ জানান, “আমাদের পক্ষ থেকে যারা যাচ্ছেন, তারা শ্রীনগর ও মাওয়া থেকে ট্রেনে উঠছেন। আমরা সময় মতো স্টেশনে পৌঁছে ট্রেনে উঠেছি।”
সমন্বয়ের অভাব
এই যাত্রা নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও রেলস্টেশন কর্তৃপক্ষের মধ্যে কোনো পূর্ব সমন্বয় হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। ভাঙ্গা স্টেশন মাস্টার জানান, “আমাদের কাছে আগাম কোনো নির্দেশনা বা যোগাযোগ আসেনি। তাই সময়মতো যাত্রীদের সংগঠিত করা সম্ভব হয়নি।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি আগাম পরিকল্পনা থাকতো এবং স্থানীয়ভাবে ছাত্র সংগঠন ও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করা হতো, তাহলে যাত্রীসংখ্যা অনেক বেশি হতে পারতো। এই বিষয়ে স্থানীয় সংগঠনগুলোর অংশগ্রহণও ছিল খুবই কম।
ছাত্রদের আগ্রহ ও ঢাকা অভিমুখে গমন
বিশেষ ট্রেনের উদ্দেশ্য ছিল দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছাত্র-জনতাকে ঢাকায় আনা, যেখান থেকে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করা হবে। এই ঘোষণার মাধ্যমে নতুন ছাত্র আন্দোলনের একটি কাঠামো গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চলছে।
ঢাকায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে হাজার হাজার ছাত্র অংশগ্রহণ করছেন। তবে বিশেষ ট্রেনের ক্ষেত্রে যাত্রীসংখ্যা কম হওয়ায় অংশগ্রহণকারীদের পরিবহনের বিষয়ে আরও কার্যকর পন্থা অবলম্বনের তাগিদ উঠছে।
বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিভঙ্গি ও ভবিষ্যতের পরিকল্পনা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের বড় আকারের কার্যক্রমে রেল কর্তৃপক্ষ ও সংগঠকদের মধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ সমন্বয় দরকার। যাত্রীদের সংগঠিত করতে মাঠপর্যায়ে প্রচারণা ও সুবিধা সম্পর্কে আগাম অবগত করাতে হবে।
এছাড়াও যেসব স্টেশনে থামবে বলে জানানো হয়েছে, সেসব এলাকায় আগেই যাত্রাবিষয়ক তথ্য পৌঁছে দিলে যাত্রীসংখ্যা বাড়তে পারতো।
পরিকল্পনার ঘাটতিতে সম্ভাবনার অপচয়
ভাঙ্গা থেকে যাত্রা শুরু করা বিশেষ ট্রেনের যাত্রীসংখ্যা যেমন হতাশাজনক ছিল, তেমনি এটি রেল ব্যবস্থাপনার দুর্বল পরিকল্পনার দিকটিও তুলে ধরে। যেখানে একটি ছয় বগির ট্রেন মাত্র ১৭ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকা যায়, সেখানে সময় ও সম্পদের অপচয়ের বিষয়টি সামনে আসে।
তবে যাত্রাপথে অন্যান্য স্টেশন থেকে আরও যাত্রী ওঠার সম্ভাবনা থাকায় পুরো পরিকল্পনা ব্যর্থ বলা যাবে না। ভবিষ্যতে এমন উদ্যোগ আরও ফলপ্রসূ করতে পরিকল্পনা ও সমন্বয়কে গুরুত্ব দিতে হবে।
এম আর এম – ০৬৯৭, Signalbd.com



