ট্রাম্পের শিক্ষামন্ত্রীকে কেন ‘অশিক্ষিত’ বলছে সবাই

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের অধীনে নিযুক্ত শিক্ষাসচিব লিন্ডা ম্যাকমাহনের লেখা একটি চিঠি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক হাস্যরস এবং সমালোচনার ঝড়। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়কে পাঠানো একটি কড়া চিঠিতে ভাষাগত ভুল, এলোমেলো বাক্যগঠন এবং অপ্রয়োজনীয় বড় হাতের অক্ষর ব্যবহারের কারণে অনলাইনে তাঁকে ‘অশিক্ষিত’ আখ্যা দিচ্ছেন অনেকেই।
কী ঘটেছিল?
সম্প্রতি লিন্ডা ম্যাকমাহন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রভাবশালী ও সম্মানজনক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট ড. অ্যালান গারবারকে একটি তিন পৃষ্ঠার চিঠি পাঠান। সেখানে তিনি হার্ভার্ডকে আর কোনো ফেডারেল অর্থায়ন (অনুদান) না দেওয়ার হুমকি দেন।
ম্যাকমাহনের অভিযোগ, হার্ভার্ড বিদেশি শিক্ষার্থীদের ‘হিংসাত্মক কার্যকলাপে’ উসকানি দিচ্ছে এবং শিক্ষায় মান বজায় রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। তিনি বলেন, “হার্ভার্ড যেন আর কোনো ফেডারেল অনুদানের আবেদন না করে, কারণ এমন কোনো অনুদান দেওয়া হবে না।”
চিঠির একটি কপি তিনি নিজেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) পোস্ট করলে তা ভাইরাল হয়ে যায়।
কিসে ঘটল বিপত্তি?
চিঠির মূল বিষয়বস্তু যতটা আলোচনার কেন্দ্র হয়নি, তার চেয়েও বেশি নজরে এসেছে ভাষার গঠন ও বানান ভুল। চিঠিতে বহু জায়গায় অদ্ভুত বাক্য তৈরি, বানান ভুল এবং অপ্রয়োজনীয় বড় হাতের অক্ষর ব্যবহারে ভাষাবিদ ও সাধারণ ব্যবহারকারীদের চোখ কপালে উঠে গেছে।
তিন পৃষ্ঠার ওই চিঠির প্রতিটি ভুল চিহ্নিত করে তা নেটদুনিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছেন হাজারো ব্যবহারকারী। কেউ লিখেছেন, “এটা কি কোনো হাইস্কুল ছাত্রের লেখা?” কেউ আবার বিদ্রূপ করে মন্তব্য করেছেন, “শিক্ষামন্ত্রী নিজেই অশিক্ষিত!”
একজন পেশাদার সম্পাদক চিঠির চিত্র প্রকাশ করে বলেন, “এমন এলোমেলো বড় হাতের অক্ষরের ব্যবহার কেন? আপনি কি কখনও চিঠি প্রুফরিড করেননি?”
ট্রাম্প প্রশাসন বনাম উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান
গত কয়েক মাস ধরেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন বিভিন্ন শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেছে। হার্ভার্ড, এমআইটি, ইয়েলসহ অনেক প্রতিষ্ঠানকে ট্রাম্প প্রশাসন ‘অ্যান্টি-সেমিটিক’ (ইহুদি বিদ্বেষী) কার্যকলাপে প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত করছে। সেই ধারাবাহিকতায় এবার চিঠির মাধ্যমে সরকারি অনুদান বন্ধের কথা জানান শিক্ষাসচিব।
হার্ভার্ডের পাল্টা প্রতিক্রিয়া
হার্ভার্ড চিঠির বিষয়বস্তু এবং অনুদান বন্ধের সিদ্ধান্তকে “অভূতপূর্ব ও অনৈতিক” বলে আখ্যা দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত ২১ এপ্রিল তারা ট্রাম্প সরকারের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছে, যেখানে ২.২ বিলিয়ন ডলারের অনুদান স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।
তাদের দাবি, এই অর্থ বন্ধ হয়ে গেলে জীবন রক্ষাকারী গবেষণা ও উদ্ভাবন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারা আরও বলেছে, “আমরা আইন মেনে চলি, মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সম্মান করি এবং অ্যান্টি-সেমিটিজমের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে বিশ্বাসী।”
চিঠি ইস্যু ট্রাম্প প্রশাসনের ভাবমূর্তিকে কোথায় নিয়ে গেল?
যেখানে একজন শিক্ষাসচিবের কাছ থেকে সুস্পষ্ট, পরিশীলিত ও প্রামাণ্য বক্তব্য প্রত্যাশিত, সেখানে লিন্ডা ম্যাকমাহনের এমন চিঠি ট্রাম্প প্রশাসনের শিক্ষানীতিকে নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি শুধু একজন ব্যক্তির ব্যর্থতা নয়, বরং প্রশাসনিক অগভীরতা এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া: হাস্যরস নাকি উদ্বেগ?
এ ঘটনায় আমজনতা যেমন মজা পাচ্ছেন, তেমনি অনেক শিক্ষাবিদ উদ্বিগ্নও হয়েছেন। তাঁদের ভাষ্য, “যে প্রশাসন শিক্ষাব্যবস্থাকে হাতিয়ার করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করতে চায়, সেখানে শিক্ষার মান নিয়ে আদৌ কি তাদের মাথাব্যথা আছে?”