রাশিয়ার হাতে শান্তি আলোচনার ‘কার্ড’: ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ইউক্রেন যুদ্ধে শান্তি আলোচনা এবং এর অবসানে রাশিয়ার হাতে ‘কার্ড’ রয়েছে। তিনি মনে করেন, রাশিয়া যুদ্ধের সমাপ্তি চায় এবং ইতিমধ্যেই ইউক্রেনের অনেক অঞ্চল নিজেদের দখলে নিয়েছে। তাই রাশিয়া বর্তমানে আলোচনায় শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে।
শান্তি আলোচনায় রাশিয়ার গুরুত্ব
বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, “আমার বিশ্বাস, রাশিয়া এই যুদ্ধের সমাপ্তি দেখতে চায়। তারা অনেক ভূখণ্ড দখল করেছে, এবং এখন তাদের হাতে শক্তিশালী ‘কার্ড’ রয়েছে।” ট্রাম্পের মতে, এই পরিস্থিতিতে শান্তি আলোচনা সম্ভব হলেও রাশিয়ার হাতেই কার্যত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, “রাশিয়া শান্তি চায়, এবং আমি বিশ্বাস করি, তারা সত্যিই যুদ্ধের অবসান চাইছে।”
গত তিন বছর ধরে রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে এবং দেশটির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা নিজেদের দখলে নিয়েছে। এই পরিস্থিতি যুদ্ধে রাশিয়ার অবস্থান শক্তিশালী করেছে, যার ফলে আলোচনায় তাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
জেলেনস্কির বিরুদ্ধে ট্রাম্পের মন্তব্য
ফ্লোরিডার বৈঠকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে ‘স্বৈরশাসক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন ট্রাম্প। তিনি দাবি করেন, ইউক্রেনের জনগণ জেলেনস্কির প্রতি সমর্থন হারিয়েছে এবং তার জনপ্রিয়তা তলানিতে পৌঁছেছে। “প্রতিটি শহর ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, এবং যখন জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত, তখন কীভাবে তাদের নেতা জনপ্রিয় থাকতে পারে?” এমন প্রশ্নও তোলেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের মতে, ইউক্রেনের সরকার নির্বাচনী প্রক্রিয়া স্থগিত করে সামরিক আইন জারি করেছে, যার ফলে জনগণের মতামত তুলে ধরা কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে, সাম্প্রতিক জরিপ অনুযায়ী, ইউক্রেনের জনগণের ৫৭ শতাংশ এখনও জেলেনস্কির প্রতি আস্থাশীল।
পুতিন ও ট্রাম্প: এক বিশেষ সম্পর্ক
বিশ্ব রাজনীতির দিকে তাকালে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যে এক বিশেষ সম্পর্ক লক্ষ্য করা গেছে। ২০১৯ সালে জাপানের ওসাকায় অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনে তাদের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়, যেখানে উভয়ের মধ্যে আলোচনা ছিল আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিয়ে। ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়ার সঙ্গে একটি নতুন সম্পর্ক স্থাপনের পক্ষে ছিলেন, যা তাদের মধ্যে সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা তৈরি করেছে। তবে, ইউক্রেন যুদ্ধের পরিস্থিতি তাদের সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলেছে।
ব্রাসেলসের প্রতিক্রিয়া: ইউরোপের নেতাদের অবস্থান
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে স্বৈরশাসক আখ্যায়িত করার পর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইউরোপীয় নেতারা। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ বলেছেন, “প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির গণতান্ত্রিক বৈধতা অস্বীকার করা অত্যন্ত ভুল এবং বিপজ্জনক।” শলৎজের মন্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, তিনি জেলেনস্কির সরকারকে সমর্থন জানান। একইভাবে, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারও জেলেনস্কির প্রতি তার সমর্থন প্রকাশ করেছেন।
তবে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির ভবিষ্যৎ কী?
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির ভবিষ্যৎ এখনও অনিশ্চিত। ইউক্রেনের নির্বাচনী প্রক্রিয়া স্থগিত থাকলেও, দেশের মধ্যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। সামরিক আইন চলমান থাকায়, দেশটির জনগণ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। ট্রাম্পের দাবি অনুযায়ী, জেলেনস্কির জনপ্রিয়তা নিম্নগামী হলেও তার আসল জনপ্রিয়তা দেশের মধ্যে পরিস্থিতির উপর নির্ভর করছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক মহলে বিভিন্ন মহল থেকে ইউক্রেনের বর্তমান অবস্থাকে সমর্থন করা হলেও, ট্রাম্পের মন্তব্য ইউরোপীয় নেতাদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি করেছে। তবে, ট্রাম্পের মতে, রাশিয়া এই যুদ্ধের সমাপ্তি চায় এবং তাদের হাতে রয়েছে শান্তি আলোচনার ‘কার্ড’। এটি একটি ভবিষ্যতদৃষ্টির ইঙ্গিত, যেখানে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের নতুন দিক খুলে যেতে পারে।
বিশ্ব রাজনীতি ও শান্তির সম্ভাবনা
যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে, বিশ্ব রাজনীতি এখনো অনিশ্চিত। ট্রাম্পের বক্তব্যে রাশিয়ার অবস্থান শক্তিশালী হওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে, তবে যুদ্ধের শেষ এবং শান্তি আলোচনা নিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশও গুরুত্ব সহকারে মনোযোগী। ইউক্রেনের জনগণের জন্য শান্তির সম্ভাবনা যদিও এখনো দুর্লভ, তবে আন্তর্জাতিক চাপ ও রাশিয়ার কৌশল পরিবর্তন শান্তির পথে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে।
প্রতিক্রিয়া: ট্রাম্পের বক্তব্যের গুরুত্ব
বিশ্ব রাজনীতির এই পরিস্থিতিতে, ট্রাম্পের বক্তব্যের অনেক গুরুত্ব রয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের শান্তি আলোচনা এবং তার সম্ভাবনা নিয়ে তার বক্তব্য প্রমাণ করে যে, বর্তমানে রাশিয়ার শক্তি এবং ভূখণ্ড দখলের প্রভাব অনেক গভীর। এই পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং ভবিষ্যৎ শান্তির পরিকল্পনাগুলোর উপরও ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।