গণ–অভ্যুত্থানে নিহত হওয়ার ছয় মাস পর গ্রামের বাড়িতে হাসানের লাশ দাফন

গত ৫ আগস্ট রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের গুলিতে নিহত মো. হাসানের (১৯) লাশ ছয় মাস পর তাঁর গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়েছে। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ভোলার সদর উপজেলার সাহমাদার গ্রামে রাঢ়ি বাড়ি জামে মসজিদ কবরস্থানে তাঁর লাশ দাফন করা হয়। লাশ দাফনের সময় হাসানের মা-বাবা আহাজারি করতে থাকেন এবং পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
দ্বিতীয় জানাজা ও শোক
হাসানের দ্বিতীয় জানাজা গতকাল শুক্রবার ভোলার সদর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের পাশে সাহমাদার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। এই জানাজায় বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় নাগরিক কমিটি সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী এবং হাসানের পরিবারের সদস্যরা অংশ নেন। হাসানের প্রথম জানাজা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
পরিবারের অবস্থা
মো. হাসান রাজধানীর কাপ্তানবাজারে একটি দোকানে কাজ করতেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি ভোলা সদর উপজেলার সাহমাদার গ্রামে। তিনি মনির হোসেনের (৪৮) ছেলে। মনির হোসেন পেশায় একজন দিনমজুর। নদীভাঙনে আটবার সবকিছু হারিয়ে তিনি অন্যের জমিতে ঘর তুলে পরিবার নিয়ে বাস করছেন। হাসানের মৃত্যুতে পরিবারের জীবনে নতুন করে অভাব দেখা দিয়েছে।
হাসানের বাবা মনির হোসেন জানান, তিনি ইচ্ছা করেছিলেন হাসানকে পড়াশোনা করাবেন, কিন্তু অভাবের কারণে তা সম্ভব হয়নি। সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানোর পর হাসান আট বছর আগে ঢাকায় গিয়ে ইলেকট্রনিকসের দোকানে কাজ শুরু করেন। তিনি নিজের খরচ চালিয়ে মাসে কিছু টাকা বাড়িতে পাঠাতেন। হাসানের মৃত্যুতে পরিবারের আশা ভঙ্গ হয়েছে এবং তাঁরা সরকারের কাছে আর্থিক সহায়তার দাবি জানিয়েছেন।
লাশের সন্ধান ও দাফন
হাসানের পরিবার জানায়, ৫ আগস্ট দুপুরে হাসানের সঙ্গে তাঁদের সর্বশেষ কথা হয়েছিল। ওই দিন তিনি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করছিলেন। কিন্তু সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন। হাসানের লাশ ৬ মাস ১০ দিন পর শুক্রবার দুপুরে তাঁদের কাছে ফেরত দেওয়া হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে একাধিকবার লাশের খোঁজ করেও তাঁরা কিছুই পাননি।
হাসানের স্বজনেরা জানান, গত ১০ জানুয়ারি জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম তাঁদের সাহায্য করেন। এরপরই ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে ১০টি লাশ দেখানো হয়, যেখানে তাঁরা হাসানের লাশ শনাক্ত করতে সক্ষম হন।
তদন্তের দাবি
হাসানের পরিবার এবং স্বজনেরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন, কেন তাঁদের লাশ পেতে এত বিলম্ব হলো, তা তদন্ত করা উচিত। জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য মো. শাহাদাত খন্দাকার বলেন, “ঢাকা মেডিকেলের কোনো দুর্বলতা আছে কি না, তা বলতে পারব না, তবে সিআইডি কর্মকর্তারা ব্যাপক তৎপর ছিলেন। আমার মনে হয়, হাসানের চেহারা বিকৃত হওয়ার কারণে লাশ শনাক্তে বিলম্ব হয়েছে।”
মো. হাসানের মৃত্যু এবং তাঁর লাশের দাফন একটি দুঃখজনক ঘটনা, যা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর একটি বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন ফেলে। হাসানের পরিবার এখন সরকারের কাছে সহায়তা ও ন্যায়ের দাবি জানাচ্ছে। এই ঘটনার মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সাধারণ মানুষের জীবনে এর প্রভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আশা করা যায়, সরকার এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করবে এবং নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়াবে।