প্রযুক্তি

ব্যাপক হারে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করছে ডিপসিক: দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার উদ্বেগ

চীনা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) অ্যাপ ডিপসিক ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য ব্যাপক হারে সংগ্রহ করছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা ‘ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস’ (এনআইএস)।

এনআইএসের দাবি, ডিপসিক ব্যবহারকারীদের ইনপুট ডেটা সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করছে এবং তা এআই মডেল প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ব্যবহারকারীর কিবোর্ড ইনপুট প্যাটার্ন সংগ্রহের মাধ্যমে পরিচয় শনাক্ত করার আশঙ্কাও করা হচ্ছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়ার ব্যবহারকারীদের তথ্য চীনের সার্ভারে সংরক্ষণ করা হচ্ছে এবং বিজ্ঞাপনদাতাদের অবাধ প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়েছে।

ডিপসিকের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ

দক্ষিণ কোরিয়ার এনআইএস জানিয়েছে, গত সপ্তাহে বিভিন্ন সরকারি সংস্থাকে সতর্ক করে একটি আনুষ্ঠানিক নোটিশ পাঠানো হয়েছে যাতে সরকারি ডিভাইসে ডিপসিক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এর আগে, দেশটির সরকার নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণ দেখিয়ে সরকারি সংস্থাগুলোর জন্য এই অ্যাপের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে।

এনআইএসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “অন্যান্য জেনারেটিভ এআই পরিষেবার তুলনায় ডিপসিক ব্যবহারকারীদের চ্যাটিং রেকর্ড অন্য কোথাও পাঠাতে সক্ষম। কারণ, এতে এমন একটি ফাংশন রয়েছে যা কিবোর্ড ইনপুট প্যাটার্ন সংগ্রহ করতে পারে এবং চীনা কোম্পানির সার্ভারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে।”

দক্ষিণ কোরিয়ার মতো, অস্ট্রেলিয়া ও তাইওয়ানও ডিপসিকের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এই অ্যাপের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের তথ্য চীনা সার্ভারে সংরক্ষণ করা হচ্ছে এবং দেশটির আইন অনুযায়ী, চীনা সরকার চাইলে সহজেই এই ডেটা অ্যাক্সেস করতে পারে।

কন্টেন্ট সেন্সরশিপ ও তথ্য বিকৃতির অভিযোগ

এনআইএস জানিয়েছে, ডিপসিক বিভিন্ন সংবেদনশীল বিষয় সম্পর্কে ভিন্ন ভাষায় ভিন্ন ভিন্ন উত্তর দিচ্ছে, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।

উদাহরণস্বরূপ, দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় খাবার ‘কিমচি’-এর উৎপত্তি সম্পর্কে কোরিয়ান ভাষায় প্রশ্ন করা হলে ডিপসিক জানায়, এটি একটি কোরিয়ান খাবার। কিন্তু চীনা ভাষায় একই প্রশ্ন করলে ডিপসিক জানায়, এর উৎপত্তি চীনে।

এই ধরনের দ্বৈত উত্তর দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে রয়টার্স। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ‘কিমচি’-র উৎপত্তি নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনের মধ্যে বিতর্ক দেখা দিয়েছে, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উত্তপ্ত আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

এছাড়াও, ১৯৮৯ সালের তিয়েনআনমেন স্কয়ারে ছাত্র আন্দোলন সম্পর্কিত প্রশ্ন করা হলে ডিপসিক জবাব দেয়, “আসুন অন্য কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলি।” এর ফলে ধারণা করা হচ্ছে, রাজনৈতিক বিষয়ের ওপর সেন্সরশিপ আরোপ করেছে ডিপসিক।

চীনা সরকারের প্রতিক্রিয়া

দক্ষিণ কোরিয়ার এনআইএসের দাবি এবং নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র ৬ ফেব্রুয়ারি এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেছেন, “বেইজিং কখনও কোনো কোম্পানি বা ব্যক্তিকে আইন লঙ্ঘন করে তথ্য সংগ্রহ বা সংরক্ষণ করতে বলে না।”

তবে, রয়টার্সের তরফ থেকে ডিপসিকের কাছে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো সাড়া দেয়নি।

বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ ও নিরাপত্তা ঝুঁকি

বিশ্বের অনেক দেশ বর্তমানে চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর ডেটা নিরাপত্তা ও ব্যবহারকারীর গোপনীয়তার ওপর নজরদারি বাড়িয়েছে। এর আগে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ টিকটকের মতো চীনা অ্যাপের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক পরিষেবাগুলোর মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের বিশাল পরিমাণ ডেটা সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা হচ্ছে, যা ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে।

দক্ষিণ কোরিয়ার এনআইএসের এই সতর্কবার্তার ফলে অন্যান্য দেশগুলিও ডিপসিকের কার্যক্রম পর্যালোচনা করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button