আঞ্চলিক

গজারিয়ায় ট্রাকে আগুন, ব্যাপক ক্ষতি, মালামাল উদ্ধার

Advertisement

মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার আনারপুরা এলাকায় বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর ২০২৫) ভোররাতে একটি মালবাহী ট্রাকে আগুন লেগেছে। ঢাকা‑চট্টগ্রাম মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ এই অংশে ঘটনা ঘটায় স্থানীয় ও পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বিস্মিত। প্রাথমিক ধারণা অনুসারে এটি পরিকল্পিত অগ্নিসংযোগ হতে পারে।

ঘটনার সময় ট্রাকটি আনারপুরা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন স্থানে দাঁড়িয়ে ছিল। ট্রাকটিতে মূলত কাগজ তৈরির সরঞ্জাম ও কার্টনজাত মালামাল ছিল। ভোর প্রায় পৌনে চারটার দিকে আগুন লেগে ট্রাকের কিছু অংশ এবং তাতে থাকা মালপত্র পুড়ে যায়। তবে সেখানকার ট্রাকচালক ও হেলপার তখন ঘুমিয়ে ছিলেন এবং তারা আগুন দেখে দ্রুত নিরাপদ স্থানে চলে যান, ফলে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

গজারিয়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন অফিসার মো. ফিরোজ মিয়া জানান, আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তাদের তৎপরতায় প্রায় ১৪ লক্ষ টাকার মালামাল উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তবে আগুনের কারণে প্রাথমিকভাবে প্রায় ২ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার কারণ হলো ট্রাকের মালামাল মূলত কাগজজাত পণ্য। যেহেতু কাগজ খুবই জ্বলনশীল, তাই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা এক ধরনের চ্যালেঞ্জ ছিল।

সম্ভাব্য কারণ

ফায়ার সার্ভিস প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে, আগুন লাগানো একটি পরিকল্পিত নাশকতার ঘটনা হতে পারে। স্থানীয় পুলিশও তদন্ত শুরু করেছে এবং আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য সংগ্রহ করছে। ধারণা করা হচ্ছে, ভোররাতে জনসাধারণের কম উপস্থিতি ও নিরাপত্তা কম থাকার সুযোগ নিয়ে দুর্বৃত্তরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে।

পরিস্থিতি ও প্রতিক্রিয়া

ঘটনাস্থলে পৌঁছে ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় পুলিশ দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তাদের তৎপরতায় আগুন আরও বড় ধরনের ক্ষতি বা বিস্তার রোধ করা সম্ভব হয়। বর্তমানে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। তবে এই ধরনের ঘটনা পরিবহন মালিক, চালক ও যাত্রীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

ট্রাকের মালিক জানিয়েছেন, রাতে ট্রাক থামিয়ে রাখা অবস্থায় এমন ঘটনা ঘটতে পারে বলে আগে থেকেই সতর্ক থাকার প্রয়োজন ছিল। এ ঘটনায় মালিক ও চালকদের মধ্যে নিরাপত্তা সচেতনতা বাড়ানোর বিষয়টি আরও গুরুত্ব পেয়েছে।

ক্ষতি ও উদ্ধার

ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, আগুনে প্রাথমিকভাবে ট্রাক ও কিছু মালামালের ক্ষতি হয়েছে। তবে দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা ও স্থানীয়দের সহায়তায় প্রায় ১৪ লক্ষ টাকার মালামাল উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। এটি নির্দেশ করে যে, অল্প সময়ের মধ্যে সঠিক পদক্ষেপ নিলে বড় ধরনের সম্পদ হারানো রোধ করা যায়।

যান চলাচল ও পরিবহন ব্যবস্থায় প্রভাব

ঢাকা‑চট্টগ্রাম মহাসড়ক দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ রুট। এই ধরনের অগ্নিকাণ্ড হলে কেবল মালবাহী যান নয়, যাত্রীবাহী যানও ঝুঁকিতে পড়ে। এ ধরনের ঘটনায় সাময়িক যানজট সৃষ্টি হতে পারে এবং পরিবহন ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে।

স্থানীয়রা বলছেন, যদি দিন বা রাতের অন্যান্য সময়ে এমন ঘটনা ঘটে, তাহলে পরিবহন খাতের নিরাপত্তা ও নির্ভরযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। এ কারণে মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ অংশে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও তৎপরতা নিশ্চিত করা জরুরি।

ভবিষ্যৎ করণীয়

অগ্নিসংযোগ বা আগুন লাগানো ঘটনা শুধু ক্ষতির মাত্রা নয়, বরং পরিবহন ও লজিস্টিক ব্যবস্থায় ঝুঁকি সৃষ্টি করে। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের করণীয় হলো:

  • রাতের সময় থামিয়ে রাখা যানবাহনে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
  • মহাসড়কের এমন অংশে সিসিটিভি, আলো ও নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন বাড়ানো।
  • পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন দ্রুত ও স্বক্রিয়ভাবে তদন্ত চালানো।
  • পরিবহন মালিক ও চালকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
  • স্থানীয় প্রশাসন ও হাইওয়ে পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় বাড়ানো।

গজারিয়ার এই অগ্নিকাণ্ড আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে পরিবহন নিরাপত্তা ও রাস্তা সংলগ্ন অপরাধ এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দ্রুত সাড়া দেওয়া, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।
এ ঘটনায় ঢাকা‑চট্টগ্রাম মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ অংশে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং পরিবহন নিরাপত্তা ও নজরদারি ত্বরান্বিত করার প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আশা করা যায়, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত তদন্ত শেষ করে জনসাধারণকে তথ্য প্রদান করবে এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।

MAH – 13779 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button