যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি যদি রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধ শিঘ্রই শেষ করতে চান, তবে ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগদানের আশা পরিত্যাগ করতে হবে। তিনি মনে করেন, শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কিছু কঠোর শর্ত মেনে চলা জরুরি।
ঘটনা ও ট্রাম্পের মন্তব্য
রোববার (১৭ আগস্ট) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করে ট্রাম্প উল্লেখ করেন, ইউক্রেন চাইলে যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পারে বা লড়াই চালিয়ে যেতে পারে। তিনি লিখেছেন, “মনে রাখবেন, কিভাবে এটি শুরু হয়েছিল। ওবামার সময় ক্রিমিয়া সহজেই রাশিয়ার দখলে চলে যায়। সেই ইতিহাস পুনরায় ঘটবে না এবং ন্যাটোতে যোগদানের প্রশ্নও নেই। কিছু বিষয় কখনোই পরিবর্তন হয় না।”
ট্রাম্পের এই মন্তব্য এসেছে সেই সময়, যখন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি সোমবার হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিতে যাচ্ছেন। বৈঠকে ইউরোপের শীর্ষ নেতারাও উপস্থিত থাকবেন।
হোয়াইট হাউসের বৈঠকে অংশ নেবেন জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ ম্যার্টস, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভনডার লিয়েন, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এবং ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুটে। বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য হলো ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের সমাধান খুঁজে বের করা এবং অঞ্চলটিতে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, ট্রাম্প বৈঠকে জেলেনস্কিকে কিছু শর্ত মানতে চাপ দিতে পারেন, যাতে যুদ্ধ দ্রুত শেষ হয়। তিনি আগেই ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, ইউক্রেনকে ক্রিমিয়া ফিরিয়ে নেওয়া এবং ন্যাটোতে যোগদানের আশা পরিত্যাগ করতে হবে।
ইউক্রেনের প্রতিক্রিয়া
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, যেসব ছাড় রাশিয়াকে দেওয়া হয়েছে, তা তাকে যুদ্ধ চালাতে আরও উৎসাহিত করেছে। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন যে, যুদ্ধ দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্যভাবে শেষ হবে, তবে শান্তি স্থায়ী হতে হবে। জেলেনস্কি মনে করেন, সরাসরি রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধ বন্ধ করা সম্ভব, কারণ ইউক্রেন একটি বড় শক্তির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে।
ক্রিমিয়া ও দোনবাসের প্রভাব
ট্রাম্পের পরামর্শ অনুসারে, যদি জেলেনস্কি দোনেৎস্ক অঞ্চলের পুরো অংশ ছেড়ে দেয়, তবে শান্তি চুক্তি সম্ভব হতে পারে। এটি রাশিয়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি, যা ইউক্রেনের ভবিষ্যত কূটনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
ক্রিমিয়া নিয়ে জেলেনস্কির নীতি এবং ট্রাম্পের পরামর্শ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি ইউক্রেনের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ইউরোপীয় নেতারা ট্রাম্পের মন্তব্যকে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার মধ্যে রেখেছেন। কেউ কেউ মনে করছেন, শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এটি কার্যকর হতে পারে, আবার অনেকে এ ধরনের শর্তের সমালোচনা করেছেন। ন্যাটো মহাসচিব এবং অন্যান্য নেতারা বৈঠকে ইউক্রেনের নিরাপত্তা ও নীতির ওপর গুরুত্বারোপ করবেন।
বিশেষজ্ঞ বিশ্লেষণ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের মন্তব্য ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতের একটি সম্ভাব্য কূটনৈতিক সমাধানের ইঙ্গিত দেয়। তবে, এটি বাস্তবায়ন করা কঠিন হতে পারে, কারণ ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব এবং ন্যাটো সদস্যপদের বিষয়গুলো জটিল কূটনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু।
ভবিষ্যৎ ধাপ
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ইউক্রেন কীভাবে এই চাপ মোকাবিলা করবে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পরিস্থিতি সামঞ্জস্যপূর্ণ কূটনীতির ওপর নির্ভর করবে। আগামী কয়েক সপ্তাহে হোয়াইট হাউস বৈঠক এবং ইউরোপীয় নেতাদের প্রতিক্রিয়া যুদ্ধের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
ট্রাম্পের মন্তব্য অনুযায়ী, ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদান এখন দূরের বিষয়। তবে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কূটনৈতিক সমঝোতা করা একমাত্র পথ হতে পারে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, পরিস্থিতি কেমন মোড় নেবে তা আগামী বৈঠকের ফলাফলের ওপর নির্ভর করবে।
এম আর এম – ০৯৩৪, Signalbd.com



