বাংলাদেশ

ডেঙ্গুতে ৩ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯১২

Advertisement

গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে ৯১২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সংগৃহীত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

গত ২৪ ঘণ্টার পরিসংখ্যান

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত এক দিনে মারা যাওয়া তিনজনের মধ্যে দুইজন ঢাকায় এবং একজন ঢাকার বাইরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। এর ফলে চলতি বছরে ডেঙ্গুতে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩১৮ জনে

একই সময়ে সারা দেশে নতুন করে ৯১২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ৩,৬৯৬ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

বিভাগভিত্তিক আক্রান্তের চিত্র

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল বিভাগে ১৩৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৫১ জন, ঢাকা বিভাগের বাইরে ১৩০ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ১৯৪ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ১৩১ জন, খুলনা বিভাগে ৭২ জন, রাজশাহী বিভাগে ৮৮ জন, রংপুর বিভাগে ৩ জন এবং সিলেট বিভাগে ৫ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।

এতে দেখা যায়, ঢাকায় এখনো আক্রান্তের হার সর্বোচ্চ। বিশেষ করে নগর এলাকার ঘনবসতি এবং অপর্যাপ্ত মশা নিধন কার্যক্রমের কারণে এডিস মশার প্রজনন নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

চলতি বছরের মোট সংক্রমণ পরিস্থিতি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ৮০ হাজার ৬৩৪ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ৭৬ হাজার ৯৩৮ জন রোগী ইতিমধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন।

চলতি বছরের মৃত্যুর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জানুয়ারিতে ১০ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩ জন, এপ্রিলে ৭ জন, মে মাসে ৩ জন, জুনে ১৯ জন, জুলাইয়ে ৪১ জন, আগস্টে ৩৯ জন, সেপ্টেম্বরে ৭৬ জন, অক্টোবরে ৮০ জন এবং নভেম্বর মাসের প্রথম দশ দিনে ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

ডেঙ্গুর প্রকোপ কেন বাড়ছে

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শহরাঞ্চলে অপরিকল্পিত নগরায়ণ, পানির অযথা জমে থাকা এবং জনসচেতনতার অভাবই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই এডিস মশার প্রজনন বেড়ে যায়, যা যথাসময়ে দমন না করলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

এছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং দীর্ঘস্থায়ী উষ্ণ আবহাওয়া ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়িয়ে দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত সংক্রমণ অব্যাহত থাকতে পারে যদি কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়।

কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ ও মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ জানায়, মশা নিয়ন্ত্রণে প্রতিদিনই ফগিং, লার্ভিসাইড ছিটানো এবং সচেতনতা কর্মসূচি চালানো হচ্ছে। তবে মাঠ পর্যায়ে পর্যাপ্ত নজরদারির অভাবের কারণে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যাচ্ছে না।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, “আমরা নিয়মিতভাবে প্রতিটি ওয়ার্ডে অভিযান চালাচ্ছি। তবে নাগরিকদের সহযোগিতা ছাড়া এডিস মশা দমন সম্ভব নয়। বাসাবাড়িতে পানি জমে থাকলে তা পরিষ্কার রাখা এখন সময়ের দাবি।”

বিশেষজ্ঞদের মতামত

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, “ডেঙ্গু শুধু চিকিৎসা দিয়ে থামানো যায় না, এটি প্রতিরোধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বাসাবাড়ি, নির্মাণাধীন ভবন, ফুলের টব—এসব জায়গায় এডিস মশা সবচেয়ে বেশি বংশবিস্তার করে। তাই প্রতিটি পরিবারকে সচেতন হতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে ধারাবাহিক কর্মসূচি গ্রহণ করা না হলে আগামী বছরেও ডেঙ্গুর প্রকোপ পুনরায় দেখা দিতে পারে।

সাধারণ মানুষের করণীয়

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সাধারণ জনগণের জন্য কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—

  • প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে বাসার আশপাশে জমে থাকা পানি ফেলে দেওয়া
  • ফুলের টব, ড্রাম, বালতি বা কুলারে পানি জমে থাকতে না দেওয়া
  • পুরো হাত-পা ঢাকা পোশাক পরা
  • জ্বর হলে দ্রুত হাসপাতালে যোগাযোগ করা এবং নিজে থেকে ওষুধ না খাওয়া

এই পদক্ষেপগুলো মেনে চললে অনেকাংশে ডেঙ্গু সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

ভবিষ্যতের পরিস্থিতি নিয়ে আশঙ্কা

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি বছরের সংক্রমণ এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। আবহাওয়া শুষ্ক না হওয়া পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। তাই হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ যেভাবে বাড়ছে, তাতে বছরের শেষভাগেও নতুন আক্রান্তের সংখ্যা কমবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করছেন, সময়মতো মশা নিধন ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি ছাড়া পরিস্থিতি মোকাবিলা করা কঠিন হবে।

প্রতিদিন নতুন রোগী বাড়ছে, মৃত্যুর সংখ্যা পেরিয়েছে তিন শতাধিক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে স্থানীয় প্রশাসন, হাসপাতাল ও জনগণের সমন্বিত উদ্যোগ এখন সময়ের দাবি। সরকার ইতিমধ্যে বিশেষ নজরদারি চালাচ্ছে, তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিটি নাগরিকের সচেতন ভূমিকা ছাড়া ডেঙ্গুর এই বিপর্যয় ঠেকানো সম্ভব নয়।

এম আর এম – ২১৮৩,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button