ঢাকার পুরান শহরের সূত্রাপুর এলাকায় ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে এক বন্দুক হামলায় তারিক সাইফ মামুন (৫০) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। সোমবার (১০ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনাস্থল থেকে জানা যায়, হাসপাতালের সামনের রাস্তায় হঠাৎ করে গুলির শব্দে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। পথচারীরা সরাসরি কিছুই করতে পারেননি। হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার মহিবুল্লাহ জানান, গুলির শব্দ শুনে তিনি মেইন গেটের দিকে গেলে রাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় এক ব্যক্তিকে পড়ে থাকতে দেখেন। সাথে সাথে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে আনা হয়, কিন্তু চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
গুলিবিদ্ধ ব্যক্তির খালাতো ভাই হাফিজ বলেন, “আমার ভাই তারিক সাইফ মামুন একজন সাধারণ মানুষ। তিনি কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন না। কে বা কারা তাকে হত্যা করেছে এবং কেন করেছে, তা আমার জানা নেই।”
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মোঃ ফারুক জানান, মৃতদেহ মর্গে রাখা হয়েছে এবং বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, “মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত, তবে কে বা কারা গুলি চালিয়েছে তা তদন্তে বের করা হবে।”
হত্যার পেছনের পটভূমি
এর আগে, ২০২৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর রাতের ঘটনা অনুযায়ী, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের সিটি পেট্রল পাম্প ও বিজি প্রেসের মাঝামাঝি এলাকায় তারিক সাইফ মামুনকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছিল। সেদিন দুর্বৃত্তরা তার প্রাইভেটকার লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। মামুন গাড়ি থেকে বের হয়ে পালানোর চেষ্টা করলে তাকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। ওই ঘটনায় একজন মোটরসাইকেল আরোহী গুলিবিদ্ধ হন এবং পরে মারা যান। পাশাপাশি, একজন পথচারীও আহত হন।
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম জানান, হামলাকারীরা চারটি মোটরসাইকেল নিয়ে এসে মামুনকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। মামুনের সঙ্গে তাদের পূর্ব পরিচিতি এবং দ্বন্দ্বের বিষয়টি তদন্তের পর স্পষ্ট হবে।
জানা গেছে, তারিক সাইফ মামুন ২৬ বছর জেল খেটে ২০২৩ সালে জামিনে বের হয়ে আবারও সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িয়েছিলেন। এছাড়া, তার এবং ইমন গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছিল।
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
পরিবেশ ও স্থানীয়রা এই হত্যাকাণ্ডকে অত্যন্ত শোকজনক ও উদ্বেগজনক হিসেবে দেখছেন। হাসপাতালের আশেপাশের ব্যবসায়ী ও পথচারীরা জানান, “পুরান ঢাকার এই এলাকায় এই ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নতুন নয়, তবে এতটা জনসমাগমের জায়গায় হত্যা আরও উদ্বেগজনক।”
স্থানীয় এক দোকানদার জানান, “দিনের বেলা এমন ঘটনা ঘটলে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়। পুলিশ এবং প্রশাসনের উচিত এই ধরনের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা।”
পুলিশ ও তদন্ত
ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু হয়েছে। পুলিশের কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ঘটনার CCTV ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের খোঁজ চলছে। নিহত মামুনের পূর্বের সন্ত্রাসী কার্যক্রম এবং ইমন গ্রুপের সঙ্গে দ্বন্দ্বকে তদন্তের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, শহরে সাম্প্রতিক সময়ে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত, তাই দ্রুত তদন্ত ও আইন প্রয়োগের মাধ্যমে দোষীদের বিচারের আওতায় আনা হবে।
Expert মন্তব্য
সন্ত্রাস ও অপরাধ বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাজধানীতে এমন বন্দুক হামলা সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা সচেতনতার জন্য বড় হুমকি। তারা বলছেন, “শহরে সাধারণ মানুষ এবং হাসপাতালের মতো জনসমাগমের স্থানে নিরাপত্তা জোরদার করা না হলে ভবিষ্যতে আরও জটিল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।”
এছাড়া, পুলিশের প্রতিক্রিয়া ও তদন্তের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে যাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থা বজায় থাকে।
পুরান ঢাকার সূত্রাপুর এলাকায় ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের এই হত্যাকাণ্ড পুরো শহরের মানুষকে শোকাহত করেছে। তদন্ত চলছে, তবে হত্যার পেছনের রাজনৈতিক বা সামাজিক কারণ নিয়ে এখনো নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন দ্রুত ঘটনাস্থল ও প্রমাণ সংগ্রহে কাজ করছে।
নাগরিকরা আশা করছেন, এই ধরনের ঘটনাগুলো ভবিষ্যতে রোধ করা হবে এবং শহরে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
MAH – 13725 I Signalbd.com



