বিশ্ব

নেপালে জেনজিদের বিক্ষোভ: নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৯

Advertisement

নেপালের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধের প্রতিবাদে জেনারেশন জেড খ্যাত তরুণদের বিক্ষোভে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৯ জনে পৌঁছেছে। নিহতদের মধ্যে ১৭ জন রাজধানী কাঠমান্ডুতে এবং ২ জন পূর্বাঞ্চলীয় শহর ইতাহারিতে। পুলিশের জলকামান, টিয়ারগ্যাস এবং রাবার বুলেট ব্যবহার ও সংঘর্ষে আহত হয়েছেন শতাধিক বিক্ষোভকারী।

বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের বিস্তারিত

সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিক্ষুব্ধ তরুণরা কারফিউ ভেঙে সংসদ ভবনে ঢুকে পড়েন। পুলিশের চেষ্টা থাকলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের প্রতি পাথর ছোড়ে এবং কিছু ক্ষেত্রে পুলিশকে লক্ষ্য করে রাবার বুলেট, জলকামান ও টিয়ারগ্যাস প্রয়োগ করতে হয়।

বিক্ষোভে আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। স্থানীয় হাসপাতাল ও জরুরি সেবাগুলোর উপর চাপ সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সামরিক বাহিনীও মোতায়েন করা হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধের পটভূমি

নেপাল সরকার সম্প্রতি ২৬টি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। এর মধ্যে রয়েছে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম এবং ইউটিউব। সরকারি দাবি, এই প্ল্যাটফর্মগুলোতে ভুয়া আইডি ব্যবহার করে ঘৃণা ও গুজব ছড়ানো হচ্ছে এবং সামাজিক সম্প্রীতি নষ্ট হচ্ছে।

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, সোমবার পর্যন্ত এসব প্ল্যাটফর্ম নিবন্ধন করার সময়সীমা শেষ হওয়ার পর এনটিএ (টেলিকমিউনিকেশনস অথরিটি) অপ্রত্যাশিতভাবে বন্ধ করে দেয়।

প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

দেশের বিভিন্ন শহরে কারফিউ জারি করা হলেও বিক্ষোভ থামেনি। কাঠমান্ডু, পোখরা, বুটওয়াল, ভৈরহাওয়া এবং ইতাহারী শহরে জরুরি অবস্থার ঘোষণা করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, তরুণরা এই আন্দোলনকে ‘জেন-জি রেভলিউশন’ হিসেবে দেখছে। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পুনরায় চালু করার দাবিতে রাস্তায় নেমেছে। সামাজিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার যদি দ্রুত ও সংবেদনশীল পদক্ষেপ না নেয়, পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নিতে পারে।

আহতদের চিকিৎসা ও হাসপাতালের অবস্থা

হাসপাতালে আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর। কাঠমান্ডু ও ইতাহারির হাসপাতালে জরুরি মেডিকেল টিম তৎপর রয়েছে। হাসপাতালে খবরা অনুযায়ী, বহু আহতকে অপারেশন থিয়েটারে স্থানান্তর করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক নিউজ এজেন্সি এই ঘটনার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, নেপালে এই বিক্ষোভ শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ নয়, বরং নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক সচেতনতার প্রতিফলন।

কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা সরকারকে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের প্রতি সহনশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তারা জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীদের নিরাপত্তা ও নাগরিক অধিকার রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি।

বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞ মতামত

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নেপালের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ক্ষমতার দমনমূলক নীতি ও অনিয়ন্ত্রিত সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে ক্ষোভ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারা মনে করেন, সরকারের তৎপরতা না দেখালে বিক্ষোভ আরও বৃহৎ আকার নিতে পারে।

একজন সমাজবিজ্ঞানী বলেন, “যখন তরুণরা তাদের বক্তব্য প্রকাশের স্বাধীনতা হারায়, তখন সামাজিক উত্তেজনা বেড়ে যায়। সরকারের উচিত এই উত্তেজনা হ্রাস করার জন্য সংলাপ তৈরি করা।”

পরিশেষে

নেপালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধের কারণে জেনজিদের তরুণদের বিক্ষোভ ভয়াবহ আকার নিয়েছে। নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৯ এবং আহত শতাধিক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার ও পুলিশ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পরিস্থিতি কেবলমাত্র আইনশৃঙ্খলা প্রয়োগে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়; জনগণ ও তরুণদের সঙ্গে সংলাপ এবং নীতি পুনর্বিবেচনা গুরুত্বপূর্ণ। আগামী দিনগুলোতে পরিস্থিতি কেমন হবে, তা আন্তর্জাতিক নজরদারির কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে।

এম আর এম – ১২৪৭,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button