রাজনীতি

খালেদা জিয়ার আসনগুলোতে কাউকে মনোনয়ন দেবে না গণঅধিকার পরিষদ

Advertisement

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তার আসনগুলোতে কাউকে মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে গণঅধিকার পরিষদ। দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা জানিয়েছেন, এটি সম্মান ও রাজনৈতিক সৌজন্যের নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত হবে।

গণঅধিকার পরিষদের ঘোষণা: খালেদা জিয়ার আসনে প্রার্থী নয়

গণঅধিকার পরিষদ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যে আসনগুলো থেকে নির্বাচন করবেন, সেখানে তারা কোনো প্রার্থী দেবে না।
দলটির সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, “খালেদা জিয়া বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতীক। তিনি এ দেশের মানুষের অধিকারের জন্য দীর্ঘদিন সংগ্রাম করেছেন। তার আসনে আমরা কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামাব না।”

শনিবার (৮ নভেম্বর) বিকেলে দিনাজপুর ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে আয়োজিত গণসমাবেশে নুরুল হক নুর এ ঘোষণা দেন। সমাবেশে হাজারো নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

‘খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের প্রতীক’ — নুরুল হক নুর

দিনাজপুরের গণসমাবেশে বক্তৃতাকালে নুর বলেন, “দেশের গণতন্ত্র রক্ষায় খালেদা জিয়া যেভাবে আপসহীন থেকে লড়াই করেছেন, সেটা আমাদের সবার জন্য অনুপ্রেরণা। তাই তার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে আমরা দাঁড়াব না, বরং তার প্রতি রাজনৈতিক সৌজন্য প্রদর্শন করব।”

তিনি আরও বলেন, “গণঅধিকার পরিষদ চায়, দেশের সব দল গণতান্ত্রিক নীতির ভিত্তিতে রাজনীতি করুক। আমরা চাই, নীতিনিষ্ঠ রাজনীতি ফিরে আসুক। তাই আমরা এমন কিছু করব না যা দেশের গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।”

দলের পক্ষ থেকে একই সুরে রাশেদ খান

রোববার (৯ নভেম্বর) ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ড উপজেলার একতারা মোড়ে এক গণসমাবেশে দলের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খানও একই ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, “গণঅধিকার পরিষদ কোনোভাবেই খালেদা জিয়ার আসনে প্রার্থী দেবে না। তিনি কারাগারে থেকেও জনগণের অধিকার আদায়ের প্রতীক হয়ে আছেন। আমরা তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আসনগুলো খালি রাখব।”

রাশেদ খান আরও বলেন, “আমরা আওয়ামী লীগ বা অন্য কারও ডামি প্রার্থী তৈরি করতে চাই না। আমরা চাই ন্যায়ের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা হোক।”

রাজনৈতিক সৌজন্যের নতুন দৃষ্টান্ত

বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতিপক্ষ দলের প্রতি এমন সৌজন্যমূলক অবস্থান খুব একটা দেখা যায় না।
তবে গণঅধিকার পরিষদ বলছে, তারা একটি ভিন্নধর্মী রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে চায় — যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতার পাশাপাশি পারস্পরিক সম্মানও থাকবে।
এ প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, “গণঅধিকার পরিষদের এই ঘোষণা বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইতিবাচক বার্তা দিতে পারে। যদি অন্যান্য দলও এমন আচরণ করে, তাহলে রাজনৈতিক সহনশীলতা বাড়বে।”

সমাবেশে আরও যাঁরা বক্তব্য রাখেন

দিনাজপুরের সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন গণঅধিকার পরিষদ দিনাজপুর জেলা শাখার সভাপতি শফিকুল ইসলাম।
প্রধান বক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারুক হোসেন।
এছাড়া কৃষিবিদ শহীদুল ইসলাম ফাহিম, হানিফ খান সজিব, মাসুদ মোন্নাফ ও সোহাগ হোসেনসহ কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

তারা সবাই নুরুল হক নুরের ঘোষণাকে সমর্থন জানান এবং বলেন, “এই সিদ্ধান্ত গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির নতুন অধ্যায় উন্মোচন করবে।”

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই সিদ্ধান্তের তাৎপর্য

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গণঅধিকার পরিষদের এই অবস্থান আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে নতুন বার্তা দিচ্ছে।
একদিকে তারা নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করছে যে, দলটি কোনো আপসহীন নীতিতে বিশ্বাস করে না, আবার অন্যদিকে খালেদা জিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে একটি মানবিক ও রাজনৈতিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে।

এছাড়া, তারা অন্য দলগুলোর প্রতিও আহ্বান জানিয়েছে যাতে যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে রাজনীতি করা হয়।

গণঅধিকার পরিষদের পরবর্তী পরিকল্পনা

দলটির শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, তারা নির্বাচনে অংশ নিলেও প্রতিটি প্রার্থীকে ‘যোগ্যতা ও জনগণের গ্রহণযোগ্যতা’ যাচাই করে মনোনয়ন দেবেন।
নুরুল হক নুর বলেন, “আমরা কোনোভাবেই রাজনীতি করব না যেখানে জনগণকে ব্যবহার করা হবে। আমরা জনগণের জন্য রাজনীতি করতে চাই।”

তিনি আরও যোগ করেন, “দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি বদলানোই এখন আমাদের মূল লক্ষ্য। এজন্য প্রয়োজন নতুন ধারার নেতৃত্ব, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা।”

গণঅধিকার পরিষদের এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিকভাবে যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি এটি দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে সৌজন্যের এক বিরল উদাহরণ।
খালেদা জিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাদের প্রার্থী না দেওয়ার ঘোষণা নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে।
এখন দেখার বিষয়, অন্য রাজনৈতিক দলগুলোও কি এই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে একটি পরিশীলিত ও গণতান্ত্রিক রাজনীতি প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসে কি না।

এম আর এম – ২১৫০,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button