আঞ্চলিক

ছাত্রীকে আপত্তিকর ভিডিও দেখানোর অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে

Advertisement

 ঢাকার ধামরাইয়ের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীকে মোবাইলে আপত্তিকর ভিডিও দেখানোর অভিযোগ উঠেছে। ইতোমধ্যে গঠিত হয়েছে তদন্ত কমিটি, উত্তপ্ত স্থানীয় পরিবেশ।

বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ

ঢাকার ধামরাই উপজেলার কুশুরা ইউনিয়নের ১৭১নং টোপের বাড়ি মিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে এক পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীকে আপত্তিকর ভিডিও দেখানোর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ উঠার পর থেকেই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে সরব হয়েছেন অভিভাবক ও স্থানীয়রা।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর পরিবারের সদস্যরা জানান, শিক্ষক শহিদুল ইসলাম তার মোবাইলে ছাত্রীটিকে আপত্তিকর ভিডিও দেখান। পরে বাড়ি ফিরে মেয়েটি বিষয়টি তার দাদি ও চাচার কাছে জানায়। এরপর খবরটি স্থানীয়ভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়।

অভিযোগের প্রাথমিক তদন্ত ও শিক্ষা অফিসের অবস্থান

ঘটনার পরপরই ধামরাই উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ধামরাই উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার লেয়াকত আলীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ঘটনা তদন্তের জন্য। তিনি জানান, “ঘটনাস্থলে এসে আমরা তদন্ত কাজ শুরু করেছি। সত্যতা যাচাই করে রিপোর্ট প্রদান করা হবে এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ মোবাখখারুল ইসলাম মিজান বলেন, “আমরা অভিযোগ পাওয়ার পরপরই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়েছি। সহকারী শিক্ষা অফিসারকে পাঠানো হয়েছে এবং প্রতিবেদন হাতে পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

অতীতেও বিতর্কিত ছিলেন অভিযুক্ত শিক্ষক

এই ঘটনার পর স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, অভিযুক্ত শিক্ষক শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে এর আগেও একই ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ছিল। ২০০৩ সালে সানোড়া ইউনিয়নের চক মহিশাষী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত অবস্থায় এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। সেই সময় স্থানীয়দের মাধ্যমে সাড়ে চার লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়।

পরে ২০১১ সালে বৈন্যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও একই ধরনের আরেকটি ঘটনার অভিযোগে তাকে বদলি করে বর্তমানে ১৭১নং টোপের বাড়ি মিয়াপাড়া বিদ্যালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু সেখানে এসেও বিতর্ক থেকে মুক্ত থাকতে পারেননি তিনি।

স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির অবস্থান

স্থানীয়দের অনেকেই দাবি করছেন, বারবার এ ধরনের অনৈতিক ঘটনার পরও কেন এই শিক্ষককে বহাল রাখা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। অনেকেই বলেছেন, কেবল বদলি করেই দায় শেষ করলে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা রোধ সম্ভব নয়।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি রিপন হোসেন বলেন, “বিষয়টি জানার পর বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেছি। কেউ সরাসরি কিছু বলেনি। তবে মেয়েটির দাদি জানিয়েছেন যে শহিদুল স্যারের মেয়েটির প্রতি অস্বাভাবিক আগ্রহ ছিল।”

ভুক্তভোগী ছাত্রীর চাচা বলেন, “মেয়েটি আমাকে স্পষ্ট বলেছে, স্যার তাকে আপত্তিকর ভিডিও দেখিয়েছে। আমার স্ত্রীকেও একই কথা বলেছে। আমরা এই ঘটনার বিচার চাই। এমন শিক্ষক থাকলে স্কুল নিরাপদ থাকে না।”

অভিযুক্ত শিক্ষকের প্রতিক্রিয়া

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে শহিদুল ইসলাম সরাসরি কোনো মন্তব্য না করে বলেন, “আপনারা আগামীকাল স্কুলে আসেন। সেখানেই কথা বলব।” তবে অভিযোগ রয়েছে, তিনি সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে সাংবাদিকদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করছেন।

এই ধরনের আচরণে অনেকেই ক্ষুব্ধ। স্থানীয় সাংবাদিকদের অনেকে জানিয়েছেন, তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে যেন বিষয়টি প্রকাশ না পায়।

শিক্ষা প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ?

এই ধরনের গুরুতর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও একজন শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে প্রাথমিক শিক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন—এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে শিক্ষা প্রশাসনের নীতিগত অবস্থান নিয়ে। অভিভাবকদের একাংশ বলছেন, একটি শিশু যদি বিদ্যালয়ে নিরাপদ না থাকে, তাহলে শিক্ষার পরিবেশ ধ্বংস হবে।

শিক্ষা অধিদপ্তরের নীতি অনুযায়ী, কোনো সরকারি শিক্ষক এ ধরনের অপরাধে অভিযুক্ত হলে তদন্তের ভিত্তিতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা আছে। কিন্তু বাস্তবে এই নিয়ম প্রয়োগ হয় না বলেই অভিযোগ উঠছে।

ভবিষ্যতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে?

স্থানীয়দের দাবির প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্তসহ আইনি প্রক্রিয়ার আওতায় আনা হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে কিছু অভিভাবক ও সচেতন মহল বলছেন, শুধু শাস্তিই যথেষ্ট নয়। শিক্ষক নিয়োগ ও স্থানান্তরের ক্ষেত্রে কঠোর যাচাই-বাছাই প্রয়োজন, যাতে এ ধরনের বিতর্কিত ব্যক্তি আর শিক্ষকতায় যুক্ত হতে না পারেন।

সারসংক্ষেপ  

একজন প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বারবার অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ওঠা প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থার জন্য অশনি সংকেত। শুধু তদন্ত ও শাস্তি নয়, এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে নীতিগত পরিবর্তন ও কঠোর নজরদারি প্রয়োজন।
এখন দেখার বিষয়, শিক্ষা প্রশাসন কতটা কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে।

এম আর এম – ০৪৮৮  , Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button