বিশ্ব

শুল্ক কমাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১১৩ যুদ্ধবিমান ইঞ্জিন কিনছে ভারত

Advertisement

ভারতীয় বায়ুসেনা দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ‘তেজস মার্ক-১এ’ যুদ্ধবিমানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল ইলেকট্রিক (জিই) অ্যারোস্পেস থেকে ১১৩টি ইঞ্জিন কিনছে। এই চুক্তি প্রায় ৬৭৩৭০ কোটি টাকার এবং দেশটির প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি ও সরবরাহ সময়সূচিকে মসৃণ করতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।

ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্যাল লিমিটেড (হ্যাল) চুক্তি অনুযায়ী তেজস যুদ্ধবিমানগুলোর ইঞ্জিন সরবরাহ নিশ্চিত করবে। ২০২৭-২৮ সাল থেকে সরবরাহ শুরু হবে এবং ছ’বছরের মধ্যে সম্পূর্ণ ডেলিভারি শেষ হওয়ার কথা।

চুক্তির বিস্তারিত

চুক্তি অনুযায়ী জিই অ্যারোস্পেস সংস্থা ‘তেজস মার্ক-১এ’ যুদ্ধবিমানের জন্য প্রয়োজনীয় এফ-৪০৪ জেট ইঞ্জিন সরবরাহ করবে। ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ৯৭টি উন্নত ‘তেজস মার্ক-১এ’ যুদ্ধবিমানের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। এই নতুন চুক্তির মাধ্যমে হালকা ওজনের, মাল্টি-রোল, সুপারসনিক যুদ্ধবিমানগুলোর উৎপাদন সময়মতো সম্পন্ন হবে।

চুক্তি চলাকালীন ভারতীয় বায়ুসেনা নিশ্চিত করতে পারবে যে যুদ্ধবিমানগুলোর সরবরাহে কোনো বিলম্ব হবে না। হ্যাল সূত্র জানিয়েছে, ইঞ্জিনের সঠিক সময়ে সরবরাহ নিশ্চিত হলে ভারতীয় বিমান বাহিনী ২০৩১ সালের মধ্যে যুদ্ধবিমান বহর সম্পূর্ণভাবে আধুনিকীকরণ করতে সক্ষম হবে।

ভারতের বায়ুসেনার হাতে বর্তমানে তেজস মার্ক-১, রাফাল, সুখোই-৩০, মিগ-২৯ সহ বিভিন্ন প্রজন্মের যুদ্ধবিমান রয়েছে। তবে ছ’বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করা মিগ-২১-এর অবসর নেওয়ার পর নতুন যুদ্ধবিমানের জন্য ইঞ্জিন সরবরাহ একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল।

চলতি বছরের জুন মাসে হ্যালের চেয়ারম্যান ডি কে সুনীল জানিয়েছিলেন যে মার্কিন সংস্থা জিই অ্যারোস্পেসের দেরির কারণে যুদ্ধবিমান সরবরাহ বিলম্বিত হচ্ছে। এ কারণে ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের লক্ষ্য ছিল দ্রুত চুক্তি সম্পন্ন করা এবং শুল্কসহ অন্যান্য জটিলতা কাটিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে সরবরাহ নিশ্চিত করা।

প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই চুক্তি ভারতের ‘আত্মনির্ভরতা’ স্লোগানকে শক্তিশালী করবে। তেজস যুদ্ধবিমানের ৬৫ শতাংশের বেশি যন্ত্রাংশ ভারতীয় সংস্থার তৈরি। এতে দেশের প্রতিরক্ষা খাতে বিদেশি নির্ভরতা কিছুটা কমবে এবং সামরিক উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।

চুক্তির ফলে ভারতীয় বায়ুসেনা চীনসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সামরিক চাপ মোকাবিলা করতে আরও শক্তিশালী অবস্থানে থাকবে। বিশেষ করে দক্ষিণ চীন সাগরে এবং হিমালয় অঞ্চলে ভারতের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

পরিসংখ্যান ও তুলনা

তেজস মার্ক-১এ যুদ্ধবিমান ৪.৫ প্রজন্মের হালকা, মাল্টি-রোল, সুপারসনিক ক্ষমতা সম্পন্ন। আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, এই বিমান চীনের জেএফ-১৭-এর তুলনায় প্রযুক্তিগতভাবে অনেক উন্নত। ৯৭টি যুদ্ধবিমান কেনার আনুমানিক খরচ ৬৫ হাজার কোটি টাকা।

মার্কিন ইঞ্জিন সরবরাহে বিলম্ব হলে পুরো বিমান সরবরাহ এবং বায়ুসেনার পরিকল্পনা দীর্ঘসূত্রিতায় আক্রান্ত হতে পারে। তাই চুক্তি সঠিক সময়ে কার্যকর করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বিশ্লেষণ

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই চুক্তি কেবল শুল্ক ও সরবরাহের সুবিধা নয়, বরং ভারতের প্রতিরক্ষা কৌশলকে আন্তর্জাতিকভাবে আরও শক্তিশালী করবে। ভারতের দেশীয় প্রযুক্তি এবং বিদেশি ইঞ্জিনের সমন্বয় ভবিষ্যতে হালকা, কার্যকর ও প্রযুক্তিগতভাবে আধুনিক বিমান বহর নিশ্চিত করবে।

এছাড়া, এই চুক্তি ভারতের প্রতিরক্ষা উৎপাদন খাতে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা এবং বিদেশি প্রযুক্তির ওপর নির্ভরতা কমাতে সহায়তা করবে।

ভারতের ১১৩টি যুদ্ধবিমান ইঞ্জিন কেনার চুক্তি তার প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সরবরাহ চেইন মসৃণ করার ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি ভারতীয় বায়ুসেনার আধুনিকীকরণ, আত্মনির্ভরতা এবং আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা মানের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।

এম আর এম – ২১৪৭,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button