শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার গুজাকুড়া নলকুড়া গ্রামে এক হৃদয়বিদারক ঘটনায় মাত্র একদিন আগে এক বন্ধুর মায়ের মৃত্যুর খবরে শোক প্রকাশ করেছিলেন যুবক আশিক মাহমুদ (২৮)। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তিনি নিজেই মারা যান। পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আশিক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ভোরে নিজ বাড়িতে মারা যান।
ঘটনার বিস্তারিত
আশিক মাহমুদ মঙ্গলবার ভোরে নিজ বাড়িতে মৃত্যু বরন করেন। তার মৃতদেহ স্থানীয় হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, হৃদরোগ তার আকস্মিক মৃত্যু ঘটিয়েছে।
পরিবার ও সহপাঠীদের সূত্রে জানা গেছে, মৃত্যুর আগের দিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি বন্ধুদের একের পর এক শোকবার্তা দিয়েছেন। বিশেষ করে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মায়ের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর ফেসবুকে শোক প্রকাশ করেছিলেন।
সহপাঠী শরিফুল আলম জানান, “আশিক খুব শান্ত ও ভদ্র ছেলে ছিল। তার হঠাৎ চলে যাওয়া আমাদের জন্য বিশ্বাস করা কঠিন। আমরা এখনও হতবাক।”
শিক্ষাজীবন ও পেশাগত জীবন
পরিবারের বরাতে জানা গেছে, আশিক মাহমুদ স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন এবং চাকরির জন্য পড়াশোনা করছিলেন। তিনি ২০১২ সালে হিরণ্ময়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি, ২০১৪ সালে সরকারি নাজমুল স্মৃতি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ২০১৮ সালে সরকারি শেরপুর কলেজ থেকে অনার্স সম্পন্ন করেন।
শিক্ষাজীবনে তিনি ছিলেন মেধাবী ও শান্তপ্রকৃতির ছাত্র। সহপাঠীরা বলছেন, তিনি সবসময় বন্ধু ও সহকর্মীদের মধ্যে ভালো মিথস্ক্রিয়া বজায় রাখতেন।
হৃদরোগ ও আকস্মিক মৃত্যু: বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য
মেডিক্যাল বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হঠাৎ হৃদরোগে মৃত্যু অপ্রত্যাশিত হতে পারে। বিশেষ করে যেসব মানুষ অতিরিক্ত মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন বা পরিবারের কিছু গুরুতর খবরের শোকজনিত মানসিক চাপ অনুভব করেন, তাদের ক্ষেত্রে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, শোকজনিত মানসিক চাপ শরীরে রক্তচাপ ও হৃদপিণ্ডের জন্য চাপ সৃষ্টি করতে পারে। দ্রুত চিকিৎসা ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম না থাকলে এমন আকস্মিক ঘটনা ঘটতে পারে।
পরিবার ও বন্ধুবৃন্দের প্রতিক্রিয়া
আশিকের আকস্মিক মৃত্যুর খবর পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তারা জানান, শোকের সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় থাকা যুবকের হঠাৎ মৃত্যু পরিবার ও বন্ধুদের জন্য মানসিক চাপে ফেলেছে।
স্থানীয় বন্ধুরা বলেছেন, “আমরা তার সাথে শেষ কথোপকথন মনে রাখছি। সে সবসময় সবাইকে শান্ত ও সহযোগী হওয়ার পরামর্শ দিত। আজ তা আর সম্ভব হলো না।”
সামাজিক মাধ্যমে শোক প্রকাশের প্রভাব
মৃত্যুর পূর্ববর্তী দিনটি ছিল আশিকের জন্য মানসিকভাবে ভারাক্রান্ত। বন্ধুদের মায়ের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর তিনি ফেসবুকে শোক প্রকাশ করেন। এই ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ায় তার বন্ধুরা দেখেন এবং শোকাহত হন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোক প্রকাশের এই ধরনের আচরণ মানসিক চাপ ও হৃদরোগের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ধরনের মানসিক চাপের প্রভাব কমানোর জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা জরুরি।
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার গুজাকুড়া নলকুড়া গ্রামে আশিক মাহমুদের আকস্মিক মৃত্যু এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। মাত্র একদিন আগে বন্ধুর মায়ের মৃত্যুর খবর শুনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোক প্রকাশ করেছিলেন। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আকস্মিক হৃদরোগজনিত মৃত্যুর ঘটনা অত্যন্ত শোচনীয়। পরিবারের কাছে এই ক্ষতি অপুরণীয়। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, মানসিক চাপ ও শোকের সময় পর্যাপ্ত চিকিৎসা ও বিশ্রাম কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
এম আর এম – ২০৯২,Signalbd.com



