বগুড়ার গাবতলী উপজেলার ছোট ইটালী গ্রামে ককটেল তৈরির সময় আকস্মিক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ ও পরে সেনাবাহিনীর বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল অভিযান চালিয়ে বাড়িটি থেকে মোট ৪৪টি তাজা ককটেল উদ্ধার করে। ঘটনায় দুইজনকে আটক করা হয়েছে এবং আহত এক ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ঘটনাস্থলে বিস্ফোরণ, আহত এক ব্যক্তি
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার (২ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে নশিপুর ইউনিয়নের ছোট ইটালী গ্রামের মুক্তার হোসেনের বাড়িতে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ওই সময় সেখানে ককটেল তৈরির কাজ চলছিল। হঠাৎ একটি ককটেল বিস্ফোরিত হলে আতাউর রহমান সেলিম (৩৫) নামে এক ব্যক্তি গুরুতর আহত হন।
তিনি কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার রামপ্রসাদের চর গ্রামের বাসিন্দা বলে জানা গেছে। বিস্ফোরণের পর স্থানীয়দের সহায়তায় পুলিশ এসে আহত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।
প্রথম অভিযানে পাঁচটি ককটেল উদ্ধার
বিস্ফোরণের পরপরই গাবতলী মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে বাড়িটিতে অভিযান চালায়। প্রথম দফায় তারা পাঁচটি তাজা ককটেল উদ্ধার করে এবং বাড়িটির কয়েকটি ঘর সিলগালা করে দেয়। তবে আলোর স্বল্পতা ও নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে সেদিন পুরোপুরি তল্লাশি চালানো সম্ভব হয়নি।
ওই সময় থেকেই পুলিশ সন্দেহ করছিল, বাড়িটিতে আরও বিস্ফোরক লুকানো থাকতে পারে।
দ্বিতীয় দফা অভিযানে আরও ৩৯টি ককটেল উদ্ধার
দুই দিন পর, মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) সকালে পুনরায় অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় বাড়ির একটি তালাবদ্ধ ঘর থেকে বিশেষভাবে রাখা ব্যাগ ও বাক্সের ভেতর লুকানো অবস্থায় আরও ৩৯টি তাজা ককটেল উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধারকৃত এসব বিস্ফোরক দ্রব্য পরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৪ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়নের বোমা নিষ্ক্রিয়কারী ইউনিট এসে নিরাপদ স্থানে নিয়ে বিস্ফোরণের মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় করে। দলের নেতৃত্বে ছিলেন ওয়ারেন্ট অফিসার জাকির হোসেন।
গাবতলী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সেরাজুল হক বলেন, “প্রথম অভিযানে পাঁচটি ককটেল উদ্ধার করা হয়েছিল। দ্বিতীয় দফায় আরও ৩৯টি ককটেল পাওয়া যায়, যা সেনাবাহিনী এসে নিরাপদে ধ্বংস করেছে।”
বাড়ির মালিক ও আহত ব্যক্তি গ্রেপ্তার
ঘটনার পর পুলিশ বাড়ির মালিক মুক্তার হোসেনের ভাই মানিক এবং বিস্ফোরণে আহত আতাউর রহমান সেলিমকে গ্রেপ্তার করেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, এই বাড়িতে আন্তঃজেলা অপরাধী চক্রের সহযোগিতায় ককটেল তৈরির কাজ চলছিল।
পুলিশ ধারণা করছে, এই চক্রের নেতৃত্বে ছিল কুমিল্লা জেলার এক ব্যক্তি বাদশা, যিনি মাদক ও ডাকাত চক্রের সঙ্গে জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
স্থানীয়দের আতঙ্ক, এলাকায় চাঞ্চল্য
ঘটনার পর থেকেই ছোট ইটালী ও আশপাশের গ্রামজুড়ে চাঞ্চল্য ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়দের কেউ কেউ বলেন, বাড়িটিতে আগে থেকেই সন্দেহজনক চলাফেরা দেখা যেত। রাতে বাইরের লোকজনের আনাগোনা থাকলেও কেউ কিছু বলতে সাহস পেতেন না।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “আমরা বুঝতে পারিনি ওরা কী করত, তবে বিস্ফোরণের শব্দে মনে হচ্ছিল বড় কিছু ঘটেছে। পরে পুলিশ এলে সবাই ভয় পেয়ে যায়।”
পুলিশের তদন্ত ও পরবর্তী পদক্ষেপ
পুলিশ জানিয়েছে, আটক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। তদন্তে দেখা হবে, উদ্ধার করা ককটেলগুলো কোনো রাজনৈতিক বা অপরাধমূলক উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছিল কি না।
ওসি সেরাজুল হক আরও বলেন, “ঘটনায় জড়িত অন্যদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। যারা এই বিস্ফোরক তৈরির সঙ্গে যুক্ত, তাদের কেউই ছাড় পাবে না।”
ককটেল তৈরির ঝুঁকি ও বিশেষজ্ঞদের মতামত
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ককটেল জাতীয় বিস্ফোরক নিজের হাতে তৈরি করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এটি কোনো সুনির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ ছাড়া তৈরি করলে মুহূর্তের মধ্যে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “বেশ কিছু অপরাধী চক্র রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত সংঘাতের কারণে ককটেল ব্যবহার করে থাকে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তা আবার বেড়ে গেছে, যা জননিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি।”
বগুড়ার গাবতলীতে এই ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় আবারও স্পষ্ট হলো, অপরাধী চক্রের হাতে বিস্ফোরক তৈরির ঝুঁকি কতটা ভয়াবহ হতে পারে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্রুত অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ ককটেল উদ্ধার করায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়েছে।
তবে স্থানীয়দের দাবি, এমন গোপন কার্যক্রম রোধে নিয়মিত নজরদারি ও গোয়েন্দা তৎপরতা আরও বাড়ানো জরুরি।
এম আর এম – ২০৮৬,Signalbd.com



