
সোশ্যাল মিডিয়ার জনপ্রিয় মুখ রিপন মিয়া আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে নিজের স্ত্রীকে “ভাবি” বলে উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, “ওটা ভাবি লাগে আমার, এটাই বাস্তব হা হা হা।” এই এক মন্তব্যেই শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। পরিবারের দাবি, রিপনের স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে; কিন্তু রিপন সেই সম্পর্ক সম্পূর্ণ অস্বীকার করছেন।
এক সাক্ষাৎকারেই উত্তাল সোশ্যাল মিডিয়া
সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর রিপন মিয়া জানান, তিনি এখনো অবিবাহিত। সাংবাদিক যখন তার স্ত্রী ও সন্তানের কথা জানতে চান, তখন রিপন হাসিমুখে বলেন, “ওটা আমার ভাবি, বিয়ে করি নাই রে ভাই!”
সাক্ষাৎকারটি প্রচারের পর মুহূর্তের মধ্যেই ভিডিও ক্লিপটি ভাইরাল হয়ে যায়। ইউটিউব, ফেসবুক ও টিকটকের হাজারো ব্যবহারকারী রিপনের এই বক্তব্য নিয়ে নানা মন্তব্য করছেন। কেউ বলছেন, “জনপ্রিয়তা মাথায় চড়ে বসেছে,” আবার কেউ মনে করছেন, “ব্যক্তিগত বিষয় মিডিয়ায় টেনে আনা উচিত নয়।”
পরিবার যা বলছে: “ছেলে এখন পরিচয় দিতে লজ্জা পায়”
রিপনের মা সংবাদমাধ্যমে অভিযোগ করেন, “রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে গেছে, এখন আমাদের চিনতেও চায় না। গরিব বাবা-মায়ের পরিচয় দিতে লজ্জা পায়।”
তার ভাষায়, “আমরা কষ্ট করে মানুষ করছি, এখন বলছে পরিচয় দিলে তার মান-সম্মান কমে যাবে। ওর বিয়ে আমরা নিজেরাই দিয়েছি, এক ছেলে আর এক মেয়ে আছে।”
রিপনের বাবা জানান, একসময় রিপন তার সঙ্গে ভিডিও বানাতেন। পরে নতুন টিম গঠন করার পর থেকে সম্পর্ক ঠান্ডা হয়ে যায়। তিনি বলেন, “ভরণপোষণ দেয় না, খোঁজও কম নেয়, তবে আমরা এখনো তার জন্য দোয়া করি।”
রিপনের প্রতিক্রিয়া: “মিডিয়া অনুমতি ছাড়াই ঘরে ঢুকেছে”
সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনা বাড়তেই রিপন নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পোস্ট দেন। সেখানে তিনি অভিযোগ করেন, সাংবাদিকরা তার অনুমতি ছাড়াই ঘরে ঢুকে পরিবারের সদস্যদের ভিডিও করেছেন।
তার বক্তব্য, “আমার পরিবার নিয়ে যে ভিডিও বানানো হয়েছে, সেটি অনুমতি ছাড়া করা। মিথ্যা তথ্য প্রচার করে আমাকে মানহানি করার চেষ্টা চলছে।”
তবে এই ব্যাখ্যা অনেককেই সন্তুষ্ট করতে পারেনি। বরং ভিডিওতে হাসতে হাসতে নিজের স্ত্রীকে ‘ভাবি’ বলার ঘটনাই এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কৌতুক ও বিতর্কের প্রধান বিষয়।
জনপ্রিয়তা থেকে বিতর্কে: রিপন মিয়ার যাত্রা
‘রিপন ভিডিও’ নামে পরিচিত এই কনটেন্ট ক্রিয়েটর দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক মাধ্যমে ছোট ছোট হাস্যরসাত্মক ভিডিও তৈরি করে আসছেন। তার ভিডিওর ভিউ লাখের ঘরে, ফলোয়ারও অসংখ্য। সম্প্রতি বিজ্ঞাপন ও সিনেমা প্রচারণার কাজেও তাকে দেখা গেছে।
তবে পরিবারের দাবি, জনপ্রিয়তার পর থেকেই রিপন ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছেন। গ্রামের পুরনো বাড়ি ছেড়ে শহরে আলাদা বাসা করেছেন। এখন স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে থাকলেও, সেটি প্রকাশ্যে অস্বীকার করছেন বলে অভিযোগ।
নেটিজেনদের প্রতিক্রিয়া: দুইভাগে বিভক্ত জনমত
এই ঘটনার পর ফেসবুক ও টিকটকে মতভেদ স্পষ্ট। একদল লিখেছেন, “জনপ্রিয়তা পেলে মানুষ আসল চেহারা দেখায়।” অন্যরা বলছেন, “ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ করা ঠিক নয়।”
একজন ব্যবহারকারী মন্তব্য করেন, “মায়ের কষ্টের কথা শুনে চোখে পানি চলে আসে। সন্তান যদি এমন হয়, তাহলে মায়ের জীবনের মানে কী?”
অন্যজন বলেন, “হয়তো সব সত্য না, মিডিয়া অনেক কিছু বাড়িয়ে বলে।”
এই ধরনের আলোচনা শুধু বিনোদন নয়, বরং পারিবারিক দায়িত্ব ও মানবিক মূল্যবোধ নিয়ে এক নতুন প্রশ্ন তুলেছে।
“জনপ্রিয়তা মানে দায়িত্বহীনতা নয়”
সামাজিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সফলতা পেলে অনেক সময় ব্যক্তি বাস্তবতা ভুলে যায়।
মিডিয়া বিশ্লেষক ফাহিম রহমান বলেন, “রিপন মিয়া যদি সত্যিই নিজের পরিবারকে অস্বীকার করে থাকেন, এটি শুধু নৈতিক নয়, সামাজিকভাবে লজ্জাজনকও।”
তিনি আরও যোগ করেন, “সেলিব্রিটি মানে কেবল ক্যামেরার সামনে হাসি নয়, বরং সামাজিক দায়িত্ব পালনও।”
পরিবারের প্রতি দায়বদ্ধতা কোথায়?
বাবা-মা বা স্ত্রী-সন্তানকে অস্বীকার করা শুধু ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নয়— এটি সমাজের প্রতি এক অস্বীকারও। জনপ্রিয়তা, অর্থ বা খ্যাতি অর্জন করলেই যদি মানুষ পরিবার ভুলে যায়, তবে সেটি মানবিক মূল্যবোধের বড় পতন।
রিপনের ঘটনায় যে প্রশ্নটি সামনে এসেছে তা হলো, “মানুষের সাফল্য কি তাকে তার মূল শেকড় ভুলিয়ে দিতে পারে?”
সমাধান নাকি আরও বিতর্ক?
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এখনো কোনো আইনি পদক্ষেপ বা আনুষ্ঠানিক বিবৃতি আসেনি। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা ছেলেকে ক্ষমা করতে প্রস্তুত, যদি সে ফিরে আসে।
রিপনও তার সাম্প্রতিক পোস্টে লিখেছেন, “সবকিছু সময়ই প্রমাণ করবে।”
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই আশা করছেন, এই পরিবার আবার একসাথে হবে। কারণ জনপ্রিয়তা ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু পরিবার চিরন্তন।
রিপন মিয়া ও তার পরিবারের এই বিরোধ এখন বিনোদন নয়, বরং সামাজিক মূল্যবোধের এক প্রতিচ্ছবি। একদিকে খ্যাতি, অন্যদিকে পারিবারিক দায়িত্ব— কোনটা বেছে নেবেন রিপন, সেটিই এখন সবার প্রশ্ন।
এম আর এম – ১৭৭৭,Signalbd.com