আঞ্চলিক

ছাত্রীকে বিয়ের আশ্বাসে শারীরিক সম্পর্ক, শেষ পর্যন্ত চাকরি হারালেন শিক্ষক

Advertisement

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক এবং যৌন হয়রানির অভিযোগে গঠিত তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৩তম রিজেন্ট বোর্ডের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। অভিযুক্ত শিক্ষক হলেন সমাজকর্ম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুব্রত কুমার বিশ্বাস।

ঘটনাটির সারসংক্ষেপ

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সমাজকর্ম বিভাগের স্নাতকোত্তরের এক ছাত্রীর সঙ্গে দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্কে ছিলেন সুব্রত কুমার বিশ্বাস। অভিযোগ অনুযায়ী, বিয়ের আশ্বাসে তিনি ঐ ছাত্রীকে শারীরিক সম্পর্কে জড়ান। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানান। ফলে ছাত্রী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।

অভিযোগের তদন্ত প্রক্রিয়া

২০২৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ভুক্তভোগী ছাত্রী বিভাগের চেয়ারম্যানের কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করেন। পরদিন ২৩ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলে বিষয়টি আলোচনায় আসে এবং একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি প্রাথমিক তদন্ত শেষে ৯ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অভিযুক্ত শিক্ষককে সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করে।

এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল উচ্চতর তদন্ত পরিচালনা করে। দীর্ঘ তদন্ত শেষে কমিটি অভিযোগের সত্যতা পায় এবং ‘উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন বিরোধ নীতিমালা ২০০৮’ অনুসারে সুব্রত কুমার বিশ্বাসকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের সুপারিশ করে।

রিজেন্ট বোর্ডের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত

২০২৫ সালের ২৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৩তম রিজেন্ট বোর্ড সভায় সুপারিশ অনুযায়ী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। সভা শেষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম আবদুল আওয়াল সাংবাদিকদের জানান, “রিজেন্ট বোর্ডে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অভিযুক্ত শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত আইন ও বিধি মেনেই নেওয়া হয়েছে।”

ঘটনার পেছনের প্রেক্ষাপট

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক সাধারণত শিক্ষামূলক পরিবেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু এই ঘটনায় ব্যক্তিগত সম্পর্ক এক পর্যায়ে গুরুতর আকার ধারণ করে। প্রেমের সম্পর্ক এবং ধর্মীয় ভিন্নতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। শিক্ষার্থীরা ঘটনাটির ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়ে আন্দোলনও করেন।

শিক্ষাঙ্গনে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে নীতিমালা

উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২০০৮ সাল থেকে একটি নীতিমালা কার্যকর আছে। এর মাধ্যমে যে কোনো ধরনের যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠলে দ্রুত তদন্ত এবং ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এই ঘটনার ক্ষেত্রে সেই নীতিমালাই অনুসরণ করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে প্রতিক্রিয়া

এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত শিক্ষাঙ্গনে নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে বড় ভূমিকা রাখবে। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে প্রশাসনকে আরও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

অভিযুক্ত শিক্ষকের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই

বহিষ্কারের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে অভিযুক্ত শিক্ষক সুব্রত কুমার বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ফলে তার ব্যক্তিগত মতামত জানা যায়নি।

বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য

শিক্ষাবিদদের মতে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক পবিত্র। এ ধরনের ঘটনায় শিক্ষকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। এতে যেমন প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি রক্ষা হয়, তেমনি শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা ও মর্যাদা অক্ষুণ্ণ থাকে।

সারসংক্ষেপ  

ঘটনাটি আবারও শিক্ষাঙ্গনে যৌন হয়রানি ও অনৈতিক সম্পর্ক প্রতিরোধে কঠোরতার প্রয়োজনীয়তা সামনে এনে দিয়েছে। এ সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে শিক্ষকদের জন্য সতর্কবার্তা হয়ে থাকবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এম আর এম – ০৫৬৫, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button