অর্থনীতি

ব্যান্ডউইথ: বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা, অনুমোদন ছাড়াই সরাসরি লেনদেন

Advertisement

প্রেক্ষাপট ও প্রেক্ষিত

বাংলাদেশের ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো, বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তারা, আন্তর্জাতিক মানের ইন্টারনেট সেবা গ্রহণের জন্য বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তি করে থাকেন। তবে, পূর্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া এসব সেবার মূল্য পরিশোধ করা সম্ভব ছিল না, যা লেনদেন প্রক্রিয়াকে জটিল ও সময়সাপেক্ষ করে তুলেছিল।

এই প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশ ব্যাংক ৩১ আগস্ট ২০২৫ তারিখে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, যার মাধ্যমে বিদেশি ব্যান্ডউইথ সেবার মূল্য পরিশোধ প্রক্রিয়া সহজ করা হয়েছে। এখন থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো নির্দিষ্ট শর্ত সাপেক্ষে সরাসরি অর্থ পাঠাতে পারবে, ফলে লেনদেনের সময় ও জটিলতা কমবে।

নতুন নির্দেশনার মূল দিকগুলো

বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নির্দেশনায় উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় তুলে ধরা হলো:

১. বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়াই সরাসরি অর্থ পাঠানো

বিদেশি ব্যান্ডউইথ সেবা কেনার জন্য আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হতো। তবে নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ সাপেক্ষে সরাসরি অর্থ পাঠাতে পারবে। এর ফলে লেনদেন প্রক্রিয়া দ্রুত ও সহজ হবে।

২. প্রয়োজনীয় নথিপত্র যাচাই ও সংরক্ষণ

ব্যাংকগুলোকে লেনদেনের আগে কিছু নির্দিষ্ট নথিপত্র যাচাই করতে হবে, যেমন:

  • সেবা প্রদানকারীর লাইসেন্স
  • বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির কপি
  • বিটিআরসি ও অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন
  • কর কর্তৃপক্ষের সনদ
  • ইনভয়েস
  • নিরীক্ষিত হিসাব বিবরণী

এই নথিপত্রগুলো ব্যাংকে সংরক্ষণ করতে হবে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনকালে তা প্রদর্শন করতে হবে।

৩. মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ

অর্থ পাঠানোর ক্ষেত্রে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ সংক্রান্ত নীতিমালা কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে। ব্যাংকগুলোকে এই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

৪. পারফরম্যান্স গ্যারান্টি ইস্যু

বিদেশি ঠিকাদারদের অনুকূলে পারফরম্যান্স গ্যারান্টি ইস্যুর ক্ষমতা ব্যাংকগুলোকে সাধারণ অনুমোদনের আওতায় দেওয়া হয়েছে। এর ফলে স্থানীয় রপ্তানিকারক ও সাব-কন্ট্রাক্টরদের পক্ষে গ্যারান্টি দেওয়ার জন্য আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন প্রয়োজন হবে না।

অর্থনৈতিক প্রভাব ও সুবিধাসমূহ

বাংলাদেশ ব্যাংকের এই নতুন নির্দেশনার ফলে বিভিন্ন খাতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে:

  • রপ্তানি বাণিজ্যের উন্নতি: সহজ লেনদেন প্রক্রিয়া রপ্তানি বাণিজ্যকে গতিশীল করবে।
  • প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি: বিদেশি ঠিকাদারদের সঙ্গে কাজ করা স্থানীয় সাব-কন্ট্রাক্টরদের জন্য গ্যারান্টি ইস্যু সহজ হবে, যা প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি আনবে।
  • বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বৃদ্ধি: সহজ লেনদেন প্রক্রিয়া বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়াতে সহায়ক হবে।
  • ডিজিটাল অবকাঠামোর উন্নতি: দ্রুত ও নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট সেবা ডিজিটাল অবকাঠামোর উন্নয়নে সহায়ক হবে।

খাত সংশ্লিষ্টদের প্রতিক্রিয়া

নতুন নির্দেশনাকে স্বাগত জানিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, এতে ব্যান্ডউইথ সেবার মূল্য পরিশোধে আর বিলম্ব হবে না, যা আন্তর্জাতিক লেনদেনকে আরও সহজ করবে।

বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তা মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, “এই নতুন নির্দেশনা আমাদের ব্যবসার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে আন্তর্জাতিক লেনদেন সহজ হবে এবং আমাদের সেবার মান উন্নত হবে।”

অপরদিকে, ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বিটসোর্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদিকুল ইসলাম বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের এই উদ্যোগ আমাদের ব্যবসার জন্য একটি মাইলফলক। এর ফলে আমরা আন্তর্জাতিক মানের সেবা প্রদান করতে সক্ষম হব।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা বিদেশি ব্যান্ডউইথ সেবার মূল্য পরিশোধ প্রক্রিয়াকে সহজ ও গতিশীল করেছে। এই উদ্যোগ ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক হবে। আশা করা যায়, ভবিষ্যতে আরও এমন উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে, যা দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করবে।

MAH – 12585,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button