জাতীয়

শপথ নিলেন হাইকোর্টের নবনিযুক্ত ২৫ বিচারপতি

Advertisement

বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থায় নতুন এক মাইলফলক যুক্ত হলো। সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে নতুন নিয়োগ পাওয়া ২৫ জন বিচারপতি শপথ নিয়েছেন। মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট ২০২৫) দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ নবনিযুক্ত বিচারপতিদের শপথ বাক্য পাঠ করান।

শপথ অনুষ্ঠানটি সুপ্রিম কোর্ট ভবনের জাজেস লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল, সিনিয়র আইনজীবী এবং বিচার বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারা। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার (বিচার) মোয়াজ্জেম হোসাইন।

কেন এই নিয়োগ গুরুত্বপূর্ণ?

বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় হাইকোর্ট বিভাগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সংবিধানের ৯৪(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সুপ্রিম কোর্টের দুটি বিভাগ রয়েছে—আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ। হাইকোর্ট মূলত সংবিধান রক্ষা, নাগরিকের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতকরণ, প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের বিচারিক পর্যালোচনা এবং আইনগত জটিলতা সমাধানের জন্য কাজ করে।

নতুন বিচারপতি নিয়োগের মাধ্যমে হাইকোর্টে মামলার জট কমানোর প্রক্রিয়া আরও দ্রুত হবে বলে আশা করছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। বর্তমানে হাইকোর্টে এক লাখের বেশি মামলা বিচারাধীন। নতুন বিচারপতিরা দায়িত্ব গ্রহণ করলে বিচার প্রক্রিয়ার গতি বৃদ্ধি পাবে।

২৫ বিচারপতির নামের তালিকা

নবনিযুক্ত ২৫ বিচারপতি হলেন:
১. মো. আনোয়ারুল ইসলাম (শাহীন), সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী
২. মো. সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব, আইন ও বিচার বিভাগ
৩. মো. নুরুল ইসলাম, জেলা ও দায়রা জজ, চট্টগ্রাম
৪. শেখ আবু তাহের, সচিব, আইন ও বিচার বিভাগ
৫. আজিজ আহমদ ভূঞা, রেজিস্ট্রার জেনারেল, সুপ্রিম কোর্ট
৬. রাজিউদ্দিন আহমেদ, আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট
৭. ফয়সাল হাসান আরিফ, আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট
৮. এস এম সাইফুল ইসলাম, যুগ্ম সচিব, আইন ও বিচার বিভাগ
৯. মো. আসিফ হাসান, আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট
১০. মো. জিয়াউল হক, আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট
১১. দিহিদার মাসুম কবীর, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল
১২. জেসমিন আরা বেগম, জেলা ও দায়রা জজ, হবিগঞ্জ
১৩. মুরাদ-এ-মাওলা সোহেল, সচিব, বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন
১৪. মো. জাকির হোসেন, মহানগর দায়রা জজ, ঢাকা
১৫. মো. রাফিজুল ইসলাম, সলিসিটর (সিনিয়র জেলা জজ)
১৬. মো. মনজুর আলম, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল
১৭. মো. লুৎফর রহমান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল
১৮. রেজাউল করিম, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল
১৯. ফাতেমা আনোয়ার, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী
২০. মাহমুদ হাসান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল
২১. আবদুর রহমান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী
২২. সৈয়দ হাসান যুবাইর, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী
২৩. এ এফ এম সাইফুল করিম, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল
২৪. উর্মি রহমান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী
২৫. এস এম ইফতেখার উদ্দিন মাহমুদ, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল

নিয়োগ প্রক্রিয়া ও সরকারের সিদ্ধান্ত

এর আগে সোমবার (২৫ আগস্ট) রাতে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ থেকে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নতুন বিচারপতিদের নিয়োগ দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর প্রধান বিচারপতি তাদের শপথ করান। সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি হাইকোর্টে বিচারপতি নিয়োগ দেন। প্রাথমিকভাবে তাদেরকে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়, যা দুই বছর পর স্থায়ী হয়।

আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন বিচারপতিদের নিয়োগের মাধ্যমে দেশের বিচারব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হবে। বিশেষ করে সংবিধানিক মামলা, রিট পিটিশন, হেবিয়াস করপাস ইত্যাদি মামলায় দ্রুত সমাধান আসবে।

প্রধান বিচারপতির বক্তব্য

শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ নবনিযুক্ত বিচারপতিদের উদ্দেশে বলেন,
“আপনাদের দায়িত্ব শুধু আইন প্রয়োগ করা নয়, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাও। দেশের জনগণের আস্থা যেন সর্বোচ্চ থাকে, সে জন্য সততা, পেশাদারিত্ব এবং সংবিধানকে সর্বাগ্রে রাখতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, বিচার বিভাগের ওপর জনগণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এজন্য নতুন বিচারপতিদের দায়িত্ব হবে মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি এবং দুর্নীতি থেকে মুক্ত থেকে বিচারকার্য পরিচালনা করা।

আইনজীবী সমিতির প্রতিক্রিয়া

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নতুন বিচারপতিদের স্বাগত জানিয়েছে। সমিতির সভাপতি বলেন,
“এত সংখ্যক বিচারপতি নিয়োগ হওয়া হাইকোর্টের জন্য ইতিবাচক বার্তা। দীর্ঘদিন ধরে যে মামলা জটের কারণে বিচারপ্রার্থী মানুষ ভোগান্তি পোহাচ্ছে, তা অনেকটাই কমবে।”

মামলা জট কমানোর চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৪০ লাখ মামলা বিচারাধীন, যার মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে রয়েছে প্রায় দুই লাখ মামলা। হাইকোর্ট বিভাগে নতুন বিচারপতি নিয়োগের ফলে মামলা নিষ্পত্তির গতি বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে শুধুমাত্র বিচারপতির সংখ্যা বৃদ্ধি নয়, প্রযুক্তি ব্যবহার, কোর্ট ম্যানেজমেন্টের আধুনিকীকরণ ও বিচারক-আইনজীবীর সমন্বয়ও জরুরি।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও বিচারব্যবস্থার আধুনিকায়ন

সরকার ইতিমধ্যে ই-জুডিশিয়ারি কার্যক্রম শুরু করেছে, যেখানে অনলাইন কোর্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। নতুন বিচারপতিরা এই ডিজিটালাইজেশনের যুগে আদালতের কার্যক্রমকে আরও সহজ ও দ্রুত করবেন বলে আশা করা যায়।

MAH – 12493 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button