একাদশ শ্রেণিতে চলতি বছরের ভর্তির প্রথম ধাপের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, হাজারের অধিক শিক্ষার্থী তাদের পছন্দের কলেজে স্থান পাননি। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন দ্বিতীয় ধাপে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের জন্য।
একাদশ ভর্তির প্রথম ধাপের ফলাফল ঘোষণা
চলতি বছরের একাদশ শ্রেণি (২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষ) ভর্তির প্রথম ধাপের অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়ার ফলাফল বুধবার রাতে প্রকাশ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ভর্তিসংক্রান্ত ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, মোট ২৫ হাজার ৩৩ জন শিক্ষার্থী কোনো পছন্দের কলেজে স্থান পাননি। এই সংখ্যার মধ্যে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫ হাজার ৭৬৫।
ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর মো. রিজাউল হক জানিয়েছেন, “ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা কলেজ বাছাইয়ের সময় প্রায়শই শুধুমাত্র উচ্চমানের কলেজকে প্রাধান্য দিয়েছেন। ফলস্বরূপ, তাদের প্রাপ্য স্থান না পাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে দ্বিতীয় ধাপে তারা কলেজ পেতে সক্ষম হবেন।”
প্রার্থী এবং কলেজের পরিসংখ্যান
২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে একাদশে ভর্তির জন্য মোট ১০ লাখ ৭৭ হাজার ৫৮২ জন শিক্ষার্থী অনলাইনে আবেদন করেছেন। এর মধ্যে ভর্তির জন্য মনোনয়ন পেয়েছেন প্রায় ৯৮ শতাংশ শিক্ষার্থী। বাকি ২ শতাংশ শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য মনোনয়ন পাননি।
দেশব্যাপী ভর্তিযোগ্য কলেজের মধ্যে ৯৫ শতাংশ কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। বাকি ৫ শতাংশ কলেজে এক জনও শিক্ষার্থী স্থান পাননি।
কলেজে স্থান না পাওয়ার কারণ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষার্থীরা প্রায়শই নিজের প্রাপ্ত নম্বরের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কলেজ নির্বাচন করেন না। জিপিএ-৫ শিক্ষার্থীরাও এমন ভুলের শিকার হন। অনেকেই শুধুমাত্র নামকরা কলেজ বেছে নেন, যেখানে আসন সংখ্যা সীমিত। ফলে, প্রার্থীর উচ্চ ফলাফল থাকা সত্ত্বেও, তারা প্রথম ধাপে কোনো কলেজে ভর্তি হতে পারছেন না।
দ্বিতীয় ধাপে সুযোগ
যারা প্রথম ধাপে কোনো কলেজে স্থান পাননি, তারা দ্বিতীয় ধাপে আবেদন করতে পারবেন। দ্বিতীয় ধাপের আবেদন শুরু হওয়ার সময় এবং প্রক্রিয়া ভর্তিসংক্রান্ত কেন্দ্রীয় ওয়েবসাইটে ঘোষণা করা হবে। শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, তারা তাদের প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী কলেজ বাছাই করে আবেদন করবেন।
শিক্ষাবোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দ্বিতীয় ধাপের ফলাফলে প্রায় সব শিক্ষার্থীকে উপযুক্ত কলেজে স্থান দেওয়া হবে।
শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া
ভর্তির ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর বিভিন্ন শিক্ষার্থী হতাশা প্রকাশ করেছেন। কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, তারা জিপিএ-৫ পেয়েও পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে পারেননি। অনেকে সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টি শেয়ার করেছেন এবং দ্রুত দ্বিতীয় ধাপে সুযোগ পাওয়ার জন্য উচ্ছ্বসিত।
বিশেষজ্ঞ মতামত
শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কলেজ বাছাইয়ে পরিকল্পনা না থাকা সবচেয়ে বড় সমস্যা। প্রফেসর মো. রিজাউল হক উল্লেখ করেছেন, “শিক্ষার্থীদের উচিত প্রাপ্ত নম্বর এবং কলেজের আসন সংখ্যা বিশ্লেষণ করে পছন্দ নির্ধারণ করা।”
একজন কলেজ অধ্যাপক জানান, “ভর্তি প্রক্রিয়ার এই ফলাফল শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা ব্যবস্থার বাস্তব চিত্র তুলে ধরে। এটি একটি শিক্ষা ও সচেতনতার সুযোগও।”
ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দ্বিতীয় ধাপে শিক্ষার্থীরা যদি সঠিক পরিকল্পনা করে আবেদন করেন, তবে অধিকাংশ শিক্ষার্থী তাদের পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে পারবেন। বিশেষ করে জিপিএ-৫ শিক্ষার্থীদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ।
শিক্ষাবোর্ডও সতর্ক করে জানিয়েছে, ভর্তির দ্বিতীয় ধাপে অংশগ্রহণ করতে শিক্ষার্থীরা সময়মতো আবেদন করবেন এবং প্রয়োজনীয় নথি প্রস্তুত রাখবেন।
পরিশেষে
প্রাথমিক ফলাফল যদিও কিছু শিক্ষার্থীর জন্য হতাশাজনক হলেও দ্বিতীয় ধাপে সমাধান রয়েছে। শিক্ষার্থীদের উচিত তাদের প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী কলেজ বাছাই করা এবং দ্বিতীয় ধাপে দ্রুত আবেদন করা। বিশ্লেষকদের মতে, এ ধাপের ফলাফল শিক্ষাব্যবস্থায় স্বচ্ছতা এবং পরিকল্পনার গুরুত্ব প্রমাণ করবে।
এম আর এম – ০৯৭১, Signalbd.com
				
					


