আঞ্চলিক

ছাত্রীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগে জনতার হাতে অবরুদ্ধ শিক্ষক

রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার বাগদুলী উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীর এক ছাত্রীয়ের সঙ্গে শিক্ষক মো. ফজলুল হক (৪৮) নামে এক সহকারী শিক্ষকের অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগে জনতা তাঁকে বিদ্যালয় কক্ষে আটক করে রাখে। ঘটনার এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ জনতা শিক্ষককে হাঁটিয়ে নিয়ে এলে বিদ্যালয়ের প্রধান গেট ভাঙচুর করে, তাঁর মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে, পরবর্তীতে তাঁকে পাংশা মডেল থানা থেকে উদ্ধার করে থানা নিয়ে যায়।

এক্ষেত্রে, ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক ও স্থানীয়ভাবে কোনো অভিযোগ দাখিল করা হয়নি এবং বরং জনতাজনিত প্রতিবাদের ভিত্তিতেই শিক্ষক আটক হন।

ঘটনাক্রমের বিবরণ

বুধবার (১৩ আগস্ট) বিকালের দিকে পাংশা উপজেলার মৌরাট ইউনিয়নের বাগদুলী উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শিক্ষক ফজলুল হক দীর্ঘদিন ধরে কোচিং সেন্টারের আড়ালে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলছিলেন। আজ সকালেই নবম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে নিয়ে অনৈতিক কার্যকলাপের সময় দেখা যায়; ঘটনা এক সহপাঠী জানাতে লাগলে বিদ্যালয় অভ্যন্তর থেকে তথ্যটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। দুপুরের মধ্যেই পরিস্থিতি উত্তাল হয়ে ওঠে। জনা-ঘণা একত্রিত হয়ে প্রধান গেট ভেঙে ভেতরে ঢোকে, স্লোগান শোনায় “বিচার চাই”, “পদত্যাগ কর” ইত্যাদি। পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করে এবং শিক্ষককে থানায় নিয়ে যায়। এরপর পুলিশ চলে যাওয়ার পর জনতা তাঁর মোটরসাইকেল আগুনে ভষ্মিভূত করে।

দশম শ্রেণির ছাত্র বাঁধন মণ্ডল বলেন, “ফজলু স্যার ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের ছেলে হিসেবে ক্ষমতা প্রয়োগ করে স্কুল কুক্ষিগত করে রেখেছেন। কোচিং সেন্টার নাম নিয়ে ছাত্রীদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। য়ে শিক্ষকের এই বিদ্যালয়ে থাকার অধিকার নেই—তার পদত্যাগ চাই।”

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আ. খালেক সংবাদপত্রকে জানান, “দীর্ঘদিন ধরেই ফজলুল হকের বিরুদ্ধে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ ছিল। পরিস্থিতি অবনতি হতে থাকলে অভিভাবক, এলাকার লোকজন ও ছাত্রছাত্রীরা বিক্ষোভে উঠে। তখন পুলিশকে জানানো হয়। তারা এসে শিক্ষককে উদ্ধার করেন।” তিনি আরও বলেন, “বিদ্যালয়ের সভাপতি উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা। বিষয়টি তাকে জানিয়েছি, মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।”

পাংশা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সালাউদ্দিন জানান, “ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক ও এলাকার লোকজনের প্রতিবাদ থেকে বোঝা যায় শিক্ষকের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে জনরোষ রয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে ঘটনা চাঙ্গা পর্যায়ে ত্বরিত কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষককে উদ্ধার করে থানা নিয়ে আসা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের হয়নি, অভিযোগ এলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।”

আরও প্রাসঙ্গিক তথ্য ও বিশ্লেষণ

এই ধরনের ঘটনার প্রেক্ষাপটে, সাম্প্রতিক সময়ের অনুরূপ কিছু ঘটনা পর্যালোচনা করলে বোঝা যায়—বিদ্যালয় বা কোচিং সেন্টারের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-ছাত্রী অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ জাতীয় গুরুত্ব পায় এবং তা দ্রুত সামাজিক প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়।

ঢাকার Viqarunnisa Noon স্কুল ও কলেজ-এ ২০১১ সালে শিকারি শিক্ষক Porimol Joydhor’র বিরুদ্ধে একটি দশম শ্রেণির ছাত্রীকে যৌন নিগ্রহের ঘটনায় একটি ভিডিও তৈরি করার অভিযোগ ওঠে। শিক্ষকমণ্ডলীর অবদানে অবশেষে শিক্ষক জীবন কারাদণ্ড পেয়েছিলেন।

রাজশাহীর Rajshahi University-এর Finance বিভাগে এ বছরের মে মাসে একজন সহকারী অধ্যাপক Mohammad Hedayet Ullah-কে এক ছাত্রীজনের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগে সাড়া পড়ে; সেই প্রতিবাদের সময় শিক্ষকের স্থায়ী স্থানে বহিষ্কারেরও দাবি ওঠে।

এই সকল ঘটনাই পরিস্কার করে দেয়—শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও ছাত্রী/ছাত্রীর মধ্যে অনৈতিক সম্পর্ক বা যৌন হয়রানির অভিযোগে জনমত দ্রুত জলবায়ুর মতো ছড়িয়ে পড়ে এবং সংবাদ প্রকাশসহ সামাজিক প্রতিবাদে তা চূড়ান্ত পর্যায়ে উঠে আসে।

প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যত ব্যবস্থাপনা

  • বিদ্যালয় প্রশাসন: প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন—উপজেলা সমবায় কর্মকর্তার সভাপতিত্বে মিটিং অনুষ্ঠিত হবে। এই মিটিংয়ের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এবং বিদ্যালয়টির সুনাম ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
  • স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী: ওসি সালাউদ্দিন জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ না থাকলেও অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
  • জনমত ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া: একজন অভিভাবক বা স্থানীয় ব্যক্তি সরাসরি বক্তব্য না দিলেও—স্কুল প্রাঙ্গণে, প্রধান গেট ভাঙা এবং মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়া—এই দৃশ্য প্রমাণ করে যে জনমতের ভারী চাপই এই আপত্তির ভিত্তি।

অন্যান্য ক্ষেত্রে যেমন রুজহানীর হত্যাকাণ্ড বা শিক্ষাকে রক্ষা করার আন্দোলন—এসব প্রেক্ষাপটে জনগণ ও মিডিয়ার দ্রুত সমালোচনা ও লভ্য প্রভাব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সচেতন করে তোলে।

MAH – 12303 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button